ভিডিও

শান্তি বজায় রাখুন

প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২৪, ০৬:০৭ বিকাল
আপডেট: আগস্ট ১১, ২০২৪, ০৬:০৭ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

দেশব্যাপী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন যখন ছাত্র-জনতার গণবিস্ফোরণে পরিণত হলো তখন জাতি প্রত্যক্ষ করল এক বিস্ময়কর অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থান। বিশ্ববাসী বিস্ময়ভরা চোখে দেখল এক স্বৈরশাসনের পতন। জাতি দেখল পতিত শাসকদের দেশ ছেড়ে পলায়ন। ইতিহাসের এটাই নির্মম পরিহাস যে- ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না।

পৃথিবীতে যুগে যুগে নতুন নতুন স্বৈরশাসক গজায় তোষামদ কারি, চাটুকার পরিবৃত্ত হয়ে এই সব স্বৈরশাসক নিজেদের গদি রক্ষার্থে জনগণের ওপর চালায় অত্যাচার-নির্যাতনের স্টিম রোলার। তারপর জনগণ একদিন ফুঁসে ওঠে- পালায় স্বৈরশাসক, পালায় চাটুকার, তোষামদকারী, পালায় গণবিরোধী শক্তি। বিজয় আসে জনগণের। কিন্তু এ বিজয়কে জনগণের বিজয়ে রূপান্তরিত করতে হবে।

জনগণ যেন এ বিজয়ের সম্পূর্ণ ফলভোগী হতে পারে সেই ব্যবস্থাকে পাকাপোক্ত করতে হবে। জনগণের এ বিজয় যেন স্বার্থের চোরাগলিতে আবার হারিয়ে না যায়- সেদিকেও জনগণকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। স্বৈর শাসন বিদায় নেওয়ায় মানুষ হাফ ছেড়ে বেঁচেছে। জীবনটা স্বস্তিতে ফিরেছে।

চারদিকে বিজয়োল্লাস, শ্লোগানে শ্লোগানে বাংলাদেশের আকাশ-বাতাস মুখরিত। জাতি আবার স্বাধীন হলো- মানুষ একে বলছে- এলো আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতা। এ যেন এক নতুন বাংলাদেশের রূপ। অনেক বছরের অধিকারহীনতা, কথা বলতে না পারার নীরব যন্ত্রণা যেন উড়ে গেছে হাওয়ায়।

সমস্ত অধিকার হারা মানুষের এই সমুদ্রে খড়কুটোর মতো ভেসে গেছে ক্ষমতার দম্ভ। ভেসে গেছে সন্ত্রাসের কালো থাবা। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবির মুখে গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন শেখ হাসিনা। সঙ্গে নিয়ে গেছেন তার বোন শেখ রেহেনাকেও। বহু বছর ধরে স্বৈরতন্ত্রের নিগড়ে বাঁধা পড়েছিল দেশ। ছাত্র-জনতা সেই বাঁধন কেটে মুক্তি এনে দিয়েছে জাতিকে।

বিগত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে হতাহতের যে মর্মস্পর্শী ঘটনা ঘটেছে তাতে আমরা অত্যন্ত বেদনাকাতর। আমরা আশা করব এ ব্যাপারে যথাযথ তদন্তক্রমে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা হবে। যে কোনো দেশে বা সমাজে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে গণ আন্দোলনের জয়ীদের কোনো কোনো অংশ সুযোগ সন্ধানে ব্যস্ত থাকে- এমন নজির আমাদের সামনে বহু আছে।

কোনো বিশৃঙ্খলা নয়, কোনো ধ্বংস নয়, কোনো প্রতিহিংসা নয়, জনগণের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে সর্বত্র শান্তি বজায় রাখতে হবে-আমরা মনে করি সবার আগে দেশ। আর দেশকে সুরক্ষিত রাখার দায়িত্ব দেশের জনগণের কম নয়। সহিংসতা শান্তির বড় অন্তরায়।

মূলত স্বৈরাচারীরা তার রাজনৈতিক অস্তিত্ব হারিয়েছে ২০১৪ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচনে জোর করে ক্ষমতায় পুনর্বহাল হওয়ার মধ্য দিয়ে। পরপর একই ধরনের আরো দুটি নির্বাচন করে স্বৈরশাসকরা পুরোপুরি জনগণের সাথে সম্পর্কহীন হয়ে যায়। সামান্য কিছু সামরিক -বেসামরিক আমলা, চাটুকার, ধান্দাবাজ দালাল- সুবিধাভোগী চক্র শেখ হাসিনার দেশের সর্বময় ক্ষমতা ভোগ করেন।

গণতন্ত্রের ছদ্মাবারণে গোষ্ঠীটি সর্ব সাধারণের দন্ডমুন্ডের কর্তা হয়ে যায়। সবকিছুকে তারা অস্ত্রের ভাষায় নিয়ন্ত্রণ করার ফ্যাসিবাদী নীতি গ্রহণ করে। এর ফলে শেখ হাসিনার শাসন বরাবরই রক্ত ঝরিয়েছে। সর্বশেষ কোটা বিরোধী আন্দোলন তার চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত।

সাধারণ মানুষ শান্তি চায়, নিরাপত্তা চায়। আমরা চাই- দ্রুত পরিস্থিতি স্থিতিশীল হবে। আমরা সেই আস্থা রাখতে চাই। এ মুহূর্তে নাগরিক কর্তব্যের কথা ভুলে গেলে চলবে না। দেশের শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা করা এখন অত্যন্ত জরুরি। প্রতিহিংসা ও সহিংসতা থেকে বিরত থাকতে হবে। দেশে শান্তি ফেরাতে হবে।

আমাদের শিখতে হবে কোটা বিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা কীভাবে দেশ পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় অংশ নিচ্ছে। সারা দেশে মন্দির পাহারা দিচ্ছে, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিচ্ছে। রাস্তাঘাটে ট্রাফিক সেজে যানবাহন চলাচলকে স্বাভাবিক রাখছে, শহরের রাস্তাঘাট পরিষ্কার করছে- এ এক অভাবনীয় দৃশ্য। কোমলমতি এই শিশু-কিশোররা আগামী দিনের সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়বে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা আশাবাদী- জাতি উজ্জীবিত।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS