ভিডিও

অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ম্য

প্রকাশিত: জুন ১২, ২০২৪, ১০:৫৯ রাত
আপডেট: জুন ১২, ২০২৪, ১০:৫৯ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

ঈদুল আজহা সামনে রেখে রাজধানীসহ সারা দেশেই অজ্ঞানপার্টির দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পায়। নানা পদ্ধতিতে তারা সাধারণ যাত্রীদের সর্বস্ব লুটে নেয়। পান, ডাব, শরবত, মসলা-মুড়ি ও নানা ধরনের মুখরোচক খাদ্যের বিক্রেতা হিসেবেও তারা টার্গেট করা যাত্রীকে ঘায়েল করে।

গাবতলী, সায়েদাবাদ, মহাখালী বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন, সদর ঘাট লঞ্চ টার্মিনাল এমনকি বিমান বন্দরকে বিচরণ ক্ষেত্র বানিয়ে ফেলেছে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা। ভদ্র চেহারার যাত্রী বেশে এরা কখনো কখনো যাত্রীদের সঙ্গে সম্পর্ক পাতায়। যাত্রীদের কাউকে ডাবের পানি কিংবা পানীয় জাতীয় খাদ্য অফার করে। এ কৌশল কাজ না করলে নিজেদের কাছে থাকা খাবার সহযাত্রীকে অফার করে। কোরবানির পশুরহাটের ক্রেতা-বিক্রেতাদেরও টার্গেট করছে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা। বন্ধু সেজে অজান্তেই তারা আবির্ভূত হয় প্রতারক হিসেবে।

এরা সারা বছরই এ দুস্কর্মে লিপ্ত থাকে। তবে ঈদ-পূজা সহ দেশে বড় বড় উৎসব উপলক্ষে অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা বহুগুণ বেড়ে যায়। আসন্ন ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে সারা দেশেই সক্রিয় হয়ে উঠছে অজ্ঞান ও মলম পার্টির সদস্যরা। কোরবানির পশু ব্যবসায়ী ও ক্রেতারাই এদের প্রধান টার্গেট। এ ছাড়াও বিভিন্ন ব্যাংক, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও শপিং সেন্টারের আশে পাশেও ওৎ পেতে থাকে সংঘবদ্ধ চক্রগুলো।  কয়দিন আগেও বগুড়ার একটি ব্যাংকে এক কাস্টমারের ব্যাগ কেটে ২ লক্ষ টাকা নিয়ে চম্পট দিয়েছে প্রতারক চক্র। ঈদ উপলক্ষে কোরবানির পশুসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনাকাটার জন্য অনেকেই মোটা অংকের টাকা বহন করেন। এমন ব্যক্তিদেরই টার্গেট করে চেতনানাশক ওষুধ দিয়ে হাতিয়ে নেয় টাকা বা মূল্যবান সম্পদ। এতে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন অনেক ভুক্তভোগী। এমনকি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে থাকে।

পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এদের দৌরাত্ম্য থামাতে পুলিশের বিশেষ টিম মাঠে কাজ করছে। অনেককে ধরে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। তবে তাদের কোনোভাবেই নির্মূল করা যাচ্ছে না। এ জন্য পথচারী বা যাত্রী সবাইকে সতর্ক হতে হবে। আসন্ন ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ সারাদেশেই অজ্ঞান পার্টির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে।

প্রায় প্রতিদিনই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে নগদ টাকা পয়সা সহ মূল্যবান কাগজপত্র হারায় সাধারণ মানুষ। এর নেপথ্যে রয়েছে তিন কারণ- অসচেতনতা, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অপেক্ষাকৃত কম তৎপরতা এবং এই প্রতারণায় সহজ সাজা ও জামিন। এটা সত্য, অজ্ঞান ও মলম পার্টির সদস্যরা বেশির ভাগই গণপরিবহণ ও ভাসমান অবস্থায় অপরাধ করে। তাই এসব চক্র থেকে রক্ষায় জনসাধারণকেই বেশি সতর্ক হতে হবে। বিশেষ করে চলার পথে কোনো অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্ক ও খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

পুলিশ বলছে, রাজধানীর ২০টি পয়েন্টে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা সক্রিয় বলে অনুমান করা হচ্ছে। অজ্ঞান পার্টির বেশ কয়েকটি গ্রুপ রাজধানী থেকে ছেড়ে যাওয়া বিভিন্ন গণপরিবহণে কাজ করে। তারা বেশির ভাগই বিমান বন্দর, টঙ্গী, তেজগাঁও, ভৈরব, আখাউড়া স্টেশনে আস্তানা গেড়েছে। সর্বোচ্চ চারজন নিয়ে অজ্ঞান পার্টির একেকটি চক্র গড়ে ওঠে। তাদের একজনের কাজ যাত্রী নির্বাচন। আরেকজন অচেতন করে লুট করার কাজ সম্পন্ন করে।

দুজন থাকে ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা দূরে। ওই দুই সদস্যের দায়িত্ব অচেতন করতে গিয়ে ধরা পড়ে গেলে যাত্রী সেজে সহকর্মিকে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করা। রাজধানীতে বহু যাত্রীকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা বলছেন, অজ্ঞান করার জন্য বারবিচুরেট জাতীয় বিষ ব্যবহার করা হয়। খাদ্যের সঙ্গে বেশি মাত্রায় এ বিষ পাকস্থলীতে প্রবেশ করলে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। কেøারোফর্ম মেশানো খাবার খেলে লিভার ও কিডনি আক্রান্ত হওয়ার আশংকা থাকে।

অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের মাঝে মধ্যে গ্রেফতার করা হলেও আইনের ফাঁক দিয়ে তারা বেরিয়ে যায়। জন নিরাপত্তার স্বার্থে এ ধরনের অপরাধের জন্য কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করা দরকার। এসব প্রতারণায় আইন কঠোর হওয়া উচিত। তা হলে এ ধরনের অপরাধ অনেকটা কমে আসবে। আমাদের বিশ্বাস, সরকার এ বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নেবে। মানুষবেশী শকুন অজ্ঞান পার্টির উৎপাতকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেওয়া হবে-এমনটিও কাম্য।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS