ভিডিও

ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: আগস্ট ০৩, ২০২৪, ১১:৪০ রাত
আপডেট: আগস্ট ০৩, ২০২৪, ১১:৪০ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

আমাদের দেশে মাঝে মাঝেই মৃদু ভূমিকম্প দেখা দেয়। গত বছর দেশব্যাপী ১২টি হালকা ও মাঝারি ধরনের ভূমিকম্পে আঘাত হানার তথ্য রয়েছে। ছোট খাটো ভূমিকম্প ও বড় ভূমিকম্পের আভাস দেয়। বিশেষজ্ঞদের আশংকা, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট এতটাই ঝুঁকিতে রয়েছে যে, রিখটার স্কেলে ৭ কিংবা এর বেশি মাত্রায় ভূমিকম্প হলে ভয়াবহ বিপর্যয় হতে পারে এ তিন নগরীতে। ধসে পড়তে পারে বহু ভবন। এ জন্য বড় দুর্যোগের আগেই তারা প্রস্তুতির তাগিদ দিয়েছেন।

ভূমিকম্প এমন এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যা অল্প সময়ে যে কোনো জনপদকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করে। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলে আঘাত হেনেছিল। যার ফলে তুরস্ক ও সিরিয়ায় যে ক্ষতি সাধিত হয় তা অকল্পনীয়।

সেই দুর্যোগ সারা বিশ্বের মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে। আমাদের দেশও ভূমিকম্প প্রবণ হয়ে উঠছে। গত বছর দেশে ৫ মাত্রার ওপরে মোট ছয়টি ভূমিকম্প হয়েছে। এর আগে ২০২২ সালে মাঝারি মাত্রার বা রিখটার স্কেলে ৫ এর ওপরে মোট তিনটি ভূমিকম্প  হয়। অথচ ১৯৭২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে যে কটি ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়েছে, তার মধ্যে মাঝারি মাত্রার কম্পনের ঘটনা ঘটেছে প্রতি দুই থেকে চার বছরে একবার।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মাত্রার কম্পন হঠাৎ বেড়ে গেছে। ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞদের হিসাবে গত ২৫ বছরে দেশের ভেতরে সৃষ্টি হওয়া ভূমিকম্পগুলোর মধ্যে এটি ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী। গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে, গত বছরের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে লক্ষ্মীপুরে সৃষ্টি হওয়া ভূমিকম্পটি ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী।

এ ছাড়া গত বছর দেশের বিভিন্ন স্থানে যে ভূমিকম্পগুলো সৃষ্টি হয়েছিল তার বেশির ভাগই নতুন এলাকায়। অর্থাৎ এসব এলাকা খুব কম ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল। বিশ্বের শক্তিশালী ভূমিকম্পগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে আমাদের ভূমিকম্পের মাত্রা খুব বেশি তীব্র নয়।

ভূমিকম্প প্রবণ এলাকার নকশা অনুযায়ী বড় ভূমিকম্প হলে বাংলাদেশের অনেক ছোট-বড় জনপদেই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশংকা রয়েছে। কিন্তু ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত কি? দেশের ক্রমবর্ধমান শহরগুলোতে প্রতিদিন অসংখ্য বহুতল ভবন নির্মিত হচ্ছে, যার বেশির ভাগই বিল্ডিং কোড বা ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী করা হচ্ছে না।

ফলে ভবনগুলো ভূমিকম্প প্রতিরোধী হচ্ছে না। একটু বেশি মাত্রার ভূমিকম্প হলেই সেগুলো ভেঙে পড়বে। ভবন যাতে বিল্ডিং কোড মেনে তৈরি করা হয় তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব যাদের, তারা সেই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেন না। যে মাটির ওপর ভবনটি তৈরি হচ্ছে, তা ভবনটিকে বহন করার ক্ষমতা রাখে কি না তাও যথাযথভাবে নিরীক্ষা করা হয় না। ভবন নির্মাণেও অনেক দুর্বলতা থাকে।

এসব কারণে ভূমিকম্প, এমনকি ঝড়-বাদল ছাড়াও ভবন হেলে পড়া বা ধসে পড়ার ঘটনা ঘটে। আবার সরকারি ভবন নির্মাণে দুর্নীতি তো আছেই। সঠিক উপকরণ সঠিক মাত্রায় ব্যবহৃত হয় না। সাম্প্রতিক সময়ে রডের পরিবর্তে বাঁশ দিয়ে ভবন নির্মাণের অনেক ঘটনা গণমাধ্যমে উঠে এসেছে।

এই যেখানে নির্মাণের অবস্থা, সেখানে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে বিজ্ঞানীরা যে আশংকা প্রকাশ করেছেন, তা অবিশ্বাস করার সুযোগ কোথায়? ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি শুধু ভবন ধসের ওপরই নির্ভর করে না। বড় শহরগুলোতে যেভাবে গ্যাস ও বিদ্যুতের সংযোগ রয়েছে।

তাতে বড় ভূমিকম্পের সঙ্গে শহরজুড়ে এক মহাঅগ্নিকান্ডের সূচনা হতে পারে। ভবন ধসে কেউ বেঁচে গেলেও আগুন থেকে বাঁচা সম্ভব নাও হতে পারে। দ্রুত প্রয়োজনীয় উদ্ধার তৎপরতা চালাতে না পারলেও বহু মানুষ মারা যেতে পারে। তেমন অভিজ্ঞতা পৃথিবী জুড়ে অনেক রয়েছে।

তাই ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবিলায় আমাদের দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় বড় ধরনের বিপদের মুখে পড়বো আমরা।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS