ভিডিও

করতোয়া আমার প্রথম ভালোবাসা

এম. আতিকুল ইসলাম বুলবুল

প্রকাশিত: আগস্ট ১২, ২০২৪, ০৭:৩১ বিকাল
আপডেট: আগস্ট ১২, ২০২৪, ০৭:৩১ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

এক সময়ের বহমান নদীর নামে নাম। যা নদীর মতই এঁকে বেঁকে চলা সে নদী, দিনে দিনে নদী অধ্যুষিত মানুষের আপন জন হয়ে উঠে। তেমনি পত্রিকার শহর খ্যাত বগুড়া থেকে প্রকাশিত উওরাঞ্চলের পাঠক প্রিয় একটি দৈনিক পত্রিকা তার নামও করতোয়া। পত্রিকাটির প্রকাশক ও সম্পাদক পরম শ্রদ্ধেয় মোজাম্মেল হক ভাইয়ের অনবদ্য এক সৃষ্টি।

কাক ডাকা ভোরে উত্তর জনপদের মানুষের মন ছুঁয়ে যাওয়া ও হৃদয়ে স্থান করে নেওয়া পত্রিকাটি নব্বই দশকের মাঝামাঝি রঙিন কলেবরে প্রকাশের পর নন্দিত ও আপন স্বজন হয়ে উঠে অগণিত পাঠকের কাছে। মূলতঃ ইতিহাস খ্যাত পুন্ড্র নগরীর সেই বগুড়ার ফতেহ আলী বাজার। বাজারে উত্তরে পাথর আর লোহার পাত বিছানো রেলপথ।

ছোট্ট রেলসেতু পেরিয়েই চেলোপাড় স্বামী নিগমানন্দ সারস্বত আশ্রম। আর ওই আশ্রমেই থাকতেন আমার বন্ধু দিগেন। ও আর আমি দু’জনই তখন এইচএসসি শেষ করে মাত্র গ্রাম থেকে বগুড়াতে সরকারি আজিজুল হক কলেজে ইতিহাস বিভাগে অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছি। তখন আমি থাকতাম সেউজগাড়ী কারমাইকেল রোডের জীবন ভিলা নামের মেসে আর দিগেন চেলোপাড়া স্বামী নিগমান্দ সারস্বত আশ্রমের মেস এ থাকত।

বন্ধু দিগেনের সাথেই আড্ডা দিতে স্বারসত আশ্রমে মাঝে মধ্যে যেতাম। আর কাকতালীয় ভাবেই সেউজগাড়ী থেকে রেলপথ ধরে হেঁটে চেলোপাড়া যেতে প্রথম চকযাদু রোডে দৈনিক করতোয়া অফিস ও এর অদূরেই ফতেহ আলী বাজারের সাথেই বয়ে যাওয়া শীর্ণকায় বগুড়ার করতোয়া নদী আমার প্রথম দেখা। পাশাপাশি করতোয়া নদী আর দৈনিক করতোয়া পত্রিকা দুটোই আমার প্রথম ভাল লাগা।

কারণ নদী দেখলে মন ভাল হয়ে যায়। আর যেহেতু যত সামান্য লেখালেখির অভ্যাস ছিল ছাত্র বেলাতেই সেহেতু রঙীন পাতার করতোয়া পত্রিকায় পাঠক হিসেবে ছাপার অক্ষরে নিজের লেখাটা ছাপা হবে সে সুপ্ত ইচ্ছা আর আগামীর আনন্দ থেকেই অনেক পত্রিকার মধ্যে করতোয়া পত্রিকাকে আমার প্রথম ভালো লাগা।

এ ছাড়া ছাত্রাবস্থায় যখন কলেজের পাশে সেলুনে নিয়মিত দৈনিক করতোয়া পড়তাম তখন অনেকটা একনিষ্ঠ পাঠক হয়ে সময় নিয়ে খুঁটে খুঁটেই পত্রিকাটি পড়তাম। বিশেষ করে করতোয়ার সম্পাদকীয় পাতা, সাহিত্য পাতা, সবুজ আসর, শিক্ষা পাতা, খেলার পাতা, উওর জনপদের খবর পড়াটা এক ধরনের নেশা হয়ে যায়।

আর ১৯৯৬ সালে আমি সরকারী আজিজুল হক কলেজে অনার্সে ভর্তি হই। তারপর নিয়মিত ক্লাস করা অবসরে মেসে বসে কবিতা গল্প লেখা, গান শোনা ও বগুড়া পৌর পার্কে অবস্থিত উডবার্ণ পাবলিক লাইব্রেরীতে অনেকগুলো জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকা পড়া, পুরনো দিনের বিশেষ করে উপন্যাসের বইপড়া এসব নিয়েই ব্যস্ত থাকতাম বা থাকার চেষ্টাও করতাম।

একটা কথা না বললেই নয় সে সময় বগুড়া থেকে অনেকগুলো পত্রিকা নিয়মিত বের হতো। আর প্রকাশিত ওই পত্রিকাগুলোতে সপ্তাহে একদিন পূর্ণ পৃষ্ঠার সাহিত্য পাতা থাকতো। তবে সরকারি আজিজুল হক কলেজের বাংলা বিভাগের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক নাসিম উদ্দিন মালিথা স্যারের মত অনেক শ্রদ্ধেয় প্রাজ্ঞজন ও বিশিষ্ট কবি- লেখকগণ সহ নবীণ প্রবীণ অনেকেই তখন করতোয়ায় লিখতেন।

তাই করতোয়া সাহিত্য পাতায় ভুলভাল কি লিখবো তা নিয়েও নিজের মধ্যে সংকোচ ও ভয় কাজ করতো। তারপরও সাহস নিয়ে একদিন চকযাদু রোডে অবস্থিত করতোয়ার অফিসের গেটে রাখা ডাক বাক্সে হলুদ খামে ভরে দুটি কবিতা ফেলে আসি।

আর শুক্রবার এলেই করতোয়া পত্রিকার সাহিত্য পাতায় খোঁজ করতে থাকি নিজের লেখা কবিতা ছাপা হলো নাকি ? একদিন দেখি করতোয়ার চকচকে সাহিত্য পাতায় ছাপা হলো আমার প্রথম কবিতা। পেলাম উৎসাহ। বন্ধুদের অনুপ্রেরণা। ব্যস আর থামিনি।

ক্লাসের পড়া পাশাপাশি লেখালেখির পোকাটা আমাকে পেয়ে বসে। সে জন্য বগুড়াতে থাকার সুবাদে বছর খানেকের মধ্যেই করতোয়ার সাহিত্য পাতায় প্রচুর ছোট গল্প, কবিতা, পাঠ প্রতিক্রিয়া, চিঠিপত্র কলামে লেখা ছাপা হতে থাকলো।

আমার কাছে সব সময় মনে হয়েছে করতোয়া পত্রিকাটির প্রকাশক ও সম্পাদক পরম শ্রদ্ধেয় মোজাম্মেল হক ভাইয়ের জীবনে ঘাত প্রতিঘাতের পাশাপাশি নানা অর্জনের অনেক গল্প আছে। তা তাঁর অনেক সহকর্মী ও সহযোদ্ধার কাছে শুনেছি ও জেনেছি।

তারপরও বলতে হয় ২০১৪ সালের দিকে করতোয়ার এক প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে করতোয়ার নিয়মিত লেখক হিসেবে আলোচনা সভায় আমন্ত্রিত হয়েছিলাম। সেখানে শ্রদ্ধেয় লালু ভাই তাঁর বক্তব্যে শুনিয়েছিলেন করতোয়া প্রকাশের প্রথম দিকের নানা স্মৃতি। যেমন কোন একদিন বৃষ্টি আর ঝড়ের রাতে ভ্যান যোগে বগুড়া বিসিক এলাকা থেকে মধ্য রাতে প্রকাশিত করতোয়া নিয়ে শহরে ফেরার পথে পত্রিকাসহ ড্রেনে পড়ে ভিজে একাকার হয়ে যান। পাশাপাশি সে রাতে প্রকাশিত করতোয়ার সব কপি নষ্ট হয়ে যায়।

সে সময় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে কেঁদেছিলেন তিনি। কিন্তু থেমে যাননি। নিরুৎসাহিত না হয়ে আবারও পরের রাতে ঠিকই করতোয়া প্রকাশ করেন নতুন উদ্যমে। মূলতঃ তিলতিল করে শিশু করতোয়াকে এখন সতেজ যুবকে পরিণত করেছেন সফল সম্পাদক ও প্রকাশক লালু ভাই। তাইতো এখন দেশের অগণিত পাঠকের বিশ্বাস আর আস্থার একটি পত্রিকা করতোয়া।

যা পাঠকের আবেগের প্রিয় পত্রিকা হতে পেরেছে দৈনিক করতোয়া তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। এ কারণেই হাজারো অর্জনের সফল মানুষ লালু ভাইয়ের হাতে গড়া করতোয়ার মধ্যেই বেঁচে থাকবেন শত শত বছর অগণিত করতোয়া প্রেমী সব শ্রেণীর পাঠকের মাঝে এটাই প্রত্যাশা।

আর বলতেই হয় করতোয়াই শ্রদ্ধেয় লালু ভাইয়ের জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন। এখন সময়ের ব্যবধানে অনেক জাতীয় পত্রিকায় কম বেশি আমার লেখা ছাপা হয়। তারপরও করতোয়ায় লেখা পাঠিয়ে যে মানসিক তৃপ্তি পাই তা বলার নয়। তাই করতোয়ার প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে বলব আমার প্রথম ভাল লাগার প্রিয় দৈনিক আরো এগিয়ে যাক । করতোয়া সংশ্লিট সবাইকে  নিয়ে ভালো থাকি আমরা।


লেখক : প্রভাষক-কলামিস্ট

01712- 237933



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS