ভিডিও

উন্নত দেশ বিনির্মাণে মেধার গুরুত্ব দিতে হবে

মো: ফুয়াদ হাসান

প্রকাশিত: জুলাই ৩১, ২০২৪, ০৭:২৮ বিকাল
আপডেট: জুলাই ৩১, ২০২৪, ০৭:২৮ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

বাংলাদেশ একটি উদীয়মান অর্থনীতির দেশ। গত কয়েক বছর অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে অভাবনীয় সাফল্য অর্জনের মধ্য দিয়ে বিশ্ব অর্থনীতির আলোচনায় নতুন খোরাক জুগিয়েছে। স¤প্রতি দেশীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন, রিজার্ভে অস্থিরতা, উচ্চা মূল্যস্ফীতি ও তীব্র বেকারত্বসহ যে কয়টি বিষয় আমাদের অর্থনীতির এই অর্জনকে ¤øান করে তুলেছে তার মধ্য অন্যতম হলো বেকারত্ব।

বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষিত বেকারত্বের হার আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। বিবিএসের তথ্য মতে, ২০২২ সালের ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে দেশে বেকারের সংখ্যা ছিল ২৩ লাখ ১০ হাজার। এক বছরের ব্যবধানে সেই সংখ্যা ৪০ হাজার বেড়ে গিয়েছে (সূত্র: প্রথম আলো ২৮/০১/২৪)। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) মতে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলো থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের ৩ ভাগের ২ ভাগই বেকার।

বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা অর্জন করা ৪৭ শতাংশ শিক্ষার্থীই বেকার থাকছে। ভারতে এই হার মাত্র ৩৩, পাকিস্তানে ২৮, নেপালে ২০ আর শ্রীলঙ্কায় মাত্র ৭ দশমিক ৮ (সূত্র: সমকাল ৫ জুলাই ২৪)। বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ আসে নিম্নমধ্যবিত্ত ও গরীব পরিবার থেকে, যাদের অনেকেই সংগ্রাম করে দীর্ঘ পড়ালেখার পথ পাড়ি দেয়। অনেকের পরিবারে সম্পূর্ণ আশা ভরসার একমাত্র প্রতীক এই সকল শিক্ষার্থীরা।

কিন্তু  তীব্র বেকারত্বের বিপরীতে  কর্মসংস্থানের স্বল্পতা, বেকারত্ব মহা স্রোতে ভেসে চলা তাদের স্বপ্ন, পরিবার ও ক্যারিয়ার ভাবনা হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে করে তুলেছে হতাশাগ্রস্ত। আঁচল ফাউন্ডেশনের মতে, দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী হতাশায় ভোগেন (সূত্র: বণিক বার্তা ৮ জুন ২৪)। হতাশার সর্বোচ্চ চূড়ায় উপনীত হওয়ার পরবর্তী ধাপ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় অনেকে।

দেশের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের একটা বড় অংশ যারা কণ্টকাকীর্ণ জীবনের বেড়াজাল থেকে মুক্তির নেশায় নিজের জীবন দিয়ে দিচ্ছে। আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে অনুযায়ী, ২০২৩ সালে দেশে মোট ৫১৩ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে।

যাদের ৬০ শতাংশই নারী। এর মধ্যে ৬৭ শতাংশের বয়স ১৩ থেকে ১৯ বছর। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার হার ১৯ শতাংশ (সূত্র বণিক বার্তা ২৮/০১/২৪)। শুধু তাই নয় দেশে উচ্চশিক্ষত তাদের একটা বড় অংশ এখন দেশে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধার অভাবে বহির্বিশ্বে পাড়ি জমাচ্ছে। ইউনেস্কোর প্রতিবেদন অনুযায়ী , ২০২৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে বিদেশে গিয়েছে মোট ৫২ হাজার ৭৯৯ জন  শিক্ষার্থী (সূত্র : প্রথম আলো ০১/১২/২৩)।

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম তথ্য মতে,  উন্নত জীবন যাপনের আশায় বাংলাদেশের ৮২ শতাংশ তরুণ দেশ ছাড়তে চায় (সূত্র: সমকাল ৫ জুলাই ২৪)। এই সংখ্যা আপাতত  বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জল করছে মনে হলেও দীর্ঘ মেয়াদে দেশকে মেধা শূন্যতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আমাদের মত উদিয়মান অর্থনীতির জন্য এটি চিরচেনা রূপ হলেও সুসংগত ও আগামীর বাংলা গড়তে মেধাবীদের দেশে রাখা অত্যন্ত জরুরি।

বাংলাদেশে বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কর্তারা মনে করে দেশের শিক্ষিত তরুণদের বড় অংশ সেসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করার জন্য যে যোগ্যতা বা সময়ের সাথে পরিবর্তনীয় ও আধুনিক শিক্ষার প্রয়োজন তা নেই। ফলে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে  বাহির থেকে দক্ষ জনবল নিয়োগ করতে হচ্ছে। ফলে একই সাথে দেশের কর্মসংস্থানের সুযোগ হ্রাস পাচ্ছে পাশাপাশি  দেশীয় অর্থ বাহিরে চলে যাচ্ছে।

আমাদের শিক্ষা মাধ্যাম আধুনিকায়নের অভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যত বেকার তৈরির কারখানায় পরিণত হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে দীর্ঘ শিক্ষা জীবন শেষ করার পর শিক্ষার্থীরা যখন কর্মবাজারে প্রবেশ করে তখন দুটি কাগজ ছাড়া কার্যত নিজেকে শূন্য অবস্থায় আবিষ্কার করে। যা দেশে শিক্ষিত বেকার সৃষ্টির আরো একটি বড় অনুঘটক। বেকারত্ব, মেধা পাচারের মত ঘটনা আমাদের শিক্ষাখাতের বিনিয়োগের  প্রকৃত সুফল থেকে বঞ্চিত করছে।

রাষ্ট্রযন্ত্র শিক্ষাখাতে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে কিন্তু সাধারণ খেটে খাওয়া দিনমজুরের ট্যাক্সের অর্থের সঠিক সুফল কার্যত শূন্যর কোটায় নেমে আসছে বেকারত্ব ও মেধা পাচারের ফলে। এর মাঝে দেশের একটা বৃহৎ জনসংখ্যা বিশেষ করে মহামারির পরবর্তী জনশক্তি অলস জনশক্তিতে পরিণত হয়েছে তারা কোন কাজ করে না কোন প্রশিক্ষণও গ্রহণ করে না।

ফলে আগামী প্রজন্ম নিয়ে একটা মৃদু শঙ্কা উদয় হয়েছে যা আগামীর দেশ গঠনের পথে বড় বিষফোঁড়া। পরিসংখ্যান ব্যুরো এর মতে, বর্তমানে প্রায় ৪১ শতাংশ তরুণ নিষ্ক্রিয়। ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সসীমার এই নিষ্ক্রিয় তরুণের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ২৯ লাখ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জনশক্তি উৎপাদনের হার শূন্য। তাদের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব ও অর্থনীতির হাল ধরার নতুন প্রজন্ম নিয়ে তারা শঙ্কিত।

নানামুখী পরিকল্পনা ও প্রণোদনা দিয়েও তাদের জনশক্তির উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব  হচ্ছে না। এদিকে আমাদের দেশে হাজার হাজার তরুণ জনশক্তি আজ বেকার হয়ে অলস জীবন পার করছে। ফলে দেশে তার জনশক্তির কাক্সিক্ষত সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এমতাবস্থায় দেশের অর্থনীতি ও আগামীর পথ সুদৃঢ় করতে মেধা ভিত্তিক সমাজ গঠনের বিকল্প নেই। কিন্তু সরকারি চাকুরির বিভিন্ন নিয়োগে অর্ধ শতাংশের বেশি, কোন কোন ক্ষেত্রে তার থেকেও বেশি কোটার প্রয়োগ নীতি মেধাবীদের সুযোগ হ্রাস করছে।

ফলে যোগ্য ব্যক্তির পরিবর্তে অপেক্ষাকৃত কম অকৃতকার্য শিক্ষার্থীরা সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে। ফলে মেধাবীরা সুযোগ হারিরে কার্যত হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে দেশের বাহিরে চলে যাচ্ছে অথবা রাষ্ট্রের বোঝা হয়ে উঠছে। কিন্তু আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে এবং আসন্ন শিল্প বিপ্লবে নেতৃত্ব দিতে আমাদের যে দক্ষ জনশক্তি দরকার।

কিন্তু তার পথ বন্ধ হয়ে যাবে এই নীতির ফলে। তাই এখনই সময়, তীব্র বেকারত্বের এই দেশে একটা বৃহৎ তরুণ জনশক্তিকে পিছনে না ফেলে বরং আগামীর বাংলাদেশ গড়তে ও আসন্ন শিল্প বিপ্লবের নেতৃত্ব সৃষ্টির লক্ষ্যে মেধা ভিত্তিক সুযোগ সৃষ্টি করা সময়ের দাবি।


লেখক : শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।

fuadhasaniu098@gmail.com

01791-501722



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS