ভিডিও

ছাত্র-জনতার স্বপ্ন পূরণের অঙ্গীকার

প্রকাশিত: আগস্ট ২৯, ২০২৪, ০৬:৫৬ বিকাল
আপডেট: আগস্ট ২৯, ২০২৪, ০৬:৫৬ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর ছাত্র-জনতার অনুরোধে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত ৮ আগস্ট অন্তর্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে তিনি রাষ্ট্র সরকারের জন্য নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছেন। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রোববার সন্ধ্যায় তিনি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন।

ক্ষমতা গ্রহণের পর এটাই ছিল জাতির উদ্দেশে দেওয়া তার প্রথম ভাষণ। স্বাভাবিকভাবেই ভাষণটি প্রচারের আগে দেশবাসী গভীর আগ্রহের সঙ্গে অপেক্ষা করছিলেন তা শোনার  জন্য। বলা বাহুল্য, দেশ এখন এক সন্ধিক্ষণের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। গণঅভ্যুত্থানের ফলে দীর্ঘ ১৬ বছর স্থায়ী সরকারের পতন হওয়ার পর একটি দল নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে।

এই সরকার রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে সংস্কার করবে বলেও  কথা দিয়েছে। সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের মধ্য দিয়ে সেসব প্রশ্নের উত্তর মিলেছে। প্রধান উপদেষ্টা তার আধ ঘন্টার ভাষণে প্রস্তাবিত সংস্কারগুলো সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন। দেশের অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানবাধিকার, নির্বাচন ব্যবস্থা, আইনি ব্যবস্থা প্রভৃতিসহ আরও অনেক ক্ষেত্রে সংস্কার করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।

বলেছেন, দীর্ঘ সময় একটি স্বৈরাচারী সরকার দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও আইনি ব্যবস্থা নষ্ট করে দিয়েছে। আমরা সংস্কারের ব্যাপারে তার অঙ্গীকারকে সাধুবাদ জানাই। বস্তুত একটি নিরাপদ, মানবিক ও গণতান্ত্রিক সমাজের আকাক্সক্ষা রয়েছে দেশের প্রত্যেক নাগরিকের। সন্দেহ নেই, এমনএকটি সমাজ গড়ে তোলার কাজটি চ্যালেঞ্জিং, তবে প্রধান উপদেষ্টা একজন প্রতিভাবান মানুষ, তার প্রজ্ঞাও প্রশ্নাতীত।

তিনি যদি তার উপদেষ্টামন্ডলী সহযোগে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেন, তাহলে দেশ একটি উন্নত স্তরে পৌঁছতে সক্ষম হবে। এ ক্ষেত্রে দেশের সর্ব সাধারণেরও উচিত সর্বতোভাবে সরকারকে সাহায্য করা। জাতির উদ্দেশে ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশবাসীকে ধৈর্য ধরার আহবান জানিয়ে বলেছেন, দেশ পুনর্গঠনের কাজে হাত দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘ ১৫ বছরের গণতন্ত্রহীনতায় দেশে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল তা থেকে উত্তরণে চ্যালেঞ্জ গ্রহণে তার সরকার প্রস্তুত।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দাবিতে আন্দোলনে নিহত ছাত্র-জনতাকে স্মরণ করে এবং বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে ভাষণ শুরু করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারের হাতে দেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে সৈ¦রাচার তার নিজের পরিবারের ও দলের কিছু মানুষের স্বার্থ হাসিলের পথ তৈরি করে দিয়েছিল।

আর্থিক খাত ও শেয়ার বাজার লুটপাটের কথা উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানের কথাও উল্লেখ করেন তিনি। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, গণরোষের মুখে ফ্যাসিবাদী সরকার দেশত্যাগ করার পর আমরা এমন একটি দেশ গড়তে চাই, যেখানে প্রত্যেক নাগরিকের মানবাধিকার থাকবে পুরোপুরি সুরক্ষিত। আমাদের লক্ষ্য একটাই উদার, গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। আমরা এক পরিবার। আমাদের এক লক্ষ্য।

কোনো ভেদাভেদ যেন আমাদের স্বপ্নকে ব্যাহত করতে না পারে, সে জন্য আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। ভাষণে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বর্তমান সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করার মাত্র দুই সপ্তাহ শেষ হলো। কর্মযাত্রার প্রথম পর্যায়ে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজে আপনাদের কাছ থেকে যে সমর্থন পাচ্ছি, সে জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। আমরা অনুধাবন করছি যে আমাদের কাছে আপনাদের প্রত্যাশা অনেক।

এ প্রত্যাশা পূরণে আমরা বদ্ধপরিকর। যদিও দীর্ঘদিনের গণতন্ত্রহীনতা। ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থা প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমাদের জন্য পর্বতসম চ্যালেঞ্জ রেখে গেছে। কিন্তু এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণে প্রস্তুত। নানা আবর্জনায় অনেক কাল ধরে কলুষিত হচ্ছিল স্বদেশ।

সুস্থ জনকল্যাণকামী রাজনীতি ও সুশাসন ছিল অধরা। একটি অচলায়তন তৈরি হয়েছিল। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়ে। নির্বাচনী গণতন্ত্র বিপন্ন হয়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ফলে নতুন করে সৃষ্টি হয়েছে বৈষম্যহীন, শোষণহীন, কল্যাণময় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সুযোগ। এই সুযোগকে বাস্তবায়ন করতে অন্তর্বর্তী সরকারের পেছনে ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছাত্র-জনতা।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS