ভিডিও

মসৃণ হোক সরকারের পথচলা

অধ্যাপক ড. মো: গোলাম ছারোয়ার

প্রকাশিত: আগস্ট ১৭, ২০২৪, ০৭:০২ বিকাল
আপডেট: আগস্ট ১৭, ২০২৪, ০৭:০২ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

অনেক ত্যাগে অর্জিত এই বিজয়ের সুফল আমরা অবশ্যই ঘরে তুলবো। এই প্রত্যাশা পূরণ করতে দায়িত্ব প্রাপ্ত উপদেষ্টা মন্ডলী প্রথম থেকেই প্রাণপণে চেষ্টা করে চলছেন। অতিঅল্প ক‘জন উপদেষ্টার সাথে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ সমানভাবে একই চিন্তা ভাবনা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

অনেক দিনের রেজিম। অতি গভীরে অরাজকতার শিকড় বিস্তৃত। এর মূলোৎপাটন বিশাল এক কর্মযজ্ঞ। কারণ সংস্কার কর্ম যেমন কঠিন তেমন প্রতিবন্ধকতায় পরিপূর্ণ। বন্ধুরতার সাথে রাস্তা অনেক পিছিল। একে তো ভেঙ্গে পড়া অর্থনীতি সাথে রয়েছে সর্বগ্রাসী দুর্নীতির মনোষ্টারের ছাপ।

ভাবতেই অবাক লাগছে মানবতা আর মানবিক মূল্যবোধ কোথায় গিয়ে পৌঁছালে এমন ভয়ঙ্কর আয়নাঘর আর বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড করানো সম্ভব। এক কথায় যদি বলি বলতে হয় ‘সারা  অঙ্গে ব্যথা ঔষধ দিবো কোথা’।

সু-মেকার হতে সচিবালয় প্রতিটি জায়গাতেই অপরিসীম অনিয়ম আর দুর্নীতিতে কোনায় কোনায় পূর্ণ। দেশ এবং বিদেশে সকল স্থানের মানুষ স্তম্ভিত ও বিস্মিত। একজন পিয়ন যখন চারশ কোটি টাকার মালিক হয় তখন বুঝতে হবে এর শিকড় কত গভীরে গ্রথিত। প্রতিটি নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দাম সকল খেটে খাওয়া মানুষের সম্পূর্ণরূপে সাধ্যের বাহিরে।

তাইতো বিপুল সংখ্যক মানুষ গরুর মাংস একমাত্র কোরবানির মাংস ছাড়া খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। মনের কোনায় অবিরাম সাধ থাকার পরও দাম সাধ্যের বাহিরে থাকার কারণে ইলিশ মাছ মানুষের শুধুই স্বপ্নেই পরিণত হয়েছিল। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দাম বাড়ার পিছনে পরাজিত স্বৈরশাসকের পালিত বিভিন্ন সংগঠনের চাঁদাবাজি এবং অপরিসীম অর্থলোভী সিন্ডিকেটের অর্থলিপ্সাই মূলত দায়ী।

এই ক্ষেত্রে জনসাধারণের মধ্যে স্বস্তির নি:শ্বাস নিয়ে আসতে হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গের চরম বেগ পেতে হবে। তবে সাধারণ জনগণের আকাঙ্খা এখানে অবশ্যই সুবাতাস বইবে। সেই ক্ষেত্রে যারা এই অবৈধ প্রক্রিয়ায় সুবিধাভোগী ছিল তারা অবশ্যই অপশক্তি প্রয়োগের চেষ্টা করবে। এদেরকে কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। দেশের র্নিবাহী বিভাগ বা প্রশাসন বিভাগ, বিচার বিভাগ বা আদালত এবং আইন বিভাগ বা সংসদ যেখানে আকন্ঠ নিমজ্জিত ছিল এক তাঁবেদারের কৃতদাসের মত আদেশ পালনে ব্যস্ত।

বৈধ অবৈধের মাপকাঠিতে কোন কিছুই বিবেচিত হত না সেই তাঁবেদারের বিবেচনায়। এমনকি সর্বশ্রেষ্ঠ মানব সম্পদও। সবাই একজনের আদেশ তামিলের জন্যই ছিল আজ্ঞাবহ। সকল প্রচার মাধ্যমেও তাদের নিজেদের মতামত প্রকাশ ও প্রচার করতে বারবার হোচট খেয়েছেন।

দেশের বুদ্ধিজীবী সমাজ যেন হয়ে পড়েছিল এক অজানা আশঙ্কার আবরণে বাকরুদ্ধ। কোন এক অজানা শক্তি যেন তাদের সকল বুদ্ধিবৃত্তিকে আবরনে ঢেকে দিয়েছিল। সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো‘ বলা তাদের জন্য নিতান্তই এক দুরূহ ব্যাপারে পরিণত হয়েছিল। স্বাভাবিক সভা সমাবেশ এবং মতামত প্রদানের ক্ষেত্রে তাঁদের অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়েছে।

মুক্ত চিন্তা আর বুদ্ধির প্রকাশ যেন এক অস্পর্শ জিনেসে পরিনত হয়েছিল। এই অবরুদ্ধ পরিবেশের মধ্যেই কিভাবে সৃজনশীলতার আশা করা যায়। বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়েছে বহুদিন। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যেভাবে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, ট্রেজারার, প্রোক্টর ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ও সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ স্বেচ্ছায় রিজাইন করছেন, তাতে এটা বুঝতে এতটুকু কি বাকি থাকে তাঁদের রাজনৈতিক লেজুর বৃত্তির কঠিন শৃঙ্খলের কথা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সকল গৌরবান্বিত দায়িত্বপূর্ণ পদগুলি শুধুই নগ্ন ও সস্তা রাজনৈতিক বিবেচনায় পদায়ন কতটা ভয়ঙ্কর ও ক্ষতিকারক তা এখন সূর্যের আলোর মত পরিষ্কার। বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক ব্যক্তিই জাতি, সমাজ ও বিশে^র জন্য এক অনন্য সম্পদ। কিন্তু তারা অবশ্যই যথাযথ জ্ঞানে সমৃদ্ধ হবেন। শুধুই রাজনৈতিক বিবেচনায় এই প্রতিষ্ঠানগুলি চরমভাবে কলুষিত হয়েছে।

কলঙ্কিত হয়েছে সমাজ ও জাতি। এই করুণ পরিণতি হতে জাতিকে উদ্ধার করতে হলে সংশ্লিষ্ট সকলকেই অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হবে। স্বাস্থ্য ও জনস্বাস্থ্য একটি অতিগুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই অংশের রুন্ধ্রে রন্ধ্রে অনিয়ম বিভিন্ন সময় আমাদের চোখের সামনে উঠে এসেছে। তৎকালীন সময়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গের কর্মকান্ড আমাদের আশ্বস্ত না করে বিস্মিত করেছে।

জনসাধারণ সেবার পরিবর্তে পেয়েছেন লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে আইন সহায়তা চাওয়া যেন ছিল এক অমোঘ কদর্যপুন আবেদন। আইন প্রয়োগকারীগণকে মানুষ হৃদয়ে স্থান না দিয়ে তাদের এক ভয়ঙ্কর মুর্তির আকার মনে করত। এই বাহিনী সাধারণ মানুষের বিপরীতে শক্তিশালী ক্ষমতাবান বা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ ব্যক্তিবর্গের দাস বাহিনীতে পরিণত হয়েছিল। ন্যায় অন্যায়, সত্য মিথ্যার কোন তোয়াক্কাই করত না তারা।

জাতীয় নির্বাচন হতে শুরু করে সকল ধরনের নির্বাচনে একই রকম অনিয়ম ও জবরদস্তিই যেন স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়েছিল। জনগণের যে অধিকার তা শুধু ভুলুন্ঠিতই হয় নাই হয়েছে পদদলিত। দেশ পড়েছিল এক অজানা আশঙ্কার অশুভ চাদরে ঢাকা। দীর্ঘ দিন দলন পীড়নের শিকার সাধারণ জনগণ যেন পরিণত হয়েছিল এক নিথর বস্তুতে। প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে ফেলেছিল।

যে দানবের আম্ফালন এমন পর্যায়ে উঠেছিল তাকে এত সহজেই কি দমন করে আশার প্রদীপ জ্বালানো যাবে। হ্যাঁ এ কথাটিই আমি বলতে চাচ্ছি। এই পর্বতসম কঠিন কাজটি করার জন্যই মাননীয় উপদেষ্টামন্ডলী শপথ নিয়েছেন।

বাঙালি জাতি অধীর আগ্রহে চেয়ে আছে তাদের প্রতি। তাই দায়িত্ব তাদের অনেক। আকাশচুম্বি ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করে পর্বতসম দায়িত্ব প্রদান করেছেন সাধারণ জনগণ। সেই পথ ধরেই একটি সম্ভাবনাময় উদ্দীপ্ত সুর্য উদিত হবে এই সুজলা সফলা প্রিয়-মাতৃভূমির ভাগ্যাকাশে। বাংলার মানুষ সত্যিই অনেক আবেগপ্রবণ। তারা যেমন ভালোবাসতে পারে, যেমন অশ্রুসিক্ত হতে পারে আবার তেমনিভাবেই নিজের কাঙ্খিত স্বাধীনতার বিজয়ও অর্জন করতে পারে।

মাননীয় উপদেষ্টা মহোদয়দের প্রতিটি সিদ্ধান্তই বিচক্ষণতার দাবি রাখে। প্রতিটি পদক্ষেপই হবে সাধারণ জনগণের পক্ষে। প্রতিটি আচরনেই প্রতিফলিত হবে সাধারণ জনগণের যৌক্তিক ইচ্ছা ও অধিকারের। পূর্বের স্বৈরাচারি সরকারের প্রতিটি পদক্ষেপকে সাধারণ ছাত্র জনতা যেভাবে প্রতিহত করেছে। একইভাবে যেন এর কোন পুনরাবৃত্তি না হয় তার প্রতি সজাগ দৃষ্টি নিশ্চয় তাঁরা রাখবেন।

আমরা সবাই জানি দলন, পীড়ন আর ক্ষমতার দাম্ভিকতা প্রদর্শন করে গায়ের জোরে কোন কিছুই স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত করা যায় না। এমন কিছু ঘটলে ক্ষমতা চলে যাওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই তা ভূলুন্ঠিত হয়ে যায়। তাই শত শত কোটি টাকা খরচ করেও কারো নামে স্থাপনা প্রতিষ্ঠিত করে তা অমর করা যায় না।

বরং জনগণের আশা আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে ভালোবাসার মাধ্যমে মানুষের মনে অমরত্ব লাভ করা যায়। এই বিষয়টি দায়িত্বপ্রাপ্তরা অনুগ্রহ করে বিবেচনায় রাখতে পারলেই আমাদের প্রভুত মঙ্গল সাধিত হবে। পরিশেষে কাজী নজরুল ইসলামের মোনাজাত কবিতার লাইন দিয়ে শেষ করছি।

“ক্ষুদ্র করোনা হে প্রভু আমার/ হৃদয়ের পরিসর,/যেন  সমঠাঁই পায়/ শত্রু-মিত্র পর।/নিন্দা না করি অন্য কারো /অন্যের সুখে সুখ পাই আরো,/কাঁদি তারি তরে অশেষ দু:খী/ক্ষুদ্র আত্মা যার”


লেখক : অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
কীটতত্ত্ব বিভাগ
জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান (নিপসম)
মহাখালী, ঢাকা।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS