ভিডিও

দেশ গঠনে পাড়ি দিতে হবে অনেক পথ

ওসমান গণি

প্রকাশিত: আগস্ট ২৫, ২০২৪, ০৫:৪৪ বিকাল
আপডেট: আগস্ট ২৫, ২০২৪, ০৭:০৬ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

রাজনৈতিকভাবে এখন ক্রান্তিলগ্ন  অতিক্রম করছে বাংলাদেশ। গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে যাওয়ার পর বাংলাদেশ এখন নতুন রাষ্ট্র গঠনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তোপের মুখে পড়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট রাষ্ট্রপতির নিকট পদত্যাগ পত্র জমা দিয়ে  বাংলাদেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে যান।

বর্তমানে তিনি ভারতে অবস্থান করছেন। শেখ হাসিনা ভারতে চলে যাওয়ার পর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ড. ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেন। যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে ছাত্র নেতাদের মধ্যে দুজন রয়েছেন। নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূস বাংলাদেশের এমন এক মুহূর্তে দায়িত্ব নিয়েছেন সেটা বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের সবাই জানে।

দেশ স্বাধীনের পর এদেশের রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন সময় রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন। তাদের শাসনব্যবস্থা সম্বন্ধে দেশের সকল মানুষ জানে। যখনই যে দল ক্ষমতায় এসেছে তখনই তারা নিজেদের স্বার্থ ব্যতীত দেশের মানুষের জন্য তেমন কোনো উল্লেখ্যযোগ্য অবদান রাখতে পারেনি।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা একটানা ১৬ বছর রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন। তার সরকারের মন্ত্রী এমপিদের ও আমলাদের বেপরোয়া দুর্নীতির কারণে দেশের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে যায়। যার কারণে এই সরকারকে বিদায় করানোর উদ্দেশ্যে এদেশের ছাত্র জনতা একত্র হয়ে মাঠে নামে। শেষ পর্যন্ত ছাত্র-জনতার তোপের মুখেই শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন। দেশে গঠিত হয় নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ছাত্র জনতার আন্দোলনের একটাই উদ্দেশ্য দুর্নীতিমুক্ত একটি বাংলাদেশ গঠন করা। 
ড. ইউনুস বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার পর বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া এমপি, মন্ত্রী ও সরকারি আমলাদের গ্রেপ্তার, রদবদল শুরু করেছেন। তিনি দেশের প্রতিটি খাতকে দুর্নীতিমুক্ত করার জন্য বিগত সরকারের আমলে লোকদেরকে সরিয়ে দিচ্ছেন।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশে এতো পরিমাণ দুর্নীতি হয়েছে যে, দেখলে যেকোনো মানুষ তাজ্জব হয়ে যায়। দেশের প্রতিটি খাতে তারা দুর্নীতির আখড়া তৈরি করেছিলেন, আর এসব খাত থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করে বিদেশে পাচার করে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা একেবারে ভঙ্গুর অবস্থায় নিয়ে গেছেন।

তিনি তাঁর দীর্ঘ ১৬ বছরের শাসনামলে দেশের মানুষের কাছ থেকে বিভিন্নভাবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে গেছেন। তাঁর মন্ত্রী, এমপি ও আমলাদের উপর কঠিন কোন বিধিনিষেধ না থাকার কারণে যে যেমনে পারছে লুটপাট করেছে। এখন মন্ত্রী এমপিদের কারাগারে নেওয়ার পর তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হলে তারা বলে আমরা যা করেছি শেখ হাসিনার নির্দেশে করেছি, শেখ হাসিনার দোহাই দিয়ে তারা বাঁচার চেষ্টা করছে।

এখন দেশের মানুষ তাকিয়ে আছে ছাত্রসমাজ ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দিকে। যখনই যে দল ক্ষমতায় যেত তারা দেশের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি, উল্টা দেশের মানুষ তাদের প্রতি বিদ্রোহ প্রকাশ করছে।

এখন দেশের মানুষ তাকিয়ে আছে ড. ইউনূস দেশটাকে শাসন করুক, যাতে করে দেশ দুর্নীতিমুক্ত হয়।  ড. ইউনূস দেশকে দুর্নীতিমুক্ত হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন, তোলার চিন্তা ভাবনা করতে পারেন। দেশের মানুষ জানে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস সারা বিশ্বের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত নোবেলজয়ী একজন ভালো মনের মানুষ।

দেশের বিভিন্ন শ্রেণি- পেশার মানুষ মনে করে ড. ইউনূস যেহেতু একজন ভালো মনের মানুষ সেক্ষেত্রে তার পক্ষে সম্ভব হবে দুর্নীতিমুক্ত একটি সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলা।। ড. ইউনূস বাংলাদেশকে দুর্নীতিমুক্ত হিসেবে গড়ে তুলতে তাকে পাড়ি দিতে হবে অনেক বন্ধুর পথ। এই সময়টুকু দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল- শ্রেণী -পেশার মানুষকে দিতে হবে।

দেশে  রাজনৈতিক দলগুলো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন দেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিকট যে আবেদন করে সেটা সম্ভব হবে না, তার কারণ হলো একটা দেশকে নতুন রূপে গঠন করতে হলে ড. ইউনুসকে পাড়ি দিতে হবে অনেক দূর। একটি দেশকে অর্থনৈতিকভাবে ভগ্নদশা এত অল্প সময়ে সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে গড়ে তোলা সম্ভব না।

দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ মনে করে যেহেতু ড. ইউনূস সারা বিশ্বের একজন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ তার দ্বারাই সম্ভব একটি দেশকে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করে তোলা, দুর্নীতিমুক্ত, বেকারত্ব দূরীকরণে তার একটা বিশাল ভূমিকা বর্তমানে কাজে লাগতে পারে। দেশের মানুষের অনেক দিনের একটি স্বপ্ন ছিল বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূস দেশের শাসন ব্যবস্থায় অধিষ্ঠিত হলে হয়তো আমরা একটি দুর্নীতিমুক্ত সোনার বাংলাদেশ পেতে পারি।

এখন সময় এসেছে মানুষের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের। এখন দেশের মানুষ মনে করে, যে করেই হোক দেশকে একটি নতুন রূপে মডেল বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলা। এক্ষেত্রে ড. ইউনূসকে সময় দিতে হবে। ভালো কিছু পেতে হলে আমাদের একটু ধৈর্য্য ধরতেই হবে। পরিশেষে বলতে চাই দুর্নীতিমুক্ত একটি বাংলাদেশ গঠন করতে যতটুকু সময় আপনার লাগবে সেটুকু সময় নিয়েই দেশ গঠনে আপনাকে ভূমিকা রাখতে হবে।

দেশের যুবসমাজ রয়েছে আপনার সাথে। আপনার সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হবে। এখন আর পেছনে  তাকানোর সময় নেই। কে কি বলবে সেটাও চিন্তা করার দরকার নেই, আপনি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা চিন্তা করে এমন একটি দেশ গঠন করে যাবেন যাতে ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকে আপনার নাম। জাতি চিরদিন স্মরণ রাখবে আপনাকে।


লেখক:  সাংবাদিক ও কলামিস্ট

ganipress@yahoo

01818-936909

 



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS