ভিডিও

ব্যাংক খাতে হরিলুট

প্রকাশিত: আগস্ট ১৮, ২০২৪, ০৫:৩৭ বিকাল
আপডেট: আগস্ট ১৮, ২০২৪, ০৫:৩৭ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

বর্তমান বিশ্বে ব্যাংকিং খাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঙ্গত কারণেই এই খাতের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা জরুরি। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, নানা সময়ে ব্যাংক সংক্রান্ত অনিয়ম-অভিযোগ আসে, ফলে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ব্যাংকিং খাতের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে যথাযথ উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।

ব্যাংকিং খাতের লুটপাট যেন কিছুতেই থামছে না। প্রতিদিনই কোনো না কোনো ব্যাংকের বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির খবর প্রকাশ পাচ্ছে গণমাধ্যমে। দেশে এখন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ছড়াছড়ি। ফলে এ খাতে বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ, লুটপাট  ও দুর্নীতির ঘটনাও বেড়েছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালকদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অভিযোগটি হলো, ব্যাংক পরিচালকরা এখন নিজের ব্যাংক থেকে ঋণ না নিয়ে অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছেন এবং যোগসাজশের মাধ্যমে ভাগাভাগি করে নেয়া অধিকাংশ ঋণের টাকা আর ফেরত দিচ্ছেন না। এর ফলে মন্দ ঋণের পরিমাণ বাড়ছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য একটি বড় ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে।

গণমাধ্যমে প্রায় প্রতিদিনই খবর বের হয় ব্যাংকগুলোর হরিলুটের কাহিনী। এই ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ রাজনৈতিক বিবেচনায় গঠিত হওয়ায় প্রভাব খাটিয়ে ঋণ অনুমোদন বিতরণ ও নিয়োগ পদোন্নতিতে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ভুয়া, অস্তিতহীন, নামসর্বস্ব ও খেলাপি প্রতিষ্ঠানের নামে শত শত কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন দিয়ে ব্যাংকের সম্পদ খুইয়ে চলেছে পরিচালনা পরিষদ।

এ ছাড়া তাদের সরাসরি নির্দেশে অনিয়ম ও অনৈতিক কার্যক্রমে বাধ্য হচ্ছেন কর্মকর্তারাও। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ২০০৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ব্যাংক খাতে ৯২ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ আত্মসাৎ  হয়েছে বলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ বা সিপিডি জানিয়েছে।

গত ১৫ বছরে ব্যাংক খাতে ২৪টি বড় কেলেঙ্কারির মাধ্যমে এ অর্থ হাতিয়ে নেয়া হয়েছে বলে সংস্থাটি জানিয়েছে। আত্মসাৎ হওয়া অর্থের পরিমাণ চলতি অর্থ বছরে মানে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জাতীয় বাজেটের ১২ শতাংশ এবং দেশের মোট জিডিপির দুই শতাংশের সমান। গত ১৬ বছরে বিগত শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে দেশের আর্থিক খাতের অনিয়ম এবং অব্যবস্থাপনা নিয়ে সোমবার এক গবেষণা পত্র প্রকাশ করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ সিপিডি।

দেশের কিছু ব্যাংক ইতিমধ্যে ‘মৃতপ্রায়’ আর অনেক ব্যাংকের ‘ক্লিনিক্যাল ডেড’ হয়েছে বলে মনে করছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। এ জন্য এসব ব্যাংকে ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা পর্ষদ বদলাতে হবে। সংস্কার করতে হবে পুরোটা।

আমরা বলতে চাই, যখন সিপিডি এটা মন্তব্য করেছে যে, বর্তমানে ব্যাংক খাত বৈকল্য অবস্থায় রয়েছে। সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক বলেছেন অর্থনীতির চারখাতের মধ্যে ব্যাংক খাত বৈকল্য দশায় পড়েছে। মূল্যস্ফীতির পাগলা ঘোড়া ছুটে চলা অব্যাহত রয়েছে, বহি:খাত পঙ্গুত্বের ভেতরে পড়ছে আর শ্রম খাতে অন্ধত্ব বা স্থবিরতা বিরাজ করছে।

ফলে এই বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া এবং পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। একই সঙ্গে যে কোনো ধরনের অনিয়ম বা অব্যবস্থাপনার চিত্র পরিলক্ষিত হলে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। বস্তুত দুর্নীতি বন্ধে ব্যাংকিং খাতে স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।

শৃঙ্খলা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা গেলে এ খাতে অপরাধ করার অথবা অপরাধ করে পার পাওয়ার সুযোগ কমে আসবে। বন্ধ হবে অনৈতিক চর্চা। আর বড় বড় ব্যাংক লুন্ঠনকারীদের পাকড়াও করে বিচারের সম্মুখিন করতে হবে। বিগত সরকারের বিচারহীনতার সংস্কৃতি -এই লুটপাটকে সাহস যুগিয়েছে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS