ভিডিও

পাহাড় ধসে মৃত্যু

প্রকাশিত: জুলাই ১৫, ২০২৪, ০৬:১৬ বিকাল
আপডেট: জুলাই ১৫, ২০২৪, ০৬:১৬ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনা থামছে না। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, ভৌগলিক অবস্থান এবং ব-দ্বীপ প্রধান হওয়ার কারণে বাংলাদেশ একটি দুর্যোগপূর্ণ দেশ। সম্প্রতি পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে এটা উঠে এসেছে, জলবায়ুর প্রভাবে বাড়ছে পাহাড় ধসের শঙ্কা।

আর হলোই সেটা। কক্সবাজারে ভারী বৃষ্টিপাত মানেই পাহাড় ধসে হতাহতের ঘটনা। এবারো তার ব্যতিক্রম হয়নি। বর্ষার শুরুতেই পৃথক পাহাড় ধসে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১১ জন এবং শহরে ২ জন সহ মোট ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। সম্প্রতি টানা পাঁচ দিনের বৃষ্টিতে  শহরের অন্তত ২০ পয়েন্টে পাহাড় ধস হয়েছে।

পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, কক্সবাজারে প্রবল বর্ষণের পৃথক দুটি পাহাড় ধসের ঘটনায় শিশুসহ দুইজন মারা গেছে। বৃহস্পতিবার ভোরে শহরের সিকদারপাড়া ও পল্যান কাটা এলাকায় পাহাড় ধসের এ ঘটনা ঘটেছে। বুধবার মধ্যরাত থেকে কক্সবাজার শহরে টানা মাঝারি ও ভারী বর্ষণ চলে।

আর বৃষ্টির কারণে পাহাড়ের মাটি নরম হয়ে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে বাড়ির ওপর পাহাড়ের বিশাল এক মাটির অংশ ধসে পড়ে। এতে এক নারী মাটি চাপা পড়েন। অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার ভোরে সিকদার বাজার এলাকায় বসবাসকারী বাড়ির ওপর পাহাড়ের একটি অংশ ধসে পড়ে।

এতে বরাবরই ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থানরতদের। শহরের পাহাড়তলী, বৈদ্যখোলা, খোনারপাড়া, বাদশা খোনা, খাজামঞ্জিল, লাইটহাউস, কলাতলী এবং বাস টার্মিনালসহ ১০টির বেশি পয়েন্টে চলছে গণহারে পাহাড় কাটা। পাহাড় কেটে সমতল করে বের করা হচ্ছে বসতভিটার জায়গা। নির্মাণ করা হচ্ছে ঘরবাড়িসহ বহুতল ভবন।

এতে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে ৫ হাজারেরও বেশি বসতবাড়ি। যার ফলে প্রতি বছর পাহাড় ধসে হতাহতের ঘটনা যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। সর্বশেষ গত বুধবার ভোরে উখিয়া উপজেলার বালুখালী ১১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এফ-১ ব্লকে পাহাড় ধসে মাটি চাপায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে, গত ১৯ জুন উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৫টি স্থানে পাহাড় ধসে ১০ জনের মৃত্যু হয়।

তার মধ্যে ২ জন স্থানীয় বাসিন্দা ও অপর ৮ জন রোহিঙ্গা। এর ঠিক একদিন পরেই ২১ জুন শহরের বাদশা খোনা এলাকায় পাহাড় ধসে মাটি চাপায় ঘুমন্ত অবস্থায় স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। সব মিলে এবারে বর্ষা  শুরুতে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাস করা লোকজনের বেশির ভাগই দরিদ্র হলেও এসব জায়গার মূল মালিক প্রভাবশালী।

তারা পাহাড়ের জায়গা দখল করার জন্য হতদরিদ্র লোকজনকে ভাড়া দিচ্ছে বা পাহারাদার হিসেবে রাখছে। এতে শুধু পাহাড়ই ধ্বংস হচ্ছে না, পাশাপাশি ভরাট হচ্ছে বৃষ্টির পানি অপসারণের একমাত্র মাধ্যমে নালা নর্দমা। যার ফলে সমুদ্র পৃষ্ঠের সঙ্গে লাগোয়া শহর হওয়ার পরেও বৃষ্টি হলেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা।

আমরা বলতে চাই, একের এক যখন পাহাড় ধসে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে তখন তা এড়ানোর সুযোগ নেই। এটাও বলা দরকার, পাহাড় ধসে মৃত্যুর ঘটনা বারংবার ঘটে আসছে। এমনটিও খবরে উঠে এসেছে যে, গত ১৫ বছরে পাহাড় ধসে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

এসব দুর্ঘটনায় প্রাণহানির পাশাপাশি আহতও হয়েছেন অনেকে। ফলে সামগ্রিকভাবে পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনা কতটা ভীতিপ্রদ ও আশঙ্কাজনক তা আমলে নিতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সংশ্লিষ্টদের এটাও আমলে নেওয়া দরকার, সাম্প্রতিক সময়ে খবরে মাধ্যমে জানা গেছে, গবেষণায় উঠে এসেছে যে, দেশের তিন পার্বত্য জেলায় সামগ্রিকভাবে বৃষ্টিপাত বাড়ছে।

আবার বর্ষার আগে তাপমাত্রা দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে। আর জলবায়ুর প্রভাবে পাহাড় ধসের আশংকা বেড়ে গেছে। ২০১৭ সালের ১৬ জুনের রাতে স্মরণকালের পাহাড় ধসের ঘটনা। ভয়াবহ পাহাড় ধসের ঘটনায় পাঁচজন সেনা সদস্য, নারী-পুরুষ ও শিশুসহ ১২০ জনের প্রাণহানি ঘটে।

পাহাড় ধসে একের পর এক মানুষ মারা যাচ্ছে। এটা মনে রাখতে হবে, প্রকৃতি তার নিজস্ব নিয়মে চলে। সঙ্গত কারণেই পরিবেশ রক্ষায় সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কঠোর হতে হবে। তা না হলে পাহাড় ধস রোধ করা যাবে না।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS