ভিডিও

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সমাচার

প্রকাশিত: জুন ২৮, ২০২৪, ০৯:৩৭ রাত
আপডেট: জুন ২৮, ২০২৪, ০৯:৩৭ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

রোহিঙ্গা সংকটের যৌক্তিক সমাধানের ব্যাপারে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে কেবল আশারবাণী শোনানো হলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ, ধর্ষণসহ বর্বর নির্যাতনের মুখে দলে দলে রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসে।

এই জনগোষ্ঠীর বিপুল সংখ্যক মানুষের ভার বহন করতে গিয়ে বাংলাদেশ হিমশিম খাচ্ছে। অথচ পর্যায়ক্রমে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন করা হবে এ ধরনের আশ্বাসও বাংলাদেশকে দেওয়া হয়েছিল। এমনকি এই সংকটের সাত বছর পূর্ণ হয়েছে, তবু আশ্বাস আলোর মুখ দেখেনি। সম্প্রতি পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে যে, গত বছরের ডিসেম্বরের আগে পাইলট প্রকল্পের আওতায় কিছু রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারের ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ।

মিয়ানমারের সম্মতিও ছিল এ বিষয়ে। কিন্তু বাস্তবে কিছুই হয়নি। স্মর্তব্য যে, বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢলের দীর্ঘ সাত বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও তাদের নিজ জন্মভূমি মিয়ানমারের ফেরত পাঠানো যায়নি। আর এ সময়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে।

এমনকি চীনের মধ্যস্থতায় ত্রিপক্ষীয় বৈঠকও হয়েছে কয়েক দফায়। এরপরও বিষয়টির সুরাহা হয়নি। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের বিবেচনায় নেওয়া দরকার, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন না হওয়ার পেছনে মূলত মিয়ানমারের অসহযোগিতাই দায়ী, পর্যবেক্ষকরা এমন দাবিই করে আসছেন।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নিপীড়ন ও সরকারের অবজ্ঞা-বিদ্বেষের শিকার হয়ে ২০১৭ সালের শেষার্ধে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা তাদের বাসভূমি রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। মানবিক বিবেচনায় বাংলাদেশ তাদের আশ্রয় দেয়। নির্যাতন-নিপীড়ন ও জাতি-বিদ্বেষের শিকার হয়ে আগেও কয়েক দফায় অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে।

কক্সবাজারের কয়েকটি আশ্রয় শিবিরে তারা অবস্থান করছে। সব মিলিয়ে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে। তাদের অবস্থার জন্য মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনী দায়ী এ ব্যাপারে বিশ্ব সম্প্রদায় একমত। জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা এ কথাও বলেছে যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যা করা হয়েছে, তা কার্যত জাতি নির্মূল অভিযান, গণহত্যা।

সংস্থাগুলো রোহিঙ্গাদের সমমর্যাদা, নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করে, নিজ ভূমে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করার জন্যও চাপ সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশও এ লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক তৎপরতা চালিয়েছে এবং মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় বসবে। আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক ও দ্বিপক্ষীয় তৎপরতার পরিপ্রেক্ষিতে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়েছে।

তবে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে তাদের আন্তরিকতা নিয়ে বরাবর সন্দেহের অবকাশ ছিল। এখনো রয়েছে। বাস্তবতা হলো, ফিরিয়ে নেওয়ার কথা বললেও কার্যত রোহিঙ্গাদের ফেরা অসম্ভব করে দিয়েছে মিয়ানমার। বাংলাদেশ এই অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে।

এমনিতেই আশ্রয় শিবিরগুলিতে থাকা রোহিঙ্গারা ক্রমে অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। খুনাখুনির পাশাপাশি সেখানে ক্যাম্পের ঘরগুলোতে ব্যাপক অগ্নি সংযোগের ঘটনাও ঘটেছে। পত্র-পত্রিকার খবরে বলা হয়, কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালাং খালি ইউনিয়নের থাইনথালীতে ১৩ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় প্রায় ৪ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে।

মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণ সংঘাত বৃদ্ধি পাওয়ায় রোহিঙ্গা সংকট আরো তীব্র হয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, অস্তিত্ব সংকটে থাকা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো অঞ্চলের জন্যই সংকটের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। আর তাই আন্তর্জাতিক মহলের উচিত মিয়ানমার সরকারকে হুশিয়ারি দেওয়া। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আটকে দেওয়ার সুযোগ তাদের দেওয়া যাবে না।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS