ভিডিও

দুর্নীতির বিরুদ্ধে সবাই সোচ্চার হই

এড. মোঃ মোজাম্মেল হক

প্রকাশিত: মে ২৭, ২০২৪, ০৫:৫৭ বিকাল
আপডেট: মে ২৭, ২০২৪, ০৫:৫৭ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

দুর্নীতি কি, দুর্নীতি কাকে বলে মোটাদাগে আমরা কমবেশী সবাই বুঝি। খুবই সংক্ষিপ্ত আকারে বললে বলা যায় কোন সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী কোন কাজের বিনিময়ে বৈধ পারিশ্রমিক ছাড়া যদি অতিরিক্ত কোন পারিতোষিক গ্রহণ করে তাহলে তাকে দুর্নীতি বলে।

দুর্নীতি একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। একটি দেশের অগ্রগতি ও উন্নয়নে যতগুলো বাধা আছে তার মধ্যে অন্যতম বাধা হচ্ছে এই দুর্নীতি। দুর্নীতি নামক সমাজ ধ্বংসকারী খাদকটি এমনভাবে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে শিকড় গেড়ে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকে কুঁরে কুঁরে খাচ্ছে যে, এখন একে সমূলে উৎপাটন করাতো দূরের কথা তাদের কেশাগ্র পর্যন্ত স্পর্শ করা কঠিন হয়ে পড়েছে, ফলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহসী মানুষও দিনকে দিন কমে যাচ্ছে।

আসলে দুর্নীতিবাজরা সব সময় প্রভাবশালী এবং তারা ক্ষমতার কাছাকাছিতে থাকে, যাতে দুর্নীতি করতে সুবিধা হয়। অভিযোগ আছে প্রশাসনের নিম্নস্তর থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ মহল পর্যন্ত দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। এখন দুর্নীতিটা আমাদের গা সহা হয়ে গেছে, কেও এর বিরুদ্ধে আর কথা বলে না কারণ কথা বলে কোন লাভ হয় না।

পি,কে হালদার নামে একজন দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি একটি ব্যাংকের এমডি ছিলেন, তিনি একটি ইনস্যুরেন্স কোম্পানী থেকে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশ ভারতে পাচার করে দেশ থেকে রাতের অন্ধকারে পালিয়ে গেল অথচ তার কিছুই হলো না, সে এতো ক্ষমতাশালী যে তাকে আমরা দেশে এনে তার বিচার পর্যন্ত করতে পারলাম না, কি তার ক্ষমতা, কি তার খুঁটির জোর।

একজন চিহ্নিত দুর্নীতিবাজের যদি বিচার না হয় তাহলে অন্য দুর্নীতিবাজরা আরও দুর্নীতি করার সাহস পায় এবং নতুন নতুন দুর্নীতিবাজ জন্ম নেয়। আব্দুল হাই বাচ্চু বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান, দুর্নীতির মাধ্যমে ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে, দৃশ্যতঃ এখন পর্যন্ত তার কিছুই হলো না। আরও কিছু ব্যাংকের পরিচালকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ছিলো কিন্তু তারা এতো প্রভাবশালী যে তাদের কিছুই করা গেল না।

ইদানিং আমাদের দেশে একটি ঘটনা লক্ষ্য করা যায় আর তাহলো কোন বড় ধরণের দুর্নীতি হলে কয়েকদিন পত্রিকায় একটু-আধটু হৈ চৈ হয়, মানুষের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে কিছু আলোচনা সমালোচনা হয় তারপর কয়েকদিন গেলে আস্তে আস্তে সবাই সবকিছু ভুলে যায়, ফলে যা হবার তাই হয়। তখন দুর্নীতিবাজরা আবার নতুন কায়দায় নতুনভাবে দুর্নীতি করা শুরু করে, আর এই সকল কারণেই দেশ থেকে দুর্নীতি কমানো যাচ্ছে না।

সম্প্রতি পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ এর বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তিনি ৩৪ বৎসর ৭ মাস সরকারি চাকরি করেছেন, তার সরকারি বেতন-ভাতা বাবদ মোট আয় এক কোটি চুরাশি লাখ উননব্বই হাজার দুইশত টাকা এবং সংসারের খরচ বাদ না দিলেও ঐ পরিমাণ সম্পদ থাকার কথা, কিন্তু বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ আলাদা। তার বিরুদ্ধে একটি জাতীয় দৈনিক “বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, ঐ প্রতিবেদনে তার অর্থ সম্পদের বিবরণ তুলে ধরেন।

সেখান থেকেই তার দুর্নীতির কাহিনী ফাঁস হয়। দুর্নীতি দমন কমিশন নড়েচড়ে বসে এবং তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে। আগেই বলেছি যারাই পুকুর সমান দুর্নীতি করে তারাই ক্ষমতার কাছাকাছি থাকে। পুলিশের সাবেক এই আইজি সরকারের উচ্চ মহলের সুনজরে ছিলো এবং সেই কারণেই তিনি পুলিশের সর্বোচ্চ পদটি পেয়ে যান আর এই পদটি ব্যবহার করে রাতারাতি বনে যান কোটিপতি। পত্রিকার প্রতিবেদনে জানা যায় বেনজীর পরিবারের মালিকানায় প্রায় ১৪০০ বিঘা জমির উপর একটি ইকো রিসোর্ট আছে। ঐ রিসোর্টের পাশে আরও ৮০০ বিঘা জমি কিনেছে বেনজীরের পরিবার।

এছাড়া পাঁচ তারকা হোটেলের দুই লাখ শেয়ারও আছে তাদের। ঢাকার বসুন্ধরায় সাড়ে তিন হাজার বর্গফুটের ফ্লাটও আছে বেনজীর পরিবারের। এই স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ জব্দ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত, একই সঙ্গে তার সম্পদ কেনার ৮৩টি দলিল জব্দ করারও আদেশ দিয়েছেন বিজ্ঞ আদালত। ব্যক্তি জীবনে কিছুদিন দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী ছিলাম, তখন দেখেছি দুদক কোন দুর্নীতির অভিযোগ পেলে আগে অনুসন্ধান করে, অনুসন্ধান করে ঘটনার সত্যতা পেলে এজাহার দায়ের করে।

দুদক কোন অনুসন্ধান করে এজাহার দায়ের করলে সাধারণত কোন মামলার ফাইন্যাল রিপোর্ট হয় না। বেনজীরের ঘটনা অনুসন্ধান করে দুদক তার স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি জব্দের জন্যে বিজ্ঞ আদালতে আবেদন করেছেন, এতে ধরেই নেয়া যায় তার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত প্রচুর সম্পদ রয়েছে, যেটা তিনি চাকরি করাকালিন ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতির মাধ্যমে করেছেন, যাহা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

ভারতের নয়াদিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল  কিছুদিন আগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। কেন্দ্রীয় সরকার দুর্নীতির কারণে তাকে গ্রেপ্তার করেছিলেন। ভারতের লোকসভার নির্বাচনের কারণে দেশের সর্বোচ্চ আদালত তাকে সাময়িকভাবে জামিনে মুক্তি দিয়েছেন, অথচ আমাদের দেশের একজন আমলাকে গ্রেপ্তার করতে অনেক কাঠখড়ি পোড়াতে হয়।

আসলে রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলো যদি রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে চলে এবং ক্ষমতাসীন দলের লেজুড়বৃত্তি করে তাহলে সেখানে তাদের দ্বারা ভালো কিছু আশা করা যায় না। তাই জনগণের সম্পদ লুন্ঠনকারী কর্মকর্তা ও আমলাদের বিরুদ্ধে জনগণকেই সোচ্চার থাকতে হবে এর কোন বিকল্প নাই।


লেখক: সাবেক সাধারণ সম্পাদক
বগুড়া জেলা এ্যাডভোকেটস্ বার সমিতি

01711-197719

 



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS