ভিডিও

গুম বিরোধী সনদে স্বাক্ষর

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ০১, ২০২৪, ০৫:৫৩ বিকাল
আপডেট: সেপ্টেম্বর ০১, ২০২৪, ০৫:৫৩ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

গুম বিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। গত বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই সনদে স্বাক্ষর করেন। বৈঠক শেষে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

এ সময় যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুইয়া উপস্থিত ছিলেন। এই ঘটনা আমাদের জন্য, বিশেষ করে মানবাধিকার কর্মীদের জন্য একটি বড় মাইলফলক এমন মন্তব্য করে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ৭০০ জনের ওপরে মানুষ এখন পর্যন্ত গুমের কারণে নিখোঁজ হয়ে আছেন। আর যেন কেউ কখনো নিজের ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে কোনো বাহিনীকে দিয়ে কোনো পদ্ধতির মাধ্যমে নাগরিকদের গুম করতে না পারে এ জন্য এই সনদে স্বাক্ষর করা হয়েছে। এ বিষয়ে এখন প্রয়োজনীয় আইনি সংস্কার গ্রহণ করা হবে।

পত্র পত্রিকার খবর অনুযায়ী দেশে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে ৭শ’ মানুষ গুমের শিকার হয়েছেন বলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) একটি ফেসবুক পেজে দাবি করা হয়েছে। তবে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য বলেছে, এ সময় দেশে গুমের শিকার হয়েছেন ৬১১ জন। অধিকার বলছে, ৬৭৭ জন গুমের শিকার হয়েছেন, এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনের ২০২৩ সালের প্রতিবেদন মতে, গত ১৩ বছরে গুমের শিকার হয়েছেন ৬২৩ জন।

এদিকে গুমের শিকার হওয়া ভুক্তভোগীদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর পক্ষ থেকে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে সম্প্রতি বিভিন্ন সময় গুমের শিকার ১৫৮ ব্যক্তির একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে। জানা যায়, গুম হওয়া মানুষের একটি বড় অংশই আর ফিরে আসেননি। আবার দীর্ঘদিন অজ্ঞাত স্থানে থাকার পর যারা ফিরে এসেছেন, তারাও এ নিয়ে ‘টু’ শব্দটি করেননি। তবে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর বদলে গেছে প্রেক্ষাপট।

গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের কেউ কেউ আয়না ঘর থেকে ফিরে এসে তাদের ওপর নৃশংস নির্যাতনের কথা তুলে ধরেছেন। গুমের শিকার ব্যক্তিদের সন্ধানে দেশের অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রতি পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিশন গঠন করেছে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গুমের  ঘটনা তদন্তে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত মঙ্গলবার হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে কমিশন গঠন করেছে।

তদন্ত কমিশন আইন, ১৯৫৬ সালের ক্ষমতাবলে এই কমিটি গঠনের কথা উল্লেখ করে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আইন শৃঙ্খলা প্রয়োগকারী সংস্থা তথা বাংলাদেশ পুলিশ, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বিশেষ শাখা, গোয়েন্দা শাখা, আনসার ব্যাটালিয়ন, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), প্রতিরক্ষা বাহিনী।

প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর, কোস্টগার্ডসহ দেশের আইন প্রয়োগ ও বলবৎকারী কোনো সংস্থার কোনো সদস্য কর্তৃক জোরপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানের জন্য এ কমিশন। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গুমের অভিযোগ নিয়ে দেড় দশকের বেশি সময় ধরে আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের সমালোচনা রয়েছে। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ‘আয়নাঘর’ হিসেবে পরিচিত গোপন বন্দিশালা থেকে দীর্ঘ সময় পর বেশ কয়েকজন ব্যক্তি মুক্ত হওয়ার পর গুমের বিষয়টি জোরালোভাবে সামনে আসে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক ৯টি সনদের ৮টিতে সই করেছে বাংলাদেশ, কিন্তু জাতিসংঘের দীর্ঘদিনের অনুরোধের পরও বিগত আওয়ামী সরকার গুম বিরোধী সনদে সই করেনি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মানবাধিকার সমুন্নত রাখার পাশাপাশি গুমের সংস্কৃতি বন্ধ করতে চায়। এ লক্ষ্যে সরকার গুম বিরোধী সনদে যুক্ত হয়েছে।

গুম বিরোধী সনদটি ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয়। সামগ্রিকভাবে এই সনদের লক্ষ্য গুম বন্ধের পাশাপাশি এই অপরাধের জন্য দায়মুক্তি বন্ধ করা, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহায়তা দেওয়া।

আমরা আশা করি বিগত স্বৈরাচারী সরকার অনেক মানুষকে গুম করে রেখেছে, তাদের মধ্যে এখনও যারা গোপন বন্দিশালায় আটক রয়েছেন, জাতিসংঘের গুম বিরোধী এই সনদে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করে মানবাধিকারের পক্ষে আরও এগিয়ে গেলো।

এখন প্রধান কর্তব্য যারা গুম হয়ে আছেন তাদের খুঁজে বের করা, গুমকারীদের শাস্তির আওতায় আনা এবং গুম বিরোধী কঠোর আইন প্রণয়ন করার।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS