ভিডিও

বজ্রপাতে প্রাণহানি বেশি বাংলাদেশেই

প্রকাশিত: মে ২০, ২০২৪, ১০:৫৯ রাত
আপডেট: মে ২১, ২০২৪, ০১:৩৭ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

বাংলাদেশ এখন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বজ্রপাতপ্রবণ এলাকা। বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বাংলাদেশেই সবচেয়ে বেশি। প্রতিবছর যত মানুষ বজ্রপাতে প্রাণ হারায় তার প্রতি চারজনের একজন বাংলাদেশের। দেশে প্রতি বছর দুই থেকে তিনশ জন প্রাণ হারাচ্ছে বজ্রপাতে। অনুমান করা হয়, আবহাওয়ার অনভিপ্রেত পরিবর্তন বায়ুমন্ডলের উষ্ণতা যেমন বাড়াচ্ছে তেমনি বাড়িয়ে চলেছে টর্নেডো, ঝড় ও প্লাবনের মতো দুর্যোগ।

সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, দেশে বজ্রপাতে গত ১ এপ্রিল থেকে ৮ মে পর্যন্ত ৩৮ দিনেই ৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর এদের মধ্যে এপ্রিল মাসেই বজ্রপাতে মারা গেছেন ৩১ জন। যাদের ২০ জন পুরুষ ও ১১ জন নারী। এছাড়া চলতি মে মাসের আটদিনে বজ্রপাতে মারা গেছেন ৪৩ জন। এদের মধ্যে ৩৪ জন পুরুষ ও ৯ জন নারী।

অন্যদিকে, গত ৩৮ দিনে বজ্রপাতে মৃতদের মধ্যে ৩৫ জনই কৃষক। মূলত স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন ‘সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারষ্টর্ম অ্যাওয়ারনেস’ ফোরামের (এসএসটিএএফ) গবেষণা সেলের প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

বজ্রপাত বৃদ্ধির পেছনে, জলবায়ু পরিবর্তন কাজ করে। গাছপালা কমে যাওয়ায় দেশের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা এক থেকে দেড় সেলসিয়াস বেড়েছে। বাতাসে বাড়ছে জলীয় বাষ্পের পরিমাণও। দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর থেকে ভেসে আসা আর্দ্র বায়ু আর উত্তরে হিমালয় থেকে আসা শুষ্ক বায়ুর মিলনে সৃষ্টি হচ্ছে বজ্রপাত। সাধারণত মে মাসেই বজ্রপাত বেশি হয়। এ বছর এপ্রিলেই যেভাবে বজ্রপাতের থাবা বিস্তার করেছে তা উদ্বেগজনক।

প্রশ্ন হচ্ছে, এভাবে হঠাৎ আকাশ থেকে ধেয়ে আসা প্রাকৃতিক ঘাতকের প্রাণ কেড়ে নেওয়া কতটা প্রাকৃতিক? হঠাৎ বাংলাদেশে বজ্রপাতের হার বেড়ে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আমরা একমত যে, একদিকে বড় বড় গাছের সংখ্যা কমে যাওয়া, অন্যদিকে মোবাইল ফোনসহ যান্ত্রিক ব্যবহার বৃদ্ধি মানুষকে বজ্রপাতের নিশানা করে তুলছে।

একই সঙ্গে বায়ু দূষণের হার বেড়ে যাওয়াও যে দায়ী, আমরা আগেও তাতে আশঙ্কা প্রকাশ করেছি। গ্লোবাল ক্লাইমেট মডেলিং বিশ্লেষণ করেও একই ধারণা পেয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বজ্রপাত গবেষক। বস্তুত এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত যে, বায়ুমন্ডলে ধাতব উপাদান বেড়ে গেলেও তা বজ্রপাতের অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। আমরা দেখছি, গত কয়েক বছর ধরে বায়ু দূষণ সম্পর্কিত সূচকগুলোতে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম দিকে থাকছে।

বজ্রপাতের মাত্রা বৃদ্ধির কারণ নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরও গবেষণা সমীক্ষার বিকল্প নেই। এটা ঠিক, বিলম্বে বজ্রপাত সরকারি পর্যায়ে দুর্যোগ হিসেবেই চিহ্নিত হয়েছে। ২০১৬ সালে এটাকে ‘জাতীয় দুর্যোগ’ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু উৎকণ্ঠা যতখানি, তা নিরসনে উদ্যোগ ততখানি চোখে পড়ছে না। আমরা পত্রপত্রিকায় দেখেছি, বজ্রপাতের আগাম সতর্কবার্তা দিতে সরকারিভাবে কেনা লাইটেনিং সেন্সর কোনো কাজে আসছে না। নিছক ‘কারিগরি জনবল’ না থাকার কারণে জনগুরুত্বপূর্ণ এই প্রযুক্তির এমন পরিণতি কাম্য হতে পারে না। তবে এখন কারিগরি জনবলের ব্যবস্থা হয়েছে কি-না আমরা সেটা এখনই বলতে পারছিনা।

দেশে প্রতি বছর গড়ে ২ হাজার ৪০০ বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। আগে তালগাছ বজ্রপাত ঠেকাত। এখন তালগাছ ও উঁচু গাছ নেই বললেই চলে। বিশ্বে বছরে বজ্রপাতে যত মানুষ মারা যাচ্ছে, তার অর্ধেকই বাংলাদেশে-এই তথ্য অত্যন্ত আশঙ্কাজনক।

বজ্রপাতে বিপুল সংখ্যক গাছপালা ও গবাদি পশু মারা যায়। এছাড়া মৃত্যুর চেয়ে বেশি মানুষ আহত হয়। দুর্যোগকে এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই-কিন্তু যথাযথ উদ্যোগ নিলে ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের পরিকল্পিত উদ্যোগ জরুরি।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS