শত শত মানুষের বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে স্বৈরাচারমুক্ত হলো দেশ। জীবনবাজি রেখে নতুন করে স্বাধীনতা এনে দিল বীর ছাত্র-জনতা। শ্রাবণের মেঘমুক্ত আকাশে উড়ল বিজয়ের কেতন। স্বর্ণাক্ষরে লেখা হলো দু:শাসনের শিকল ছিন্ন করে গণঅভ্যুত্থানের নতুন ইতিহাস। পতন হলো টানা ১৭ বছর ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা স্বৈরাচার সরকারের।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পতন হয়েছে শেখ হাসিনা সরকারের। জনবিস্ফোরণের মুখে গত সোমবার দুপুুরে পদত্যাগের পর গণভবন থেকে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন তিনি। কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন শেষ পর্যন্ত ছাত্র-জনতার এক দফায় জীবন-মৃত্যুর আন্দোলনে রূপ নেওয়ার পর গদি ছেড়ে পালিয়েছেন তিনি।
চার শতাধিক মানুষের জীবনের বিনিময়ে অর্জন হয়েছে এই বিজয়। ছাত্র-জনতার এই বিজয় নিশ্চিত হওয়ার পর পরই রাজপথে নেমে আসে লাখ লাখ মানুষ। পুরো দেশ চলে আসে জনতার দখলে। তারা নানা শ্লোগানে, উল্লাস ধ্বনিতে বিজয় উদযাপন করেছেন।
উল্লসিত জনতা দখলে নিয়ে নেয় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনও উচ্ছ্বসিত জনতার মিছিল এসে মেলে শাহবাগ, টিএসসি আর শহীদ মিনারে। শুধু রাজধানী নয়, গোটা দেশই রূপ নেয় বিজয়ের নগরে। লাল-সবুজের পতাকা মাথায় বেঁধে রাস্ত্য়া নামে শিশু থেকে বয়স্ক সব শ্রেণি পেশার মানুষ এই আনন্দ ভয়কে জয় করার। এই ্উচ্ছ্বাস মুক্তির। কোটা সংস্কার আন্দোলনের এক পর্যায়ে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের দমন-পীড়নে ক্ষোভে ফেটে পড়ে শিক্ষার্থীরা।
বিশেষ করে কোটা আন্দোলনের প্রশ্নে ১৪ জুলাই শেখ হাসিনা বলেন, চাকরি মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা পাবে না, তা হলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা পাবে? তার এই ব্ক্তব্যে ছাত্র-জনতা বিক্ষোভে ফেটে পড়ল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যোগ দেয় বিক্ষোভে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে সোমবার লং মার্চ টু ঢাকা।
কর্মসূচি ঘিরে উত্তেজনার মধ্যেই সোমবারই প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে ভারতের উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। পতনের দিনেও স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা রাজপথে ১০২ জনের প্রাণ নিয়ে পালিয়েছেন। তার নির্দেশে এ বর্বর হামলা চালাচ্ছিল পুলিশ সহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর অন্যান্য সংস্থার সদস্যরা। আহত হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। যাদের অনেকে এখনও হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে।
শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকার বিগত পনের বছর ধরে অগণতান্ত্রিক উপায়ে জেল-জুলুম-গুলির মাধ্যমে জাতির কাঁধে চেপে বসেছিল। মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করেছিল, রাজনৈতিক ভিন্ন মতাবলম্বীদের মিথ্যা মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছিল, গণমাধ্যমে কোনো স্বাধীন মতামত দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না।
চাটুকার-স্তাবক দ্বারা গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছিল। এরা অগুণন নিরীহ মানুষের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে সরকারি ভাতা সহ অন্যান্য সুবিধাদি ভোগ করছিল। অনেক প্রতিবাদী সাংবাদিকের প্রাণ গেছে, সরকারি অত্যাচার-নির্যাতনে অনেকে চিরদিনের মতো পঙ্গু হয়ে গেছেন। অজস্র রাজনৈতিক নেতা কর্মির প্রাণ গেছে এই জালেম সরকারের অত্যাচার নির্যাতনে।
পুলিশের গুলিতে রংপুরের কোটা আন্দোলনকারী শহীদ সাঈদের মৃত্যু জাতিকে নতুন করে পথ দেখাবে। মানুষ চায় গণতন্ত্র, কথা বলার অধিকার, সভা-সমিতি করার অধিকার এবং ভোট দেওয়ার অধিকার। প্রতিটি হত্যাকান্ডের প্রকৃত বিচার হোক, দালাল-মোনোফেকের আইনের মুখোমুখি করতে হবে। লুন্ঠন-ধর্ষণকারীদের পাকড়াও করুন। যারা নিজের দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব অন্য দেশের কাছে বিকিয়ে দেয়, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিন।
ধ্বংস হওয়া শিক্ষা ব্যবস্থাকে নতুন করে সাজিয়ে নৈতিকতা ফিরিয়ে আনতে হবে। গণতান্ত্রিক দেশ গড়ায় প্রত্যেককে মনোযোগ দিতে হবে। দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করা এখন অত্যন্ত জরুরি। স্বৈরাচারী সরকারের পতন আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা।
গণঅভ্যুত্থানকারি বীর ছাত্র-জনতাকে আমাদের সশ্রদ্ধ সালাম। বাংলাদেশ সামনে এগিয়ে যাবেই। জনগণকে শান্ত থাকতে হবে। দেশের স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখতে হবে। কোনো বিশৃঙ্খলা যেন কেউ করতে না পারে, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।