ভিডিও

সন্তানকে সম্পদে পরিণত করতে হবে

মিজানুর রহমান রাঙ্গা

প্রকাশিত: জুলাই ০৩, ২০২৪, ০৮:২০ রাত
আপডেট: জুলাই ০৩, ২০২৪, ০৮:২০ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

আমরা সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। ব্যস্ত সম্পদশালী হয়ে সমাজে নিজের অবস্থান তুলে ধরতে। সমাজের উঁচু নিচু সবাই চান খেয়ে পরে বেঁচে থাকা ছাড়াও উপার্জন জমিয়ে রেখে কিংবা যেকোনো উপায়ে সম্পদশালী হওয়া যায় কিভাবে। আর এ সম্পদ করতে গিয়ে অনেকে বিভোর হয়ে যান। নিজেদের খেয়াল হয়ে যায় অনেকটা একমুখী।

সম্পদের লোভে অনেকেই পরিবার পরিজন সন্তান-সন্ততিকে সময় দিতে ভুলে যান। যিনি স্বল্প আয় করেন, কোন মতে সংসার চালান, তিনিও চেষ্টা করেন কিভাবে সম্পদ করা যায়। যাদের বেশি আয়, তারা আরও বেশি আয়ের জন্য ছুটে চলেন। মাঝারি আয়ের কিংবা যাদের ভাল চলে, তারাও বাড়ি গাড়ি করার স্বপ্ন দেখেন। যাদের বাড়ি গাড়ি আছে, তারা নিজেদের জীবন আরও অনেক আরামদায়ক করতে অথবা সম্পদ আরও বাড়ানোর জন্য ছুটে চলেন নানা কাজে নানা ভাবে।

এমনকি সঠিক উপায় বা পথ ছেড়ে ছুটে চলেন অবৈধ পথে। তবুও অঢেল সম্পদ চাই। এভাবে টাকা-সম্পদের পিছনে ছুটলেও সন্তানকে ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করতে চান না অনেকে। সন্তানকে সম্পদ বানানোর চেয়ে গুরুত্ব দেন অন্য কিছুতে। ন্যায়-অন্যায় যেভাবেই হোক না কেন, সম্পদের লোভে অনেকটা পাগল প্রায় অবস্থা অনেকের। যা পত্রিকার পাতায় হর হামেসায় দেখা যায়।

সম্পদ নিয়ে দৌড়ঝাপ করছেন না, এমন মানুষ খুব কমই খুঁজে পাওয়া যাবে বর্তমান সমাজে। সন্তানের জন্য অর্থবিত্ত করতে নিজে ব্যস্ত হয়ে জীবনের মহামূল্যবান সময়টুকু শুধু কাজ আর অর্থ কামানোর জন্য ব্যয় করে জীবন সায়াহ্নে এসে সন্তানকেই আর ভাল মানুষ বানানো সম্ভব হয় না অনেকেরই। সময় মতো সঠিক পদক্ষেপ না নেওয়ায় অনেকের সন্তান হয় মানসিক রোগী কিংবা মাদকের থাবা গ্রাস করে পঙ্গুপ্রায় জীবনের পানে ধুকে যায়।

উদাহরণ হিসেবে কিছুদিন আগে একটি জাতীয় দৈনিকের নিবন্ধের কথাই বলা যায়। ওই নিবন্ধ থেকে জানা যায়, এক দম্পতির জীবনের বাস্তব চিত্রের কথা। নিবন্ধটি পড়ে জানা যায়, তারা স্বামী-স্ত্রীর দুজনই মহাব্যস্ত। স্ত্রী একটি মহানগর এলাকায় বেসরকারি এনজিওতে চাকরি করেন। স্বামী ঢাকায় ব্যস্ত ব্যবসা নিয়ে। বছরের সংসারে তাদের ঘর আলো করে একটি পুত্র সন্তান জন্ম নেয়।

খুব আদর যত্নে বড় হতে থাকে তাদের সন্তান। জন্ম নেওয়ার কিছুদিন পর থেকেই বেড়ে যায় দুজনের ব্যস্ততা। স্বামী মাসের পর মাস বাড়ি আসতে পারেন না। কাজের মেয়ের কাছে ছোট বাচ্চাকে রেখে মা অফিসে যান। এনজিওর চাকুরিতে বেশি সময় দেওয়ার কারণে সারাদিন দেখা হয় না শিশুটির সাথে। কাজের মেয়ে তাকে খাবার খাওয়ানো, গোসল, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা ছাড়াও মোটামুটি সব কাজ করে দেন। একটু বড় হয়ে বুদ্ধি হতে থাকে শিশুটির। বাবা মায়ের অভাব তাকে তারা করে ফেরে।

সে ঘুমাতে চায় না। চেষ্টা করে বাস্তবতার হিসাব মিলাতে। জানালায় গিয়ে নিথর নয়নে চেয়ে থাকে। কখন মাকে কাছে পাবে। সে আশায় বুক বেঁধে থাকে শিশুটি। রাতে মা যখন বাসায় ফেরেন, কোন কোন দিন জাগা থাকে সে। বেশির ভাগই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে শিশুটি। এভাবে চলতে থাকে। এক সময় দেখা যায়, বাবা মায়ের অনাদরে অন্য আর দশজন শিশুর ন্যায় সে কথা বলতে পারে না। চাল চলন অন্যান্য শিশুর ন্যায় হয় না। এভাবে শিশুটির বয়স ৬ বছর হলে ভর্তি করানো হয় স্কুলে।

স্কুলে গেলেও সে কারো সাথে কথা বলতে পারে না। বসে থাকে নিজের মতো করে। কোন কিছুর প্রতি মনোযোগী হতে পারে না সে। এক পর্যায়ে বাবা-মা ছেলেকে ডাক্তার দেখান। একে একে কয়েকজন ডাক্তারকে দেখানো হয়। ডাক্তারদের কথা একটাই, তা হল ওর কোন অসুখ নেই। উদ্বিগ্ন বাবা-মা প্রশ্ন করেন ডাক্তারকে। একপর্যায়ে ডাক্তারদের কাছ থেকে উত্তর একটাই আসে, তা হলো শিশুটিকে সঠিক সময়ে বাবা মায়ের ছোঁয়া পায়নি ভালোভাবে। কাছে থেকে সময় না দেওয়ার কারণেই আজ এমন অবস্থা।

বাবা মা নিজে আদর যত্ন করলে, কথা বলা ছাড়াও সবকিছু বুঝিয়ে দিলে আজ এই অবস্থার সম্মুখীন হতে হতো না। আসলে একটি শিশু জন্মের পর বোধশক্তি হওয়ার সাথে সাথে সবকিছুর সাথে পরিচিত হওয়ার চেষ্টা করে। কথা বলা, চলাফেরা, আদর স্নেহ, ভদ্রতা-নম্রতা, সভ্যতা, নৈতিকতা, খাওয়া-নাওয়া ও খেলাধুলা সহ সব শিক্ষা পরিবারের প্রধানত বাবা-মার কাছ থেকেই শুরু হয়। সে সমাজ সংসারের খুঁটিনাটি চিনতে শুরু করে। বুঝতে শেখে। তিন থেকে পাঁচ বছরের শিশুরা অনেকটা মন খুলে খেলা ধুলার ছলেও শিখতে থাকে।

শিশুদের বোধোদয় বাড়াতে পরিবার সমাজ-সংসারের সাথে পরিচিত করে তুলতে তার ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেওয়ার একটা ব্যাপার থাকে। খেলাধুলা, দৌঁড়ঝাপ, ইচ্ছামত সচেতনতামূলক কাজকর্ম তাকে নিত্যনতুন ভাবনা ও চিন্তাশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক করে তোলে। ধুলাবালি কাঁদায় মেখে বড় হওয়া শিশুরা অন্য অনেকের চেয়ে পরিণত বোধ সম্পন্ন হওয়ার উদাহরণ অনেক আছে।

গ্রামে বাবা মায়ের অভাবের সংসারে কাজ কর্ম করে নৈতিকতা, অভাব বোধ কিংবা পরিবারের পরতে পরতে হোচট খাওয়ার নানা বিষয় স্বচক্ষে অবলোকন করে সে নিজেকে করে তোলে সময়োপযোগী। এতে মূখ্য ভুমিকা পালন করতে হয় বাবা-মাকে। শিশুর ওই সময়টা বাবা-মায়ের অবহেলার কারণে হয়ে যেতে পারে হিতে বিপরীত।

তাই অর্থের পিছনে অস্বাভাবিকভাবে না ছুটে সময় দিতে হবে সন্তানকেও। আদর্শ দিক বিবেচনা করে অভিভাবকদেরকেই শিশুর পূর্ণ প্রাক শিক্ষার ভিত শক্তিশালী করতে সময় দিতে হবে। অভিভাবকের দিক নির্দেশনায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে নিজেই হবে একটি সম্পদ। নিজেকে গড়ে তুলবে মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন একজন মানুষ। এতে অভিভাবক হিসেবে নিজেরই গর্ব হবে।


লেখক: গণমাধ্যম কর্মী ও কলাম লেখক।

mizan.ranga@gmail.com

01719-516652



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS