ভিডিও

সরকার প্রধানের সংস্কারের প্রতিশ্রুতি

প্রকাশিত: আগস্ট ২১, ২০২৪, ০৮:০২ রাত
আপডেট: আগস্ট ২১, ২০২৪, ০৮:০২ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

আওয়ামী স্বৈরশাসনামলে দেশের রাজনীতিতে এক ধরনের স্থবিরতা নেমে এসেছিল। কার্যত একদলীয় শাসন কায়েম করে বিরোধী মত দমনে গণমামলা, গণগ্রেফতার ও গুম-খুনের স্বর্গরাজ্য করে তোলা হয়েছিল দেশকে। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মাধ্যমে প্রচার স্বাধীনতা হরণ করে দলীয় প্রচার মাধ্যমে পরিণত করা হয়েছিল সংবাদ মাধ্যমকে। অর্থনৈতিকভাবে পর্যুদস্ত হয়েছে দেশ।

দুর্নীতি-দখলদারির মাধ্যমে সমাজ কাঠামোর সর্বত্র তৈরি করা হয়েছে ক্ষত। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের আকাশ ছোঁয়া দামে নাভিশ্বাস উঠেছে জনজীবনে। এ অবস্থায় মাত্র এগার দিন আগে গঠন হয়েছে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

শুরু থেকেই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীসহ সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে যে বিষয়টি বারবার আলোচনায় উঠে এসেছে, তা হচ্ছে রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কার। ইতোমধ্যে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় বা স্বায়ত্ব শাসিত প্রতিষ্ঠানের ভেতরে দীর্ঘদিনের অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনার তথ্য সামনে আসছে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। এ অবস্থায় গত ৮ আগস্ট নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নিয়েছে। নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা অনেক।

কেউ কেউ বলছেন, আইন-শৃঙ্খলার উন্নয়ন ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে হবে সবার আগে। আবার অনেকেই বলছেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আর্থিক, রাজনৈতিক, প্রশাসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। এই সংস্কারগুলো করার পরই একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান করে দেশে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রবর্তন করে তারপর নির্বাচনের কথা আসতে পারে।

রোববার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বাংলাদেশে কর্মরত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানদের ব্রিফ করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

ব্রিফে তিনি বলেছেন, শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনে দেশের সব প্রতিষ্ঠান প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় সংস্কারের পরই দেশে নির্বাচনের আয়োজন করা হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। কাজগুলো যত দ্রুত সম্ভব করা হবে জানিয়ে তিনি বলেছেন, নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন,সংস্কারের আওতায় আসবে বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, বেসামরিক প্রশাসন, নিরাপত্তা বাহিনী ও গণমাধ্যম ইত্যাদি। তবে তিনি এও বলেন, এ মুহূর্তে অগ্রাধিকার হলো আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক রাখা এবং অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা।

ড. ইউনূস তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমি সেই সমস্ত বীর ছাত্র এবং নিরীহ মানুষদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই যারা সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করেছেন। আমাদের সাম্প্রতিক স্মৃতিতে অন্য কোনো দেশের ছাত্রদের তাদের গণতান্ত্রিক আকাক্সক্ষা প্রকাশের জন্য এত মূল্য দিতে হয়নি: যেখানে একটি বৈষম্যমূক্ত, ন্যায়সঙ্গত এবং পরিবেশবান্ধব একটি দেশের স্বপ্ন দেখতে হয়েছে যেখানে প্রতিটি নাগরিকের মানবাধিকার সম্পূর্ণরূপে সুরক্ষিত থাকবে।

প্রকৃতপক্ষে তিনি ক্ষমতা গ্রহণের আগে দেশের অবস্থা কী ছিল এবং এখন কী করণীয়, সেসব কথা বলেছেন, যথার্থভাবেই। বলার অপেক্ষা রাখে না, গত ১৬ বছরের শাসন ছিল চরম স্বৈরতান্ত্রিক এবং সরকার ছিল দুষ্ট চক্র পরিবেষ্টিত।

জনগণের সমর্থনের তোয়াক্কা না করে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ভিন্নমতকে যেভাবে দমন করা হয়েছে। তা এক কথায় অবিশ্বাস্য। পরপর তিনটি প্রহসনের নির্বাচন অনুষ্ঠান করে এ সরকার নিজেকে গণতান্ত্রিক দাবি করেছে। দিনের ভোট রাতে করে নির্বাচনকে তামাশায় পরিণত করেছিল। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যাংক লুট থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে হরিলুট চালিয়েছে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী এবং তার সহচররা।

দেশে গণতন্ত্রের চর্চা ও জবাবদিহিতামূলক শাসন কায়েমে নির্বাচনের ভূমিকা অপরিসীম। তবে নির্বাচনের আগে সংস্কারের কাজগুলি অবশ্যই করা প্রয়োজন। তাতে যা সময় লাগে তা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দিতে হবে। আমাদেরও সরকারকে সময় দিতে হবে।

উপর থেকে নীচ সমাজের সর্বত্র ক্ষত-বিক্ষত করে দিয়ে গেছে পতিত স্বৈরাচারী সরকার। রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত হবে সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা। আমরা নিয়ম-নীতি, শৃঙ্খলাপূর্ণ একটি দেশ দেখতে চাই- তার জন্য যে সময় লাগে লাগুক। তবুও জঞ্জাল পরিষ্কার হোক।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS