ভিডিও

পোশাক রপ্তানিতে সুবাতাস

প্রকাশিত: জুলাই ২৯, ২০২৪, ১০:৫০ রাত
আপডেট: জুলাই ২৯, ২০২৪, ১০:৫০ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) সামগ্রিকভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) যুক্তরাজ্য, কানাডা ও নতুন বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানি বাড়লেও কমেছে যুক্তরাষ্ট্রে। যদিও গত অর্থবছর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি নিম্নমুখী ধারায় রয়েছে। আশির দশকের গোড়ার দিকে দেশে পোশাক শিল্পের উত্থান শুরু। আর নব্বই দশকের শুরুতেই পাট ও পাটজাত পণ্যকে হটিয়ে তৈরি পোশাক দেশের শীর্ষ রপ্তানি খাত হিসেবে আবির্ভূত হয়।

সম্প্রতি বিজিএমইএ সূত্র বলছে, ২০২১ সাল থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত নতুন বাজারগুলোতে আমাদের পোশাক রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। নতুন বাজারে গত ১৪ বছরে দশগুণ রপ্তানি বেড়েছে। চলমান ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক অর্থনীতি একটি সংকটময় মুহূর্ত অতিক্রম করছে। তবে সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি কমে আসায় এবং পোশাকের খুচরা বিক্রিতে কিছুটা গতি সঞ্চার হওয়ায় চলতি বছরের শুরুতে আমাদের রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি ফিরে এসেছে।

বিশেষ করে ইউরোপ ও আমেরিকায় রপ্তানি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। আশার বিষয় হচ্ছে, শিল্পে আজ আমরা নতুন নতুন উদ্যোক্তাদের পদচারণ দেখতে পাচ্ছি। এটা সত্য, বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সংকটে আমাদের অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। তবে একই সময় বেশকিছু নতুন কারখানা ও নতুন বিনিয়োগ এসেছে। শত প্রতিকূলতার মধ্যে এটি নি:সন্দেহে একটি বড় অনুপ্রেরণা।

রপ্তানি খাতে মন্দাভাব কাটিয়ে ওঠার জন্য বরাবরই বাজার সম্প্রসারণ ও নতুন বাজার তৈরির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। নতুন বাজারগুলোতে রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, যা বিগত ১৪ বছরে ১০ গুণ বেড়েছে, অর্থাৎ ৮৪৯ মিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ৮.৩৭ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।

চলতি অর্থবছরের ৮ মাসে নতুন বাজারগুলোতে পোশাক রপ্তানি ১০.৮৩ শতাংশ বেড়েছে, বিশেষ করে তুরস্কে ৬৩.৩৫ শতাংশ, সৌদি আরবে ৪৭.১৯ শতাংশ, চীনে ৪৪.৭৬ শতাংশ, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৩৬.৫৪ শতাংশ, রাশিয়ায় ২৫.৬৫ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়ায় ২১.২৯ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ায় ১৭.১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এসেছে। এটা নি:সন্দেহে ভালো খবর।

এ উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তৎপর ও মনোযোগী হতে হবে। আমাদের সতর্ক হতে হবে জাতিসংঘের নতুন নিয়মকানুন সম্পর্কেও। ইউরোপীয় ইউনিয়নের এ নতুন আইনটি, জাতিসংঘের নিয়ম কানুন এবং ওসিডির দিক নির্দেশনা থেকে অনুপ্রাণীত হয়েছে।

এ ছাড়া ২০২১ সালের ইউরোপীয় সংসদের একটি প্রতিবেদন এ আইন তৈরিতে সাহায্য করেছে। এ আইনের মধ্য দিয়ে ইউরোপীয় কমিশন মানবাধিকার, পরিবেশ রক্ষা এবং অর্থনীতির উন্নতি-এ তিন বিষয়কে এক সঙ্গে বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। এ প্রতিশ্রুতি জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যগুলো এবং পরিবেশ সংক্রান্ত প্যারিস চুক্তির উদ্দেশ্যগুলোর সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ।

যেসব আন্তর্জাতিক ক্রেতা কোম্পানি এ নতুন ইউরোপীয় আইন মেনে চলতে ব্যর্থ হবে, তারা ইউরোপীয় বাজার থেকে বাদ পড়তে পারে অথবা জরিমানাসহ নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে পারে। এ আইন অনুসারে কোম্পানিগুলোকে দূষণ, শ্রমিক অধিকার লঙ্ঘন এবং সম্পদ আহরণের মতো সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাব শনাক্ত করণ, প্রতিরোধ এবং হ্রাস করতে হবে।

নির্দেশিকার একটি মৌলিক বৈশিষ্ট হলো মানবাধিকার হিসেবে জীবনধারণযোগ্য মজুরি এবং জীবন ধারণযোগ্য আয়ের স্বীকৃতি, যা কোম্পানিগুলোকে তাদের পরিচালনাগত কৌশলের অন্তর্ভূক্ত করতে বাধ্য করবে। নির্দেশিকা অবশ্য পালনীয়, ব্যাপক পরিসর, প্রয়োগ এবং স্বচ্ছতার ওপর জোর দেয়া ইউসিএসডিডিডি, বেসরকারি সার্টিফিকেশনের তুলনায় সম্পূর্ণ আলাদা।

যেসব বাংলাদেশি পোশাক ও টেক্সটাইল ব্যবসায়ীরা ইউরোপীয় ক্রেতাদের সঙ্গে ব্যবসা চালিয়ে যেতে ইচ্ছুক, তাদের অবশ্যই এসব নীতিমালা মেনে চলতে হবে। ইইউ’র নতুন নির্দেশনায় বেশকিছু চ্যালেঞ্জ থাকলেও বাংলাদেশ ইচ্ছা করলে তা সুযোগে রূপান্তর করতে পারবে।

এছাড়া শঙ্কার বিষয়গুলো আমলে নেওয়ার পাশাপাশি শ্রমিকদের জীবনমান এবং নিরাপত্তার বিষয়টি প্রাধান্য দিয়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের অগ্রগতি বজায় রাখতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS