ভিডিও

কালো টাকা নিরুৎসাহিত হোক

প্রকাশিত: জুলাই ০৩, ২০২৪, ০৬:৩৩ বিকাল
আপডেট: জুলাই ০৩, ২০২৪, ০৬:৪৭ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

জাতীয় সংসদে কয়েকটি সংশোধনী সহ অর্থ বিল -২০২৪ পাস হয়েছে। বিলটি পাসের আগে বিলের ওপর সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণের মাধ্যমে সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুযোগ বহাল রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগও রাখা হয়েছে। গত শনিবার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী অর্থ বিল পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করলে তা কন্ঠভোটে পাস হয়।

অর্থ বিলের বিরোধিতা করেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র সদস্যরা। তারা সরকারের সমালোচনার পাশাপাশি দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। কালো টাকা সাদা করার বিষয়টি দুর্নীতির আওতায় পড়ে। কেউ কালো টাকা অর্জন করবে এবং পরে তা সাদা করার ব্যবস্থা করে দেয়া হবে; তাহলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে এত উদ্যোগ, এত কথা বলা বা দুর্নীতি দমন কমিনের প্রয়োজন রয়েছে কি?

অর্থনীতির সংজ্ঞায় খারাপ অর্থ যেমন ভালো অর্থকে দূরে সরিয়ে ফেলে তেমনি কালো অর্থও বাজেটের লক্ষ্য অর্জনকে ব্যাহত করে। বাংলাদেশে সব সরকারই কালো টাকাকে সাদা করার সুযোগ দেয়ার জন্য সব সময়ই অতি উৎসাহী। বলা চলে এটা এক ধরনের রাজনৈতিক আপোস। জানা গেছে, বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর থেকে বার বার এই সুযোগ দেয়া হলেও কালো টাকা সাদা হয়েছে খুব সামান্যই।

কালো টাকার বড় অংশই থেকে গেছে অপ্রদর্শিত অবস্থায়। দেশবাসী চায় কালো টাকা সাদা করা নয়, বরং কালো টাকার উৎস বন্ধ করাই হোক সরকারের মূল কাজ। অর্থনীতিবিদরা বরাবরই কালো টাকা সাদা করার বিষয়ে ঘোর আপত্তি জানিয়ে আসছেন। তাদের মতে, বারবার এ সুযোগ দেওয়া হলেও বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি।

এসব কালো টাকা বিদেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ হচ্ছে, সম্পদ কেনা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত আবাসভূমির পিছনে ব্যয় হচ্ছে। দেশে যারা সৎ উপার্জন করে কর দেন, তারা নিরুৎসাহিত হবেন- সরকারের কালো টাকা বা দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জিত অর্থকে বৈধতা দিলো। সবাই যদি ভাবেন দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আয় করে কর দিয়ে তা বৈধ করলেই চলবে তাহলে আর সৎপথে উপার্জনের জন্য আমরা নসিহত করি কাদেরকে?

অতি মাত্রায় সহজ সরল এ দেশের মানুষ। এমন মানুষের কাছে সাধারণত, একটি জাতীয় বাজেটে অনেক পণ্য রয়েছে যার দাম বাড়লে বা কমলে কিছুই আসে যায় না। কিন্তু তারা যে সব পণ্যের ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করে সেগুলোর দাম যদি বাড়ে তখন তারা চিন্তায় পড়ে। ভাবে এই বাড়তি টাকাটা কোথা থেকে আসবে। এ জন্য সাধারণ চাকরিজীবী ও নিম্নবিত্তরা পড়ে মহাসংকটে। তখন আর কিছুই করার থাকে না। তবে সাদা চোখে ভাবলে বাজেট হওয়া উচিত-দেশীয় পণ্যের বাজার উৎসাহিত করার লক্ষ্যে দেশীয় সকল পণ্যের ওপর থেকে কর তুলে নেয়া দরকার।

কালো টাকা মানেই বিদেশে টাকা পাচার। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। ব্যাহত হচ্ছে জাতীয় অগ্রগতি। সুশাসনের অভাবে অর্থ পাচারের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আইনের মার প্যাচে অপরাধীরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। অর্থ পাচার বন্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মনিটরিং জোরদার করার তাগিদ দিয়েছে বোদ্ধাজনরা।

টাকা কোন কোন উপায়ে বাইরে পাচার হচ্ছে-সেটা যে সরকার জানেননা, এমন কথা কেউ বিশ্বাস করবে না। বরং সরকারের নাকের ডগায় প্রভাবশালী, ক্ষমতাশালীরা বিদেশে কালো টাকা পাচার করছেন-এটাই জনগণ বিশ্বাস করে। বাংলাদেশ এমনিতেই গরিব দেশ। এ দেশের মানুষের গরিবি হালের পেছনে অর্থপাচার অনেকাংশে দায়ী।

অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ পাচার হয় দুটি কারণে। প্রথমত, জবাবদিহিতা এড়াতে। দ্বিতীয়ত: কর ফাঁকির জন্য। অর্থ পাচারের কারণে সরকার যেমন রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে তেমনি রক্ত শূন্য হয়ে পড়ছে সার্বিক অর্থনীতি। এ বিপদ ঠেকাতে সবচেয়ে আগে প্রয়োজন সুশাসন। সুশাসন নিশ্চিত হলে কালো টাকা উপার্জন বা পাচার করে পার পাওয়ার সুযোগ থাকবে না। এ ব্যাপারে নজরদারিও বৃদ্ধি পাবে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS