ভিডিও

ভূমধ্যসাগরে স্বপ্নের মৃত্যু

প্রকাশিত: জুলাই ২৭, ২০২৪, ১০:৪৩ রাত
আপডেট: জুলাই ২৭, ২০২৪, ১০:৪৩ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে নিখোঁজ বা মৃতদের তালিকায় বারবার উঠে আসছে বাংলাদেশিদের নাম। অবৈধপথে ইউরোপে গিয়ে উজ্জল ভবিষ্যৎ পাওয়ার আশায় অবর্ণনীয় পরিস্থিতি ও নির্মম নির্যাতনের শিকারই শুধু নয়, জীবন ঝুঁকিতে ফেলছেন বাংলাদেশি তরুণরা।

সম্প্রতি পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে প্রকাশ, লিবিয়া থেকে অবৈধভাবে উত্তাল ভূমধ্যসাগর হয়ে ইউরোপে যাওয়ার পথে ৮১ জন অভিবাসন প্রত্যাশীকে উদ্ধার করেছে তিউনিশিয়া নৌবাহিনী। উদ্ধারকৃতদের মধ্যে রয়েছে ৩২ বাংলাদেশি। সেখানকার নৌবাহিনী জানিয়েছে, তিউনিশিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্ত নৌকাটিতে তাদের সন্ধান মেলে।

জানা গেছে, উদ্ধারকৃতদের মধ্যে ৩৮ মিসরীয়, ৩২ বাংলাদেশি, ১০ জন সুদানের এবং একজন মরক্কোর নাগরিক। তাদের বয়স ২০ থেকে ৩৮। তিউনিশিয়ার সীমান্তবর্তী লিবিয়ার আবু কামাল গ্রাম থেকে তারা রওনা হয়েছিলেন। প্রসঙ্গত, ইউরোপে পাচারের জন্য দালালরা লিবিয়া, তিউনিশিয়াকে অন্যতম রুট হিসেবে বিবেচনা করে থাকে।

গত দশ বছরে কমপক্ষে ৬৪ হাজার অভিবাসীর মৃত্যু হয়েছে ভূমধ্যসাগরে এর মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশের পানিতে ডুবে। অভিবাসন বিষয়ক জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম) এ রিপোর্ট দিয়েছে। এই হিসেবে পানিতে ডুবে মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ৩৬ হাজার। সংবাদ সংস্থা এএফপি বলছে, পানিতে ডুবে যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে বেশির ভাগই সমুদ্রে ডুবেছেন।

এর মধ্যে আবার ভূমধ্যসাগরে ডুবে মারা গেছেন কমপক্ষে ২৭ হাজার অভিবাসী। উত্তর আফ্রিকা থেকে ইউরোপের দক্ষিণে পৌঁছানোর জন্য এই সাগরকে দেখা হয় গুরুত্বপূর্ণ রুট হিসাবে। আইওএম বলেছে, তারা যে সংখ্যা উপস্থাপন করেছে তা প্রকৃত সংখ্যায় ভগ্নাংশ মাত্র।

বার্লিনে আইওএমের ডাটা এনালিস্ট আঁদ্রে গারসিয়া বোরজা বলেন, ভূমধ্যসাগর হলো চরম ভয়াবহ এলাকা। এই পথে ভ্রমণ চরম মাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি আরও বলেন, ভূমধ্যসাগরে মৃত্যুর যে সংখ্যা পাওয়া গেছে তা হয়তো বাস্তব সংখ্যার কাছাকাছি। কিন্তু অন্য অঞ্চলে যেমন সাহারা মরুভূমির মতো অঞ্চলগুলো পর্যবেক্ষণ করা কঠিন। এসব স্থানে নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া আরও কঠিন।

সম্প্রতি অবৈধভাবে ইউরোপে যাওয়ার পথে আফ্রিকার সাহারীয় অঞ্চল মৌরিতানিয়া উপক‚লে নৌকা ডুবে ৮৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত সপ্তাহের শুরুর দিকে এ ঘটনা ঘটে। এতে এক হাজার ৬ জনের বেশি মানুষ সাগরে নিখোঁজ রয়েছে। মৌরিতানিয়ার স্থানীয় প্রশাসন ও রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা গত বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানায়।

ইউরোপীয় কমিশন দাবি করছে, ২০০৮ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ৯৩ হাজারের বেশি বাংলাদেশি অবৈধভাবে ইউরোপে প্রবেশ করেছে। প্রবাসে কাজের সুযোগ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে শ্রমবাজারে চাপ লাঘব করছে, বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার তেজি রাখছে। অবৈধ অভিবাসন ও পাচারের বিরূপ প্রভাবে যদি প্রবাসে কাজের সুযোগ কমে যায়? অবৈধ অভিবাসনে অসাধু রিক্রটিং এজেন্সি থেকে শুরু করে সরকারের এক শ্রেণির কর্মকর্তাও জড়িত। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতাও রয়েছে। তারা দেখেও দেখে না, শুনেও শোনেনা।

বলা যায় একটি অশুভ চক্র গড়ে উঠেছে যাদের দাপট-দৌরাত্ম্যে প্রকৃত দোষীরা বিচারে এড়াতে পারে। কিন্তু এ সমস্যার সমাধান করতে না পারলে একের পর এক বিদেশে যেভাবে বাজার হারানোর শঙ্কা বাড়ছে, সেটা কি কেউ উপলব্ধি করবে না।

অবৈধভাবে বিদেশ গমন বন্ধে বৈধ পন্থায় বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে হবে। সে ক্ষেত্রে শুধু প্রতারণা বন্ধের উদ্যোগ নিলেই হবে না, এর পাশাপাশি সরকারকে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা এবং দেশের অভ্যন্তরে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS