ভিডিও

রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের আদ্যোপান্ত

প্রকাশিত: জুলাই ১৪, ২০২৪, ১১:০৪ রাত
আপডেট: জুলাই ১৪, ২০২৪, ১১:০৪ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

রাখাইনে সর্বাত্মক পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন এবং এ জনগোষ্ঠীর পক্ষে ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে চলমান রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানের ওপর জোর দিয়ে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ। বুধবার জেনেভায় বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের বিজ্ঞপ্তিতে  জানানো হয়।

পরিষদের চলমান ৫৬তম অধিবেশনে বাংলাদেশের উদ্যোগে ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সব সদস্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রস্তাবটি পেশ করা হয়। নিবিড় ও সুদীর্ঘ আপোষ-আলোচনা শেষে রোহিঙ্গা মুসলিম ও মিয়ানমারের অন্যান্য সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার পরিস্থিতি শীর্ষক প্রস্তাবটি বুধবার সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হওয়ার কথা বলা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

উল্লেখ্য, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে আসা ৭ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা সহ অন্তত ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে শুধু মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলের কাছে দাবি জানিয়ে আসছে সরকার। আশ্রয় শিবিরগুলোয় যারা অবস্থান করছেন,  তারাও দ্রুত নিজেদের ভিটায় ফিরতে চান। কিন্তু  দুর্ভাগ্যজনকভাবে দীর্ঘ প্রায় ৬ বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক মহলের কোনো সদিচ্ছাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

উল্টো প্রত্যাবাসনের কার্যক্রম যখনই শুরু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়, তখনই বিষয়টি আন্তর্জাতিক পক্ষ থেকে চাপা দেওয়া হয়। প্রত্যাবর্তনের পরিবেশ নেই বলে আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়। ফলে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার কাজ শুরু করেও থেমে যেতে হয়। পত্র-পত্রিকার খবরে বলা হয় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নস্যাৎ করতে চলে নানামুখী ষড়যন্ত্র।

সর্বশেষ বাংলাদেশকে পাইলট প্রকল্পের আওতায় রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ বন্ধের আহবান জানিয়েছিলেন জাতিসংঘের মিয়ানমারের পরিস্থিতি বিষয়ক বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুম। বিষয়টি উদ্বেগজনক এর আগে আমরা দেখেছি প্রত্যাবাসন নিয়ে ষড়যন্ত্র নস্যাৎ এবং দ্রুত প্রত্যাবাসন নিশ্চিতের দাবিতে ইতিপূর্বে উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছেন রোহিঙ্গারা।

২০২৩ সালে রোহিঙ্গা নেতারা জাতিসংঘ কর্তৃক রেশন কমিয়ে দেওয়া এবং স্বদেশে ফিরতে আগ্রহীদের রেশন বন্ধ করার মতো রহস্যজনক পদক্ষেপের নিন্দা করেছিলেন, লক্ষণীয় আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গারা শুরু থেকেই নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা ও চলাচলে স্বাধীনতা নিশ্চিতের মাধ্যমে দ্রুত মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু মিয়ানমারের প্রশাসন যেমন প্রত্যাবাসনে আন্তরিক নয়, তেমনি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এখন নানা সংকটের কারণ দেখিয়ে রোহিঙ্গাদের ওপর থেকে মনোযোগ সরিয়ে নিচ্ছে। সাহায্য সহযোগিতার পরিমাণ কমিয়ে দিয়ে উল্টো তাদের এখন বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিলিয়ে দিতে চাচ্ছে, যা কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য নয়। একটি স্বাধীন দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের বিবেচনায় এর পরিণাম শুভ হতে পারে না।

বাংলাদেশ এই অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। এমনিতেই আশ্রয় শিবিরগুলোতে থাকা রোহিঙ্গারা ক্রমে অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। খুনাখুনির পাশাপাশি সেখানে খুপরি ঘরগুলোতে ব্যাপক অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে। মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণ সংঘাত বৃদ্ধি পাওয়ায় রোহিঙ্গা সংকট আরো তীব্র হয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, অস্তিত্ব সংকটে থাকা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী শুধু বাংলাদেশ বা মিয়ানমারের জন্য নয়, পুরো অঞ্চলের জন্যই এক ভয়ানক হুমকির কারণ হয়ে উঠতে পারে। আঞ্চলিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোতে এর প্রভাব বেড়ে যেতে পারে।

রোহিঙ্গাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন জটিল হলেও নিজেদের অধিকার সংরক্ষণে দেশে ফিরে যাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। স্বদেশ প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের অভিন্ন যেসব বন্ধু দেশ উৎসাহ জোগাচ্ছে যাতে স্বদেশে নিরাপদে অবস্থান করতে পারে এমন নিশ্চয়তা সৃষ্টি করতে হবে। মিয়ানমারের জাতীয় ঐক্যের জন্যও এটি জরুরি।

সর্বোপরি প্রায় ১৭ কোটির অধিক বাংলাদেশি নাগরিকের জনবহুল বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের চাপ আর কতদিন সইতে হবে- এই প্রশ্ন কোনোভাবেই অযৌক্তিক নয়। যা আন্তর্জাতিক মহলকেও ভাবতে হবে। বাংলাদেশ চায় সুষ্ঠু সুন্দর ব্যবস্থাপনার নাগরিক মর্যাদায় তাদের পূর্ণ অধিকার দিয়ে ফেরত নেওয়া হোক। নিজেদের জাতীয় ঐক্যের স্বার্থেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আন্তরিকতার পরিচয় দেবে বিশ্ব সম্প্রদায়। এ অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে তার কোনো বিকল্প নেই।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS