ভিডিও

বিশুদ্ধ পানির সংকট

প্রকাশিত: জুলাই ০৭, ২০২৪, ০৭:৩২ বিকাল
আপডেট: জুলাই ০৭, ২০২৪, ০৭:৩২ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

পানির দেশ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশে সুপেয় পানি পাচ্ছে না ৩ কোটির বেশি মানুষ। বাংলাদেশ পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপের অন্যতম। অথচ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভয়াবহ পানির সংকটে পড়েছে দেশ। বিশুদ্ধ বা সুপেয় পানির অভাব ক্রমেই প্রকট হচ্ছে। জলবায়ুর প্রভাবে দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে সুপেয় পানি এখন দুষ্প্রাপ্য। সুপেয় পানির জন্য হাহাকার চলছে।

দেশের ১৭ কোটি মানুষের জন্য সুপেয় পানির যোগান নিশ্চিত করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। উপকূলের চারপাশে পানিতে টইটুম্বুর থাকলেও এক ফোঁটাও খাবার পানি পাওয়া যাচ্ছে না। মিষ্টি পানির সব আধার লবণাক্ততায় ভরে যাচ্ছে। লবণ পানির আগ্রাসনে পড়েছেন উপকূলের মানুষ। উপকূলের নারীদের এক কলসি পানির জন্য পাড়ি দিতে হচ্ছে দীর্ঘপথ।

গ্রীষ্মের শুরুতেই বরেন্দ্র অঞ্চলের গ্রামগুলোতে খাবার পানির সংকটে ব্যাহত হচ্ছে জনজীবন। সুপেয় খাবার পানি নিয়ে সংঘাতে প্রাণহানিও হয়েছে একাধিকবার। পানি না পেয়ে এলাকা ছাড়ছেন বরেন্দ্র অঞ্চলের মানুষ। সুপেয় পানি যেন এখন সোনার হরিণ হয়ে উঠেছে।

জলবায়ুর পরিবর্তন, চাহিদা বৃদ্ধি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনার অভাবে বিশ্বব্যাপী চাহিদার তুলনায় নিরাপদ পানির উৎস কমে যাচ্ছে। ফলে পানির সংকট দিন দিন ঘনীভূত হচ্ছে। একই অবস্থা বাংলাদেশেও। দেশে এখন পর্যন্ত ৫৯ শতাংশ নিরাপদ পানি পাচ্ছে মানুষ।

সে হিসাবে দেশের পানীয় উৎসের ৪১ শতাংশই অনিরাপদ। জাতিসংঘ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে শতভাগ নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে হবে। তবে, ইউনিসেফের তথ্য মতে, দেশে নিরাপদ পানি পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৩২ দশমিক ৬ শতাংশ। মূলত বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাবে অপুষ্টি এবং পেটের পীড়ার মতো স্বাস্থ্যগত বিভিন্ন রোগ ও উপসর্গের প্রকোপ বাড়ছে।

দরিদ্র ও শিশুরাই এর শিকার হচ্ছে তুলনামূলক বেশি। নষ্ট হচ্ছে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা। আবহমানকাল থেকে পানির দেশ বলে পরিচিত বাংলাদেশে ইতিমধ্যেই পানি সম্পদের যথেষ্ট অপচয় ও দূষণ ঘটেছে। হিমালয় থেকে বঙ্গোপসাগরের দিকে প্রবাহিত ছোট-বড় শত শত নদীর আশির্বাদে গড়ে ওঠা বঙ্গীয় ব-দ্বীপ ছিল মিঠাপানির আধার।

এখানকার ভূগর্ভে যত সহজে আদর্শ পানির দেখা মেলে, তা প্রায় নজিরবিহীন। কিন্তু উজানে প্রতিবেশি দেশ কর্তৃক দুই দেশের অভিন্ন ৫৪টি নদীর পানি প্রত্যাহার আমাদের নদীগুলোকে মেরে ফেলেছে। বৃষ্টি-পানিতে যেসব নদী এখনও কোন রকমে বেঁচে আছে, সেগুলোতে নির্বিচার দূষণ, দখল, ভরাটের কারণে ইতোমধ্যেই নদী-নালা, খাল-বিলের উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কৃষি সেচ ও নাগরিক ব্যবহারের জন্য মাত্রাতিরিক্ত উত্তোলন ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তরেও সৃষ্টি করেছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া।

প্রতি বছরই পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে-যেমন নগর ও শহরে তেমনই দেশব্যাপী বিস্তৃত ফসলের ক্ষেতে। বিশেষত ঢাকা বা চট্টগ্রামে আমরা মাঝে মধ্যেই দেখি নিত্য প্রয়োজনীয় পানির হাহাকার সংবাদ মাধ্যমের শিরোনাম হয়ে আসে। ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ক্ষেত্রে কতটা দূরত্বে গভীর নলকূপেও পানির ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে গিয়ে সরকারিভাবেই এ ধরনের ক্ষতিকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

ভূ-পৃষ্ঠের পানি যদিও এখন পর্যন্ত কোনো না কোনোভাবে নৌ চলাচল, শিল্প ব্যবহার ও সেচের কাজে ব্যবহার করা যাচ্ছে, বিপুল ও উন্মুক্ত ওই জলরাশিকে খাবার পানি হিসেবে ব্যবহারের সম্ভাবনা ক্রমেই ফিকে হয়ে যাচ্ছে।

এ পরিস্থিতির আরও অবনতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে হিমালয় থেকে নেমে আসা নদীগুলোতে উজানের দেশের পক্ষে ক্রমবর্ধমান হারে বাঁধ নির্মাণ করে পানি প্রত্যাহার। আমরা দেখছি, দুই দেশের সরকারি পর্যায়ে একের পর এক বৈঠক, আলোচনা, তথ্য বিনিময় চলছে; কিন্তু কার্যত লাভ হচ্ছে সামান্যই।

আমরা মনে করি, পানি সংকটের এই পরিস্থিতিতে দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়নের জোর দিতে হবে নীতি-নির্ধারকদের। আমরা চাই উদ্যোগ ও উদ্যম। সবপক্ষ আন্তরিক হলে পানি সংকট নিরসন কঠিন হবে না।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS