ভিডিও

দেশের ইলিশ বিদেশে আর নয়

প্রকাশিত: আগস্ট ১৬, ২০২৪, ১১:১৩ রাত
আপডেট: আগস্ট ১৭, ২০২৪, ০১:০৪ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

মাছের রাজা ইলিশ। বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ও ইলিশ। যদি বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে সুস্বাদু মাছ কোনটি? সে প্রশ্নের সহজ জবাব ইলিশ। বাঙালির রসনা এবং আত্মপরিচয়ের অনুষঙ্গ যে ইলিশ মাছ তা এখন আন্তর্জাতিকভাবেও বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআইপণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ ইলিশ খেতে পারে না। কেনার পয়সা নেই।

অতি উচ্চ মূল্যের কারণে ইলিশের কথা কেউ ভাবতেও পারে না। দেশের ইলিশ সব চলে যেত ভারতে। ওখানে আমাদের ইলিশ বিক্রি হয় কেজি ৬০০-৭০০ টাকায়। অথচ আমাদের ইলিশ আমাদের দেশে বিক্রি হয় ১২০০-১৮০০ টাকা কেজি। এ নিয়ে মানুষের ক্ষোভ দু:খের অন্ত ছিল না। তবে এবার বোধ হয় সে দু:খের কাহিনীর অবসান হতে যাচ্ছে নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের বদৌলতে। একটা সুসংবাদ পেলেন এদেশের মানুষ।

দেশের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে তারপর ইলিশ মাছ বিদেশে রপ্তানি করা হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। আমরা উপদেষ্টার এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। ভারতের সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভি বলছে, বাংলাদেশ থেকে আমদানি হওয়া ইলিশের সিংহভাগই পেয়ে থাকে পশ্চিমবঙ্গে। এ ছাড়া দুর্গাপূজাকে ঘিরে সুস্বাদু এই মাছের চাহিদা আরও বেড়ে যায়।

যদিও ইলিশ মাছটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে পাওয়া যায়। তবে বাংলাদেশের ইলিশের স্বাদ অতুলনীয়। ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বিখ্যাত ইলিশ কূটনীতির অংশ হিসাবে আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ভারতে বার্ষিক ইলিশ রপ্তানির সুযোগ দিতেন। ২০১২ সাল থেকে অন্যান্য দেশে রপ্তানি বন্ধ থাকলেও ভারতে মাছ বিক্রির অনুমতি দিতো হাসিনা সরকার। এনডিটিভি আরও বলছে, পশ্চিমবঙ্গের পরে ইলিশ সরবরাহের এই সংকটে সবচেয়ে বেশি সমস্যার মুখে পড়েছে ত্রিপুরা।

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এই রাজ্যটি পদ্মার ইলিশের অন্যতম প্রধান ক্রেতা এবং সেখানে সুস্বাদু এই খাবারের সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। দেশে চলছে ইলিশের মৌসুম। বিগত কয়েক বছর ধরে এই মৌসুমেও বাংলাদেশ থেকে ভারতে ইলিশ উপহার যাওয়াটা ছিল অনেকটাই নিশ্চিত। তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অবস্থার বদল হয়েছে। অন্য বছরগুলোতে ইলিশের মৌসুমে কলকাতার বাজার পদ্মার ইলিশে ভরপুর থাকলেও এবারের চিত্র ভিন্ন। এবার সেখানে ইলিশের দেখা পাওয়া দুস্কর হয়েছে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে পরিবর্তন আসায় ভারতে ইলিশের রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় সেখানে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ইলিশের দাম। গত ১৩ আগস্ট ভারতীয় গণমাধ্যম এনটিভি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করেছে। এক বিক্রেতা বললেন, ‘বাংলাদেশি ইলিশের সরবরাহে আকস্মিক পতন ঘটেছে, তাই দাম বাড়বে। আমরা ইতিমধ্যেই এক কেজি ইলিশ ১৮০০ রুপিতে বিক্রি করছি, যা অবৈধভাবে আসছে।’ বাংলাদেশে বৈষম্য বিরোধী ব্যাপক ছাত্র আন্দোলনের মুখে পতন ঘটে স্বৈরশাসনের। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা আশ্রয় নেয় ভারতে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। সরকার এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা এখনও রাজপথে। তারা দেশের মানুষকে আগে ইলিশ দিতে চান। সে জন্য আগেই ভারতে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ রাখা হয়েছে। আমরা মনে করি, সরকারের এ অভিপ্রায় বাংলাদেশের জনগণের জন্য কল্যাণকর।

কারণ এত স্বাদের ইলিশ এদেশে বিস্বাদ সাধারণ মানুষের কাছে। কারণ ইলিশ এখন যেমন দুষ্প্রাপ্য তেমনি দুর্মূল্য। দুষ্প্রাপ্য এবং দুর্মূল্য হওয়ার কারণও সবার কাছে স্পষ্ট। পুলিশ মাত্রাতিরিক্ত রপ্তানি হচ্ছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। ওখানকার মানুষ ইলিশ কিনে আমাদের চেয়ে কম দামে। ইলিশ নিয়ে সাধারণ মানুষের আক্ষেপ আমার উপলব্ধি করি। অথচ ইলিশ উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ। সুস্বাদু এই মাছ উৎপাদনে শীর্ষ অবস্থান আরও মজবুত করেছে বাংলাদেশ। বর্তমানে বিশ্বের মোট ইলিশের ৮৬ শতাংশই উৎপাদিত হচ্ছে বাংলাদেশে।

আমরা প্রস্তাব রাখতে চাই, আগে দেশের মানুষকে সন্তুষ্ট করা উচিত। তারপর রপ্তানি। যা মাছ ধরা পড়ে এবং বড় ইলিশ রপ্তানি করে দেওয়া হবে, তা কি মানা যায়? নতুন সরকার ভারতে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করায় জনগণ আনন্দিত, উৎফুল্ল। তারা মনে করেন সরকার প্রশংসনীয় পদক্ষেপ নিয়েছেন।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS