ভিডিও

কেন এই নির্মমতা

প্রকাশিত: জুন ০৪, ২০২৪, ১১:৪৫ রাত
আপডেট: জুন ০৫, ২০২৪, ১২:৪১ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

‘বগুড়ায় হোটেলে স্ত্রী-সন্তানকে গলা কেটে হত্যা’ ছুরি মেরে ও গলা কেটে দুই নারীকে খুন’ চিরকুটে লেখা ধর্ষককে মেরে শাস্তি দিলাম’ লাগেজে মিলল জাবি শিক্ষার্থীর খন্ডিত লাশ’ ‘পুলিশ হেফাজতে নারীর মৃত্যু’ ‘চাঁদা না পেয়ে গ্রাম পুলিশকে গুলি’ ‘শিশু কন্যাকে হত্যার পর মায়ের আত্মহত্যা’ সন্ত্রাসীর গুলিতে ইউপিডিএফ কর্মী নিহত, মা আহত’ ‘বিল শোধ না করায় আটকে রাখা শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ’  ‘ডিবি পরিচয়ে মহিষ ভর্তি ট্রাক ছিনতাই’ ছিনতাই ঠেকাতে গিয়ে চোখ গেল এসআইয়ের’ ব্যাংকের ‘লকার থেকে দেড়শ ভরি সোনা গায়েব’ ‘ঈশ্বরদীতে রাস্তায় গার্মেন্টস কর্মী স্ত্রীকে ছুরি মেরে হত্যা, ‘ভাটারায় বাসায় জাপান প্রবাসীর অর্ধগলিত লাশ’ ‘প্রেমের সম্পর্ক ছিন্ন করায় সংঘবদ্ধ ধর্ষণ কলেজ ছাত্রীকে’ এসব শিরোনাম সোমবারের মাত্র দুটি জাতীয় পত্রিকা থেকে নেয়া।

আরও বহু পত্রিকা রয়ে গেছে বাইরে, পত্রিকার খবরের বাইরেও রয়েছে আরও অনেক খবর। আমাদের সামাজিক অবস্থা বোঝানোর জন্য মাত্র দুটি পত্রিকার শিরোনাম উল্লেখ করা হলো। এ থেকে বোঝা যাবে দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোথায় নেমে এসেছে।

আমরা আজ যে সমাজে বাস করছি সে সমাজ আমাদের নিরাপত্তা দিতে পারছে না। আমরা নানা রকম সামাজিক সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেও বারবার ব্যর্থ হচ্ছি। পা পিছলে ক্রমান্বয়ে নিচের দিকে গড়িয়ে পড়ে যাচ্ছি। কি সামাজিক ক্ষেত্রে, কি রাজনৈতিক ক্ষেত্রে, সর্বক্ষেত্রেই অবক্ষয় সামাজিক মূল্যবোধ তথা ধৈর্য্য, উদারতা, কর্তব্য নিষ্ঠা, ন্যায় পরায়ণতা, শ্ঙ্খৃলা, শিষ্টাচার, সৌজন্যবোধ, নিয়মানুবর্তিতা, অধ্যবসায়, নান্দনিক সৃষ্টিশীলতা, দেশপ্রেম, কল্যাণবোধ ও পারস্পরিক মমতাবোধ ইত্যাদি নৈতিক গুণাবলি লোপ পাওয়ার কারণেই সামাজিক অবক্ষয় দেখা দেয়- যা বর্তমান সমাজে প্রকট।

সামাজিক নিরাপত্তা আজ ভুলুন্ঠিত। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন জাগে, দেশের সামগ্রিক যে অবক্ষয়ের চিত্র এর থেকে পরিত্রাণের কোনো পথই কি আমাদের খোলা নেই? আমাদের অতীত বিস্মৃতির অতল গহ্বরে নিমজ্জিত, বর্তমান অনিশ্চিত এবং নিরাপত্তাহীনতার দোলাচলে দুলছে এবং ভবিষ্যৎ মনে হচ্ছে যেন পুরোপুরি অন্ধকার। যারা সমাজকে, রাষ্ট্রকে পদে পদে কলুষিত করছে, সমাজকে ভারসাম্যহীন ও দূষিত করে তুলছে, সমাজের মানুষের নিরাপত্তা ও অধিকার ক্ষুন্ন করছে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। চারিদিকে যে সামাজিক অবক্ষয় চলছে, চলছে তারুণ্যের অবক্ষয়- এর কি কোনো প্রতিষেধক নেই ? অনেকেই ছিনতাই, চাঁদাবাজি সহ বড় ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। কেউ কেউ খুন ও ধর্ষণের মতো, ডাকাতির মতো অমানবিক এবং সমাজ বিরোধী কাজেও জড়িয়ে পড়ছে। কেউবা হয়ে পড়ছে নানা ধরনের মাদকে আসক্ত।

অনেকেই আবার সন্ত্রাসীদের গডফাদারদের লোভনীয় হাতছানিতে সাড়া দিয়ে সন্ত্রাসে লিপ্ত হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে তাদের এই অধ:পতনের জন্য দায়ী কে? কোনোভাবেই আমাদের সমাজ যেন আলোর দিকে অগ্রসর হতে পারছে না। নানা ধরনের অপরাধ আমাদের সমাজকে দিন দিন গ্রাস করছে। সামাজিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার কারণেই মূলত এমনটি হচ্ছে।

মনে রাখতে হবে নানা ছলে, প্রতারণায় এমনকি প্রকাশ্যে সমাজের ভেতর ঢুকে পড়ছে দুর্বৃত্তরা। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে অপহরণ, ধর্ষণ ও হত্যা করছে। অপরাধ বিশ্লেষকরা মনে করেন, বিচারের দীর্ঘ সূত্রতা ও আসামির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ার কারণেও খুনের ঘটনা ঘটে। তার অনেক উদাহরণও পাওয়া যাবে। গুম, খুন ও অজ্ঞাত পরিচয় লাশ উদ্ধারের ঘটনা অব্যাহত থাকায় মানুষ উদ্বিগ্ন। সারা দেশে গুম, খুন, ধর্ষণ, ছিনতাই- এসব অপরাধ না কমলে অন্যান্য অপরাধের মাত্রাও বেড়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।

যে কোনো অপরাধীর বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের পাশাপাশি জনগণকেও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সমাজ তার স্বাভাবিক গতিতে আবর্তিত হবে, মানুষ ভয়-ভীতি মুক্ত হয়ে যার যার কর্মযজ্ঞে নিয়োজিত থাকবে এটাই নিয়ম। এর ব্যত্যয় ঘটলেই বিপদ। এতে সমাজ জীবন এক অরাজক অবস্থার মধ্যে নিপতিত হয়।

মূলত চুরি, ডাকাতি ও দস্যুতার পাশাপাশি হত্যা, নৈরাজ্য আর বিশৃঙ্খলতা থেকে সমাজকে রক্ষার জন্যই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্ভব ঘটেছে। এ বাহিনীর কাছ থেকে মানুষ যদি প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা না পায় তাহলে তারা যাবে ‘কোথায়?’ আইন-শৃঙ্খলা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির কথা বললেও পরিস্থিতির খুব যে একটা উন্নতি হয়নি, বরং নিম্নমুখী দেখা যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সবার প্রচেষ্টা ছাড়া আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কাক্সিক্ষত উন্নয়ন ব্যাহত হবে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS