ভিডিও

নিত্যপণ্যের অগ্নিমূল্য রোধে টাস্কফোর্স

রাহমান ওয়াহিদ

প্রকাশিত: জুলাই ১৫, ২০২৪, ০৮:৪০ রাত
আপডেট: জুলাই ১৫, ২০২৪, ০৮:৪০ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

নিত্যপণ্যের বাজারে মূল্য নিয়ন্ত্রণ এখনও দুঃখজনকভাবে লাগামছাড়া। বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে গিয়ে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত তথা সীমিত আয়ের মানুষের যে নাভিশ্বাস উঠেছে এবং তাতে যে এ শ্রেণির মানুষের কোনমতে বেঁচে থাকাই  কঠিন হয়ে পড়েছে। কিন্তু বাজারের এই অস্বাভাবিক অস্থিরতার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত যেসব কার্যক্রম চালানো হয়েছে বা হচ্ছে তা যে মূলত কোন কাজেই আসছে না, বাজার পরিস্থিতির ক্রমবর্ধমান অস্থিরতাই তার জানান দিয়ে যাচ্ছে বারবার। মূল্য নিয়ন্ত্রণের লাগামটা কার হাতে,  কেন সে হাত টেনে ধরা যাচ্ছে না, সে প্রশ্ন এখন ভূক্তভোগী আমজনতার মুখে মুখে।

ক্রেতারা বলছেন- হাজার হাজার মেট্রিক টন মরিচ আমদানি করলেও কোন লাভ হবে না, যদি বাজারের সিন্ডিকেট সরকার দমন করতে না পারে। মাছ, মুরগি, গরু খাসির দামও আগের উচ্চমূল্য থেকে বৃদ্ধি থেমে নেই। মূল্য বৃদ্ধির তালিকায় মসুর ডাল ও মশলা পণ্যের দামও। ফলে মানুষের সীমিত উপার্জনে তো চলছেই না, তাদের সামান্য সঞ্চয়ও তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে বা শেষ হয়ে যাচ্ছে।

এ দুরবস্থা আর কতদিন? নিত্য পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থায় অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কথা চালু থাকলেও সরকার বলছেন-সিন্ডিকেট নেই। কিন্তু কয়েকজন ব্যবসায়ী মিলে অনৈতিকভাবে মুনাফা অর্জনের লোভে কলকাঠি নেড়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করলে সেটাকে তো  সিন্ডিকেটই  বলা হয়। বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের জন্যই তো ‘অত্যাবশ্যকীয় পণ্য মূল্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৫৬ শীর্ষক আইন রয়েছে দেশে।

প্রচলিত আইনের তালিকায় যেসব নিত্যপণ্যের নাম রয়েছে সেগুলোর মূল্যবৃদ্ধিতে কোন ব্যবসায়ী অতিরিক্ত মুনাফার জন্য যদি কারসাজি করে বা সিন্ডিকেট করে সংকট তৈরি করে, তবে সেসবের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা আছে সরকারের। কিন্তু সরকার থেকে বারবার বলা হয় বাজারে নিত্যপণ্যের যথেষ্ট মজুদ ও সরবরাহ রয়েছে।

অর্থনীতির নিয়ম অনুযায়ী সরবরাহ যথেষ্ট থাকলে মূল্যও স্বাভাবিক বা কম থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন কোথায়? নিত্যপণ্য যদি অবৈধভাবে মজুদ রেখে পণ্যমূল্যকে বাড়িয়ে দেয়া হয় তাহলে তা রোধে রয়েছে ‘খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, মজুদ, স্থানান্তর, পরিবহন, বিতরণ ও বিপণন (ক্ষতিকর কার্যক্রম প্রতিরোধ) আইন, ২০২৩ও। তাহলে এসব আইনের প্রয়োগ দৃশ্যমান নয় কেন?

কনজ্যুুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে  সংসদ ও সরকারের মধ্যে ব্যবসায়ীদের প্রাধান্যের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা এখন কম লাভে সন্তুষ্ট হতে পারছেন না। তাদের (অসাধু ব্যবসায়ী) অতি মুনাফা আয়ের লোভেই বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে।’ এ তো বড় সাংঘাতিক কথা! কেন ব্যবসায়ীরা কম লাভে সন্তুষ্ট হতে পারছেন না?

তাছাড়া, জনপ্রতিনিধি হিসেবেও তো জনগণের দুঃখকষ্ট লাঘবের দায়বদ্ধতা থেকে বাজারের নিত্য পণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখার সম্মিলিত প্রয়াস তাঁদের নৈতিক দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। কিন্তু বাস্তবতা কি সে কথা বলে?  বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম গত মে মাসে তাঁর সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে বলেছেন,‘ বাজারে যাতে চাহিদা ও যোগান সঠিকভাবে কার্যকর থাকে এবং সে অনুযায়ী যাতে মূল্যটা নির্ধারিত হয়, আমদানিকৃত পণ্যমূল্য যাতে নির্দেশক মূল্যের কাছাকাছি থাকে সেটিই আমাদের চেষ্টা।’ সে প্রচেষ্টাটি যে বাস্তবে প্রতিফলিত হচ্ছে না, সেটিও তো অজানা থাকার কথা নয় কারো।

মোট কথা, সরকার, ব্যবসায়ী, ক্যাব  থেকে যা-ই বলা হোক- সবচেয়ে প্রয়োজন এখন কার্যকরী এ্যাকশন নেয়া। এজন্য আমজনতাকে নিত্যপণ্য কেনায় স্বস্তি দিতে প্রয়োজনে বাণিজ্যসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, ব্যবসায় সংগঠনের প্রতিনিধি, জনপ্রতিনিধি, আইন প্রয়োগ সংস্থার প্রতিনিধি ও ক্যাব এর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী টাস্ক ফোর্স গঠন করা এখন সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে।

এই টাস্ক ফোর্স অবৈধ মজুদদারী, নিত্য পণ্যের সরবরাহে প্রকৃত ঘাটতি, দায়িত্বশীলদের দক্ষতা বা জনবলের ঘাটতি, আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন, অবৈধ সিন্ডিকেটের তৎপরতা-এসব চিহ্নিত করে সমন্বিতভাবে বাজার তদারকিতে নামলে, প্রয়োজনে আইনের কঠোর প্রয়োগ করলে আর সরকার সত্যিই আন্তরিক হলে নিত্যপণ্য কেনার নাভিশ্বাস থেকে ভূক্তভোগী আমজনতাকে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ করে দেয়া অসম্ভব কিছু নয়।  
লেখকঃ কবি, কথাশিল্পী ও কলামিষ্ট

raahman.wahid1956@gmail.com

01711-055281



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS