ভিডিও

বিদ্যুৎ খাতে বিপুল লোকসান

প্রকাশিত: আগস্ট ১৯, ২০২৪, ০৫:৪১ বিকাল
আপডেট: আগস্ট ১৯, ২০২৪, ০৫:৪১ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের উৎপাদন বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, বর্তমানে দেশের পাওয়ার জেনারেশন, বিপণন ও প্রাথমিক জ্বালানি প্রাপ্যতা যে অবস্থায় রয়েছে তাতে এই পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব নয়। চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন বাড়ানো সময় সাপেক্ষ, ফলে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে।

‘যারা কুইক রেন্টাল নিয়ে বেশি কথা বলবে তাদের বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়া হবে’- এমন হুমকি দিয়ে সদ্য পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার শাসনামলে ১৫ বছর এ খাতে লুটপাটের সব বড় ফাঁদ উন্মুক্ত করে দেন।

পাশাপাশি ক্যাপাসিটি চার্জের নামে গুটি কয়েক কোম্পানির হাতে হাজার হাজার কোটি টাকা তুলে নেওয়ার পথ প্রশস্ত করেন। যার দায়ভার এখন শুধু বিদ্যুৎ বিভাগই নয়, সারা দেশের মানুষকে বহন করতে হচ্ছে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের বিদ্যুৎ খাত ‘খোলা’ হয়ে গেছে। ভেতরে কিছু নেই।

ক্যাবের পক্ষ থেকে বার বার সতর্ক করা হলেও আমলে নেওয়া হয়নি। এ মুহূর্তে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ওপর নজর দেওয়া জরুরি, তা না হলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। আর জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত যদি ধসে যায় তাহলে গোটা অর্থনীতি বালুর বাঁধের মতো তছনছ হয়ে যাবে।

লোডশেডিং জনজীবনে কতটা বিরূপ প্রভাব ফেলে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। একদিকে তীব্র গরমে জনজীবনে নাভিশ্বাস। এর সঙ্গে আবার যদি লোডশেডিং তীব্র হয়-তবে তা কতটা দুর্ভোগ ও আশঙ্কার হতে পারে সেটি আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই।

পত্র-পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, বিপিডিবি সূত্র অনুযায়ী, জ্বালানি সংকট ছাড়াও বন্ধ থাকা বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ন্যুনতম বকেয়া পরিশোধ করে পুনরায় চালু করা নিয়ে জটিলতা রয়েছে। এ ছাড়াও এসব কেন্দ্র চালুর জন্য জ্বালানির জোগান ও তার অর্থ প্রাপ্তি সময় সাপেক্ষ।

অন্যদিকে ট্রান্সমিশন দুর্বলতার কারণে গড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি হচ্ছে। কারিগরি জটিলতায় বন্ধ রয়েছে সরকারি বেশ কিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্র। তাই রাতারাতি বিদ্যুৎ ঘাটতি পূরণের সুযোগ কম। 
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্য বলছে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল ৩২ হাজার কোটি টাকা যার বেশির ভাগই গেছে এসব রেন্টাল বা কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালন ব্যয়।

এর আগের অর্থ বছরে অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থ বছরে এর পরিমাণ ছিল ২৮ হাজার কোটি টাকা এবং ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ছিল ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। টাকার অবমূল্যায়নসহ নানা কারণে মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে প্রায় ছয় গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে ক্যাপাসিটি চার্জের পরিমাণ। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, দেশে স্থাপিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র গুলোর বর্তমান মোট উৎপাদন ক্ষমতা ২৯ হাজার ৭২৭ মেগাওয়াট এবং এর মধ্যে গ্রিড ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ২৬ হাজার ৫০৪ মেগাওয়াট।

চাহিদা আছে সাড়ে ১৩ হাজার থেকে ১৭ হাজার মেগাওয়াট এবং এর বিপরীতে উৎপাদন করা হচ্ছে ১৩ হাজার থেকে ১৫ হাজার মেগাওয়াট। জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে গ্রীষ্ণকালে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদার বিপরীতে ২০২৩ সালের ১৯ এপ্রিল সর্বোচ্চ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার ৬৪৮ মেগাওয়াট। শীতকালে বিদ্যুতের চাহিদা কমে যাওয়ায় তখন বিদ্যুতের সর্বোচ্চ উৎপাদন ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার মেগাওয়াটে নেমে আসে।

বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির বেশির ভাগ অর্থই এসব বেসরকারি রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর ক্যাপাসিটি চার্জ মেটাতে ব্যয় করা হচ্ছে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও তাদের উৎপাদন ক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে একটি নির্দিষ্ট ফি কেন্দ্রগুলোকে দিতে হয়, যার পুরোটাই সরকারকে বহন করতে হয়। এই পরিমাণ অর্থ বিদ্যুতের অন্য কোনো উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে ব্যবহার হলে তা দেশের জন্য উপকার হতো বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো আজ এ খাতের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা মনে করি, অপ্রয়োজনে এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু রেখে এগুলোর পেছনে মোটা অংকের ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়ার কোনো যুক্তি নেই। ভর্তুকি বন্ধ কিংবা গ্রাহক পর্যায়ে মূল্যবৃদ্ধি নয়, বরং লোকসান এড়াতে এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্র অবিলম্বে বন্ধ করা দরকার।

পাশাপাশি বিদ্যুৎ খাতে অযৌক্তিক উন্নয়ন প্রকল্প হাতে না নিয়ে বরং দুর্নীতি, সিস্টেম লস বন্ধ করে সরবরাহের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে নজর দেওয়া দরকার। ভুলে গেলে চলবে না, সরকারি সেবাখাতে ভর্তুকি দেওয়া হয় জনস্বার্থে। কারণ জনগণের জন্যই সরকার, জনগণের জন্যই রাষ্ট্র। লোকসান কমিয়ে বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে- এটাই প্রত্যাশা।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS