ভিডিও

করতোয়াকে যেভাবে দেখছি

এড. মোঃ মোজাম্মেল হক

প্রকাশিত: আগস্ট ১২, ২০২৪, ০৮:১৫ রাত
আপডেট: আগস্ট ১৩, ২০২৪, ০১:১৮ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

বাংলাদেশের যতগুলো প্রচার শীর্ষে দৈনিক পত্রিকা আছে তারমধ্যে করতোয়া অন্যতম। সেই পত্রিকার ৪৭ বৎসরে পদার্পণ। ৪৬ বৎসর পেরিয়ে নতুন দিগন্তে এর মহাযাত্রা। প্রতিবৎসরই এই যাত্রা নতুন অঙ্গীকারে শুরু করে এই পত্রিকাটি। এই পত্রিকাটির প্রতি দুর্বলতা বলতে গেলে যৌবনের প্রারম্ভেই। ১৯৭৬ সনে ১২ই আগস্ট যাত্রা শুরু করে এই পত্রিকা।

তখন সবেমাত্র এসএসসি পাশ করেছি। অজো পাড়া গাঁ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি, পত্রিকা কি জিনিস তখনও বুঝি নাই, যখন কলেজে গেলাম তখন পত্রিকা পড়া শুরু করলাম। তখন মূলতঃ থানাগুলোতে একদিন পর ঢাকা থেকে প্রকাশিত ইত্তেফাক পত্রিকা যেত, তখনও করতোয়া তদানীন্তন থানা পর্যায়ে যায় নাই, কোন কারণে জেলা সদরে আসলে হকারের নিকট থেকে সাদা কালো একখানা করতোয়া পত্রিকা নিয়ে এক নিমেষেই আদ্যপান্ত পাঠ করতাম।

তারপর এইচএসসি পাশ করে সরকারী আজিজুল হক কলেজে পড়া অবস্থায় এই পত্রিকাটি নিয়মিত পড়া শুরু করলাম। মূলতঃ তখন থেকে এই পত্রিকার প্রেমে পড়ে গেলাম, আজও তা ছাড়তে পারলাম না, কারণ সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে করতোয়া পত্রিকা না পড়লে যেন সমস্ত দিনটাই মাটি হয়ে গেল। আর একথা আমার একার না, যদি অনুসন্ধান করা যায়, দেখা যাবে করতোয়া পত্রিকার অগণিত পাঠক আমার মতই সকাল বেলা করতোয়া পত্রিকা না পড়লে সমস্ত দিনই অস্বস্তিতে থাকবে।

আর এই পাঠক প্রিয়তা পেতে করতোয়াকে প্রায় অর্ধ শতাব্দী অপেক্ষা করতে হয়েছে। সময়টা নেহাতই কম নয়। প্রবাদ আছে একটি বংশকে কূলিন হতে গেলে যেমন সাতটা পুরুষ অতিক্রম করতে হয়, তেমনি একটি পত্রিকাকে পাঠকের হৃদয়ের কাছাকাছি নিয়ে গিয়ে পাঠক প্রিয়তা পেতে গেলে পাঠক কি চায় তা বুঝতে হয় এবং অনেক সময় অতিক্রান্ত করতে হয়।

এই পরীক্ষায় করতোয়া অনেক আগেই উত্তীর্ণ হয়েছে, পেয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা, পেয়েছে নাম, যশ, খ্যাতি, আর সেই কারণেই এই পত্রিকাটি প্রচার শীর্ষের পত্রিকাগুলির মধ্যে একটি। আসলে পত্রিকা সব সময়ই নিরপেক্ষভাবে প্রকাশ করাও দূরহ, অনেক সময়ই নিরপেক্ষ ভাবে পত্রিকা প্রকাশ করা যায় না। নানা প্রতিকূলতার মাধ্যমে পত্রিকাকে বন্ধুর পথ অতিক্রম করতে হয়, আসে মাঝে- মধ্যেই নানা ঝঁক্কি-ঝামেলা। তাছাড়া সব সময়ই শাসক শ্রেণীর রক্ত চক্ষুতো আছেই। স্বাধীনতার ৫০ বৎসর পেরিয়ে গেলেও আমাদের দেশে পত্রিকার পথ এখন পর্যন্ত সুপ্রশস্ত হয় নাই।

বিশেষ ক্ষমতা আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সহ নানা কালা -কানুন পত্রিকার পথকে করেছে সংকীর্ণ, করেছে পত্রিকার স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ। অনেক পত্রিকাই সত্য কথা বলতে গিয়ে প্রকাশনা হারিয়েছে, হয়েছে পত্রিকার ডিক্লেরেশন বাতিল, ফলে শত শত সাংবাদিক সহ পত্রিকার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা হয়েছে বেকার,অভাব অনটনে পড়েছে পরিবার। মনে রাখতে হবে যেদেশে পত্রিকা যত স্বাধীন সেদেশে গণতন্ত্র তত টেকসই। টেকসই গণতন্ত্রের প্রকৃষ্ট প্রমাণ হচ্ছে স্বাধীন সংবাদপত্র।

মূলতঃ করতোয়ার এই জনপ্রিয়তার পিছনের কারিগর কারা তা আমরা অনেকেই জানি না। প্রথম ব্যক্তি হচ্ছে সম্পাদক মহোদয়। সম্পাদক হচ্ছে একটি পত্রিকার বাতিঘর। একটি জাহাজ যেমন শত শত নটিক্যাল মাইল অতিক্রম করে ঠিকই বন্দরে আসে কিন্তু বাতিঘরের সিগন্যাল না পাওয়া পর্যন্ত জাহাজটি বন্দরে নোংগর করতে পারে না, তেমনি একজন দক্ষ সম্পাদক ছাড়া একটি পত্রিকা সঠিক পথে এগুতে পারে না।

মোজাম্মেল হক সাহেব একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ সম্পাদক, দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় ও তাঁর নিপুণ সম্পাদনায় পত্রিকাটি ঠিকই এগিয়ে যাচ্ছে তার গন্তব্যের দিকে আর এটাই হলো পত্রিকার উপরে উঠার প্রথম সিঁড়ি। করতোয়ার আর একটি বিশেষত্ব হলো উপসম্পাদকীয়। অনেক জাতীয় পত্রিকা থেকে করতোয়ার উপসম্পাদকীয় অনেক বেশী শক্তিশালী ও তথ্য নির্ভর। অনেক পন্ডিত ব্যক্তিরা করতোয়ায় উপসম্পাদকীয়তে লেখে থাকে। তথ্য নির্ভর এই সকল উপসম্পাদকীয় অনেক জ্ঞানী-গুনি লোকজন পড়ে থাকে।

অফিসে আছে একঝাঁক প্রবীণ নবীন সাংবাদিক, তাঁদের সুনিপুণ শব্দ বিন্যাসে পত্রিকার খবরগুলো হয়ে উঠে আরো বেশী প্রাণবন্ত ও হৃদয়গ্রাহী। প্রায় তিন শতাধিক মফস্বল সাংবাদিকগণ নানা প্রতিকূলতার মাঝে পাঠকের জন্য তাজা খবর পত্রিকায় পাঠিয়ে থাকে, যা পরের দিন ঝকঝকে কাগজের কারাগারে বাঁধা হয়ে পরের দিন পাঠকের দোরগোড়ায় পৌঁছে যায়।

মফস্বল সাংবাদিকগণ পত্রিকার পাঠক প্রিয়তার জন্য ব্যাপক অবদান রাখে। করতোয়ার আরো একটি বিশেষত্ব হলো জাতীয় খবরের পাশাপাশি স্থানীয় খবর গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার করে। করতোয়ার দেখাদেখি অনেক জাতীয় পত্রিকা এখন স্থানীয় খবরকে গুরুত্বের সঙ্গে পরিবেশন করে। আমি মনে করি এই ধারার পথ প্রদর্শক দৈনিক করতোয়া।

একবার প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে সম্পাদক মহোদয়ের বাণীতে লিখেছিলেন, “শিকড় থেকে শিখরে”। আসলেই তাই, বাংলাদেশের কোন পত্রিকা কোন মফস্বল শহর থেকে প্রকাশ করে রাজধানী শহরে গিয়ে প্রকাশ করে জাতীয় পত্রিকার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টিকে আছে কিনা তা সন্দেহ আছে, কিন্তু করতোয়া তা পেরেছে, এটাই করতোয়ার সাফল্য।  করতোয়া পথ না হারিয়ে তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে যাক পাঠক হিসাবে এটাই আমাদের চাওয়া।


লেখক : আইনজীবী, বগুড়া

01711-197719



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS