ভিডিও

সবচেয়ে কঠিন কাজ সৎ ভাবে বেঁচে থাকা

শাব্বীর পল্লব

প্রকাশিত: জুলাই ১৬, ২০২৪, ০৬:০০ বিকাল
আপডেট: জুলাই ১৬, ২০২৪, ০৬:০০ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

জীবন নামক কঠিন সংগ্রামে বেঁচে থাকার তাগিদে সমগ্র প্রাণীকূলের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাণি আশরাফুল মাফ লুকাইত অর্থাৎ একমাত্র মানুষকেই কোনো না কোনো কর্মের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। যেভাবেই জীবিকা নির্বাহ করা হোক না কেনো তার মধ্যে থাকে দুইটি পথ, একটা পথ হলো সৎ অর্থাৎ সততার সাথে জীবনযাপন করা আর একটা পথ হলো অসৎ অর্থাৎ ঘুষ, দুর্নীতি, চুরি, ডাকাতি, কালোবাজারি, সন্ত্রাসীপনা করে অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করা।

এই দুইটি পথের মধ্যে যে কোনো একটি পথ কে বেছে নিয়ে জীবন সংগ্রামে কেউবা টিকে আছে দুঃখ দুর্দশা, প্রচন্ড যন্ত্রণা, চরম হতাশা, দুর্বিষহ কল্পনাতীত ভয়াবহতা ও অনিশ্চয়তার ভরপুর জীবনের মাঝে আবার কেউবা টিকে আছে পৃথিবীর বুকে স্বর্গ সুখে যা মোটেও কল্পনা নয় বরং বাস্তবে, যেথায় রয়েছে প্রচুর অর্থবিত্তের প্রাচুর্যতা, ক্ষমতা আর শক্তির মহড়া, তাদের চোখের ইশারায় ওঠাবসা করে প্রশাসন, বিচার, আইন ও গোটা সমাজব্যবস্থা।

তাদের মন যা চায় তা চোখের নিমিষেই পেয়ে যায়। সততা, মানবিকতা, ন্যায়নীতি আদর্শ  তাদের কাছে অতি তুচ্ছ বিষয় ও শরীরে প্রচন্ডভাবে জ্বালা ধরা একটা অসহনীয় শব্দ। আকাশচুম্বী স্বপ্ন ও কল্পনা এমনভাবে তাদেরকে মোহগ্রস্ত করে ফেলে আর সেখান থেকেই মানসিকভাবে প্রস্তুত হয় যেনতেন উপায়ে আমাকে অন্য  সবার চাইতে ক্ষমতাবান হতে হবে এবং ভালো থাকতে হবে।

বিবেক, মনুষ্যত্ব, মানবতা, সততাকে প্রকাশ্য জনসম্মুখে অহংকারে বুক ফুলিয়ে পদদলিত করে শপথ নেয় অসৎ পথে প্রচুর অর্থ উপার্জন করে সমাজের বুকে উচ্চাসনে নিজেকে অধিষ্ঠিত করতে হবে এবং সবকিছুই নিজের অধীনস্থ  ও নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

একটা সময় ছিলো আমাদের সমাজে হাতেগোনা গুটিকয়েক মানুষ ছাড়া বেশিরভাগ মানুষ সৎ পথেই চলতো, সততার সাথে জীবনযাপন করতে পছন্দ করতো। তৎকালীন সময়ে এই সৎ মানুষগুলো কে দেখে ছোটবেলা থেকেই অনেকেই অনুপ্রাণিত হতো এবং তাদের মতন করে জীবনযাপনের শিক্ষায় দীক্ষিত হওয়ার ব্রত করতো। এই মানুষগুলো ছিলো দেশ তথা সমাজের আলোকবর্তিকা,  সততা ও আদর্শের প্রতীক।

কিন্তু ক্রমশই এই সততার পথে ধীরেধীরে কাঁটা বিছানো শুরু করলো আমাদেরই চেনাজানা আশেপাশের কিছু মুখোশধারী মানুষরূপী অমানুষ। প্রথমাবস্থায় কমই ছিলো এদের সংখ্যা তবে দিন যতোই গড়াতে লাগলো সৎ নামক শব্দটি সংকুচিত ও বিলুপ্ত হতে শুরু করলো আর অসৎ নামক অনেক পিছিয়ে থাকা এবং ঘৃণা মিশ্রিত শব্দটি সমাজের বুকে স্বল্প সময়েই প্রতিষ্ঠিত হতে লাগলো।

কালের বিবর্তনে সৎ শব্দটি আজ বড়ই অসহায় অথচ অসৎ শব্দটি সময়ের প্রেক্ষাপটে বড়ই অহংকার ও গর্বের বিষয় বলেই সব অসম্ভব কে করেছে সম্ভব এই অসৎ পথের যাত্রীরা । এরাই আজ সমাজের বুকে সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে কেউবা রাজনৈতিক নেতা, সমাজের নেতা, নির্বাচিত নেতা, পেশাজীবীদের নেতা, শিক্ষক নেতা, শ্রমিক নেতা, কৃষক নেতা, ছাত্র নেতা এমনকি বুদ্ধিজীবীদেরও নেতা।

বর্তমান সময়ে সবচেয়ে কঠিন কাজ হচ্ছে সঠিক পথে থেকে সততার সাথে বেঁচে থাকা। যেহেতু কর্মের মাঝেই মানুষের জীবিকা তাই একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যায় সৎ পথে যারা চাকুরি করছে তাদের প্রতি পদেপদে মহা বিপদ। বিশেষ করে সরকারি চাকুরি হলে তো কথাই নেই তাদেরকে থাকতেই হয় শুধুই বদলির উপর। অফিসের উচ্চপদস্থ থেকে নিম্ন স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারী যেখানে ঘুষখোর দুর্নীতিবাজ সেখানে মাত্র দুইএক জন সৎ কর্মকর্তা ও কর্মচারী বড্ডই  বেমানান।

তাই যেখানেই বদলি হয় সেখানেই সবার চক্ষুশূলে পরিণত হয়, একঘরে করে দেয় সকলে মিলে, শেষমেশ পরিনতি বদলি আর বদলি। ঠিক একই ভাবে যারা ব্যবসা পরিচালনা করছে তাদের ক্ষেত্রে আরো কঠিন ভয়াবহ অবস্থা বিরাজমান। যেখানে চারিদিকে ভেজাল, অতি মুনাফাখোর, কালোবাজারি, ওজনে কম দেওয়া প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি, সেখানে ওজনে কম না দিয়ে, কালোবাজারি না করে ভেজালমুক্ত পণ্য বিক্রি করা সত্যিই কঠিন একটা কাজ।

যারা অসৎ পথ অবলম্বন করে ব্যবসা করছে তারা যে দামে পণ্য বিক্রি করবে নিশ্চয়ই সৎ পথে থাকা যে কোনো ব্যবসায়ী ঐ একই দামে পণ্য বিক্রি করতে পারবে না। সবধরনের ব্যবসায়ীরা সচরাচর একই ধরনের জায়গা থেকে একই দামে পণ্য ক্রয় করে তারপর বিক্রি করে। তাই সৎ পথের ব্যবসায়ীরা কোনোভাবেই অসৎ এর সাথে পাল্লা দিয়ে ওঠা সম্ভব হয় না।

একটা সময় দেখা যায় পুঁজিপাটা হারিয়ে ব্যবসা বন্ধ করে হাত গুটিয়ে বুক ভরা হতাশা নিয়ে চলে যায় বাড়িতে, পরবর্তীতে পরিবার পরিজনের কাছে ভর্ৎসনার পাত্র হতে হয়। স্বাভাবিক ভাবেই তার মনে প্রতিবাদের ঝড় উঠতেই পারে সৎ পথে থাকাই কি তার অপরাধ, সততার সাথে জীবিকা নির্বাহ করা তার মৌলিক অধিকার, যে কোনো ধর্মের ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সততার সাথে চলার নির্দেশ দেওয়া আছে বলেই অনেকেই সৎ ভাবে বাঁচতে চায়।

কিন্তু যেথায় সমাজের উচ্চাসন থেকে শুরু করে প্রতিটি স্তরে স্তরে অসৎ পথ অক্টোপাসের ন্যায় আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে সেথায় সৎ ভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন অমাবস্যার রাতে চাঁদ দর্শনের সামিল। এইভাবেই সবার অগোচরে সঠিক পথে সৎ ভাবে জীবন গড়ার স্বপ্ন নিরবে নিভৃতে সবার অজান্তেই শেষ হয়ে যায়, চিরতরে মৃত্যু ঘটে সততা ও আদর্শবান নামক হৃদয়ের অন্তস্থল থেকে নির্গত হওয়া শব্দটি।

সেথায় মুহূর্তের মধ্যে জায়গা দখল করে নেয় মানবতাবিরোধী, মনুষ্যত্ববর্জিত, বিবেকহীন, কুরুচিপূর্ণ অসৎ কিছু মানুষ নামের কুলাঙ্গার অমানুষ। এরা ধ্বংস করছে দেশ তথা গোটা সমাজ ব্যবস্থাকে, গ্রাস করছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধ কে। অসৎ পথ কখনোই মঙ্গল বয়ে আনতে পারেনা, এদের দ্বারাই দিনদিন দেশ ও সমাজ অন্ধকারাচ্ছন্ন গভীর চোরাবালির খাদে নিমজ্জিত হতে-হতে তলিয়ে যাবে যে কোনো মুহূর্তে।

অসৎ পথের যাত্রীরা সাময়িক কিছুদিন রঙিন ফানুসে পেখমিত হয়ে দিবারাত্রি যাপন করে ঠিকই কিন্তু সবসময় থাকতে হয় আতঙ্কে না জানি কখন কি ঘটে কারণ প্রকৃতি কখনো ঋণ রাখে না। পরিশেষে একটাই কথা সততার সাথে বাঁচতে চাওয়া অন্যায় নয় এটা মানুষের মৌলিক অধিকার।

মহান মুক্তিযুদ্ধের বিনিময়ে অর্জিত স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে হলে এই অসৎ পথের মানুষগুলোর বিরুদ্ধে অচিরেই সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে এবং চিরতরে এদেরকে বয়কট করতে হবে।


লেখক : প্রাবন্ধিক

01711-884898



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS