ভিডিও

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা

প্রকাশিত: আগস্ট ২৭, ২০২৪, ১১:৩৩ রাত
আপডেট: আগস্ট ২৮, ২০২৪, ০১:২৮ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

একটানা বৃষ্টিপাতের সময়ে ভারতের সবগুলো নদীর বাঁধ ছেড়ে দেয়া যেন বাংলাদেশের জন্য ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘাঁ’। স্মরণকালের ভয়াবহ এ বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাড়ি ঘর, গবাদি পশু এবং মৌসুমি ফসলসহ জীবন ধারনের সবরকম উপায়-উপকরণ।

মানবিক বিপর্যয়ে পড়েছে দেশের ১০ জেলা। সর্বশেষ পাওয়া খবরে ১৩ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। গত বৃহস্পতিবার বিকালের এক তথ্য বিবরণীতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এসব জেলায় অন্তত ৩৬ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বাঁধ খুলে দেওয়ায় ভারত থেকে নেমে আসা উজানের ঢলে ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজারে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ বন্যা। বন্যার পানিতে লাখ লাখ মানুষের বাড়িঘর -ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। সেসব এলাকায় তৈরি হয়েছে মানবিক বিপর্যয়। এর মধ্যে চার জেলায় আটজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আট জেলায় মোট ৪ লাখ ৪০ হাজার ৮৪০টি পরিবার পানি বন্দি হয়ে পড়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, বন্যা কবলিত এলাকায় মানুষের জীবন রক্ষায় ও দুর্যোগ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। ত্রাণ হিসেবে খাদ্য এবং নগদ অর্থের সর্বাত্মক প্রস্তুতি আছে।

দ্রুত পানি নামলে পুনর্বাসন কর্মসূচি গ্রহণ করব। সেনা, নৌ ও কোস্টগার্ড ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে নিয়োজিত করা হয়েছে। সংস্কার আন্দোলনের ছাত্ররাও উদ্ধার তৎপরতার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। সার্বিকভাবে প্রশাসন চেষ্টা করছে, সরকার চেষ্টা করছে যাতে মানুষের জীবন, জান-মাল, গবাদি পশু রক্ষা করা যায়।

পানি বন্দি ও ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের আশ্রয় দিতে মোট ১ হাজার ৫৩৪টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর পানি বাড়ছে। আট জেলায় ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসাসেবা দিতে মোট ৪৪৪টি মেডিকেল টিম চালু রয়েছে। এ ছাড়া দেশের সব জেলায় পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী মজুত রয়েছে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম রেজা জানিয়েছেন বলেন, বন্যা আক্রান্ত জেলাগুলোতে জেলা প্রশাসককে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, সেনাবাহিনী, মেডিকেল টিম ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে সমন্বয় করে এক সঙ্গে কাজ করতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

পত্র-পত্রিকার খবরে জানা গেছে উজানের পানিতে জলাবদ্ধতার কারণে বিভিন্ন জেলায় বন্যার আশংকা দেয়া দিয়েছে। জলাবদ্ধতায় বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ও ফসলের মাঠ ডুবে যাওয়ায় জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। এতে সাধারণ মানুষজন ছুটছে আশ্রয় কেন্দ্রের দিকে। উজানের পানিতে ফেনীর অবস্থা ভয়াবহ। রাস্তাঘাট ফসলের জমি বাড়িঘর ডুবেছে। নিরাশ্রয় হয়েছে লাখো মানুষ।

নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির এখন পর্যন্ত কোনো উন্নতি হয়নি। বিভিন্ন এলাকায় দুর্ভোগ এমন স্তরে পৌছেছে যে, দুর্বিষহ রাত-দিন কাটাচ্ছে। বন্যা কবলিত এলাকায় দরিদ্র মানুষ যাতে পর্যাপ্ত খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। পানি বন্দিদের উদ্ধারের পাশাপাশি তাদের মাঝে বিশুদ্ধ পানি ও প্রয়োজনীয় খাবার বিতরণ জরুরি হয়ে পড়েছে। এ দুর্যোগ কাটাতে পানি বন্দি মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।

বন্যার্ত মানুষের দু:সময়ে সবাই পাশে দাঁড়াবে- এটা আমাদের প্রত্যাশা। অন্যদিকে দেশের ভেতরে ও উজানে ভারি বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢলের কারণে যে কোনো সময় যে কোনো এলাকায় বন্যার আশংকা থাকে। বন্যা কবলিত বিপর্যস্ত এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক ফ্রি করার নির্দেশ দিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। গত বৃহস্পতিবার তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। বন্যা দুর্গত এলাকার ১৩ শতাংশ সাইট ডাউন রয়েছে।

কয়েকটি উপজেলায় অপটিক্যাল ফাইবার ড্যামেজ হওয়ার কারণে নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হয়েছে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন আছে কয়েকটি জায়গা। সেসব জায়গায় জেনারেটর ব্যবহার করা হচ্ছে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, নেটওয়ার্ক একেবারে বিচ্ছিন্ন হলে ১০টি ভিএসএটি প্রস্তুত আছে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক ফ্রি করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে তখন মানুষের দুর্ভোগ ও সার্বিক অবস্থা আমলে নিতে হবে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS