ভিডিও

বন্যায় বিপর্যস্ত জনজীবন

প্রকাশিত: আগস্ট ২৫, ২০২৪, ০৫:৩৪ বিকাল
আপডেট: আগস্ট ২৫, ২০২৪, ০৮:১৭ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

নজিরবিহীন বন্যায় দেশের ১১ জেলায় চরম মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। গত মঙ্গলবার থেকে উজান থেকে নেমে আসা পানি এবং ত্রিপুরার জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্লুইসগেটসহ আরও অন্যান্য বাঁধ খুলে দেওয়ায় স্মরণকালের ভয়াবহ এই বন্যায় বানভাসি লাখ লাখ মানুষের বাঁচার লড়াই-ই এখন মুখ্য। হু হু করে পানি এসে বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়ার পর বন্যা কবলিত ফেনী সদরসহ উপজেলার অন্যান্য উপজেলা বন্যা প্লাবিত হয়েছে। 
স্মরণকালের  এ ভয়াবহ বন্যায় প্রাণহানির ঘটনা যেমন ঘটছে, তেমনি মানুষ মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। বাঁচার আকুতি, জীবন-জীবিকা বিপন্ন ও সার্বিকভাবে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সতর্কতা না দিয়ে বাঁধ খুলে ভারত অমানবিকতার পরিচয় দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাসহ বিশিষ্টজনরা।

বাঁধ খুলে দেওয়ার খবরে ভারতের আগ্রাসনের প্রতিবাদে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ-সমাবেশ হচ্ছে। তথ্য মতে, বন্যা হয়েছে দেশের ১২টি জেলায়। প্রবল স্রোতের কারণে বন্যর পানিতে ডুবে, পাহাড়ে ধসে ও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে গত সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অন্তত ১৩ জন মারা গেছেন। দু’জন নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টিও জানা গেছে।

দুর্যোগ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্র্াহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও কক্সবাজারের ৭৭ উপজেলার ৫৮৪টি ইউনিয়ন বা পৌরসভা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আকস্মিক এই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন জেলাগুলোর ৪৪ লাখ ৯৭ হাজার ৫৩৫ জন। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৮ লাখ ৮৭ হাজার ৬২৯ পরিবার।

এর মধ্যে ফেনী জেলার পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক। জেলা প্রশাসক সূত্রমতে, ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী ও পরশুরাম এ তিন উপজেলার পুরোটাই বন্যা কবলিত। সদর ও দাগনভুঞা উপজেলার ৮০ শতাংশ এলাকার মানুষ পানিবন্দি। সোনাগাজী উপজেলার সব ইউনিয়নে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ দুর্ভোগে আছে।

এ ছাড়া বিভিন্ন গ্রামে প্রায় এক লাখ মানুষ এখনো পানিবন্দি অবস্থায় আছে। বন্যা কবলিত প্রায় সব এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। বেশির ভাগ মোবাইল টাওয়ার অকেজো হয়ে পড়ায় যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। দুর্গত এলাকায় সুপেয় পানির সংকট তীব্র হচ্ছে।

আমরা বলতে চাই, যখন বন্যার কারণে লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পানিবন্দি গ্রামগুলোতে দেখা দিয়েছে খাবার পানির সংকট। রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় ও পানিতে তলিয়ে থাকায় চলাচলেরও কোনো উপায় নেই। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে কাজ করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ সহায়তাসহ পুনর্বাসনে সংশ্লিষ্টদের কাজ করতে হবে।

আমলে নেওয়া দরকার ফেনীসহ বিভিন্ন স্থানে বন্যার কারণে মানুষ ব্যাপকভাবে অসহায় হয়ে পড়েছে। প্রধান উপদেষ্টা বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে আহবান জানিয়েছেন। এই আহবানে সাড়া দিতে হবে। সাধ্যমতে সবার এগিয়ে আসতে হবে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলায়।

গত ৫০ বছরে দেশে প্রচুর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ তৈরি হলেও রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে কেউ সাফল্যের পরিচয় দিতে পারেনি। এটা এক বড় সমস্যা। সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাব এবং অনিয়ম-দুর্নীতি বোধ করতে না পারাই এর মূল কারণ। নদী দখল ও দূষণমুক্তকরণ, শাসন এবং বাঁধ নির্মাণ সহ সব ব্যবস্থাপনা যদি আমরা সঠিক ও দুর্নীতিমুক্তভাবে করতে পারি, তাহলে বন্যার প্রকোপ হ্রাস পাবে বলে আশা করা যায়।

ভারতের বাঁধগুলো খুলে দেওয়ায় এবারের বন্যা মনুষ্য সৃষ্টি বা রাজনৈতিক বলে পত্র-পত্রিকায় খবর উঠে আসছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সংগঠন ভারতের এই অপকৌশলের বিরুদ্ধে রাজপথে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করছে। অন্তর্বর্তী সরকার কূটনৈতিকভাবে ভারতের সঙ্গে এ ব্যাপারে চাপ প্রয়োগ এবং সংকটের নিস্পত্তি নিয়ে কথা বলতে পারে।

ভারতের সঙ্গে অভিন্ন ৫৪টি নদীর পানিতে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা দাবি জানিয়ে জোর ভূমিকা রাখতে পারে। এ ছাড়া আমরা নিজেরাও আমাদের নদ-নদীগুলো খনন করে পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়াতে পারি। নদী খননের মাধ্যমে উজান থেকে বেয়ে আসা পলি নিয়মিতভাবে ও দ্রুত অপসারণ করা না হলে ভবিষ্যতে দেশে বন্যার প্রকোপ ও ব্যাপ্তি ক্রমেই বাড়তে থাকবে।

এ বিষয়েও দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি আমরা। সার্বিকভাবে প্রশাসন চেষ্টা করছে, সরকার চেষ্টা করছে যাতে মানুষের জীবন, জানমাল, রক্ষা করা যায়- এমনটিও জানিয়েছেন সরকার।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS