ভিডিও

ইউরোপিয়ান সোশ্যাল বিজনেস ট্যুরে প্রফেসর ইউনূস

প্রকাশিত: মে ১৯, ২০২৪, ০৭:০৬ বিকাল
আপডেট: মে ১৯, ২০২৪, ০৭:০৬ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

নোবেল বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ফাউন্ডেজিওন মিলানো কর্টিনা আয়োজিত “মিট দ্য পার্টনারস” শীর্ষক সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসাবে যোগদান করেছেন। মিলানো কর্টিনা শীতকালীন অলিম্পিক ২০২৬-এর উদ্যোগে ফাউন্ডাজিওন মিলানো কর্টিনা সুপরিচিত গ্লোবাল ব্র্যান্ডগুলির সহযোগিতায় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল প্রফেসর ইউনূস কর্তৃক শীতকালীন অলিম্পিক ২০২৬-এর সহযোগীদের নিকট এই সামাজিক অলিম্পিকের উদ্দেশ্য ও বিষয়বস্তু ব্যাখ্যা করা এবং তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেয়া যাতে তারা এই গেমসের সামগ্রিক সামাজিক লক্ষ্যগুলো পূরণের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে পারে। অনুষ্ঠানে অংশীদারদের মধ্যে ছিল ভিসা, স্যামসুং, রেন্সট্যাড ও অন্যান্যরা। প্রফেসর ইউনূস সামাজিক ব্যবসার ধারণাটি বিশদভাবে তুলে ধরেন এবং এ সংশ্লিষ্ট সকল বিষয় ব্যাখ্যা করেন। এরপর “দ্য ইমপ্যাক্ট ২০২৬ প্রোগ্রাম” তার উদ্দেশ্য ও কর্মকা-ের উপর উপস্থাপনা তুলে ধরে যা ফন্ডাজিওন মিলানো কর্টিনা ২০২৬, ইউনূস স্পোর্টস হাব ও ফন্ডাজিওন গিওকোমো ব্রডোলিনির সহযোগিতায় যৌথভাবে সৃষ্ট ও পরিচালিত।

প্যারিসে গ্রামীণ ক্রেডিট এগ্রিকোল ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়ে প্রফেসর ইউনূসকে স্বাগত জানানো হয়। উল্লেখ্য যে, প্রফেসর ইউনূস এই প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রাক্তন চেয়ারম্যান। ফাউন্ডেশনটির বিভিন্ন কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যালোচনা করার পাশাপাশি প্রফেসর ইউনূস গ্রামীণ ক্রেডিট এগ্রিকোল ফাউন্ডেশনের জেনারেল ডেলিগেট ম্যাডাম ভেরোনিক ফৌজরের সাথে নারীর ক্ষমতায়নের প্রেক্ষাপটে ক্ষুদ্রঋণ এবং সামাজিক ব্যবসার উপর একটি সাক্ষাৎকার রেকর্ড করেন। এছাড়াও তাঁরা গ্রামীণ ক্রেডিট এগ্রিকোল ফাউন্ডেশনের সহায়তায় “ইউনূস ফ্রান্স” পরিচালিত সেনেগালের ডাকারে নবীন ইক্যুইটি প্রোগ্রামের অগ্রগতিও পর্যালোচনা করেন।

প্যারিসের মেয়র অ্যান হিদালগো প্রফেসর ইউনূসকে “ইমপ্যাক্ট-২” সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানান। “ইমপ্যাক্ট-২” হলো ফরাসি ইনকিউবেটর “ইনকো” ও প্যারিসের নগর সরকার আয়োজিত একটি বৈশ্বিক সম্মেলন. প্রফেসর ইউনূস শ্রোতাদের উদ্দেশে প্রযুক্তির সুযোগ ও ঝুঁকি সম্বন্ধে, বিশেষ করে যা দারিদ্র এবং জলবায়ু সমস্যার সাথে সম্পর্কিত, তা নিয়ে বক্তৃতা করেন।

প্যারিস সিটি হলে আয়োজিত “ইমপ্যাক্ট-২” এর এক হাজারের বেশী শ্রোতার বিশাল বার্ষিক সমাবেশে প্রফেসর ইউনূস এআই এর দ্রুত সম্প্রসারণের প্রেক্ষাপটে প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সেক্রেটারি অফ স্টেট ফর দ্য ট্রেজারি (যুক্তরাজ্য) গ্যারেট ডেভিস, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ সাশা লুসিয়নি এবং অন্যান্যরা। তাঁর বক্তৃতায় প্রফেসর ইউনূস প্রযুক্তিকে দুটি ভাগে বিভক্ত করার প্রস্তাব করেন: একটি হল দ্রুত বিস্তারলাভকারী, অতি-বুদ্ধিমান প্রযুক্তি যা মানুষের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত যাকে তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বলেন। অন্যটি হচ্ছে যা আজ নেই কিন্তু যেটা সুচিন্তিতভাবে সৃষ্টি করা হবে অথবা ইচ্ছা না-থাকা সত্বেও ঘটনাচক্রে জন্ম লাভ করবে। যেটা মানুষের নিয়ন্ত্রণ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থাকবে। এই প্রযুক্তি কোনও মানব হস্তক্ষেপ, সাহায্য বা নির্দেশনা ছাড়াই স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেবে, প্রযুক্তিকে ক্রমাগতভাবে উচ্চতর পর্যায়ে নিয়ে যাবে। প্রযুক্তিকে তার নিজস্ব উদ্দেশ্য পূরণে কাজ করবে । তিনি প্রযুক্তির এই ভবিষ্যৎ শাখার নাম দিয়েছেন অটোনোমাস ইন্টেলিজেন্স বা “এটআই” । তিনি সতর্ক করে বলেন যে, এই প্রযুক্তির যাত্রা শুরু হলে পৃথিবীতে মানুষের অস্তিত্বের অবসান ঘটবে।

তিনি বলেন, তার কাছে মূল ইস্যূটি প্রযুক্তির শক্তির সম্প্রসারণ বিষয়ক নয়, বরং প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষ কী অর্জন করতে চায় তা স্থির করা এবং প্রযুক্তিকে সেপথে নিয়ে যাওয়া। সে সিদ্ধান্ত নেয়াটা খুবই জরুরী বিষয়। প্রযুক্তি দিয়ে মুহূর্তে সীমাহীন নির্দোষ মানুষকে হত্যা করা, নানাভবে মানব সমাজকে তছনছ করে দেয়া আমাদের উদ্দেশ্য হতে পারে না। বর্তমানে আমরা তা করেই যাচ্ছি আর নিজেদের বাহবা দিয়ে যাচ্ছি ।

ড. ইউনূস বলেন, বর্তমানে যে প্রযুক্তি আমাদের হাতে আছে তার সাহায্যে অনায়াসে আমরা দারিদ্র্য দূর করতে পারি, পৃথিবীকে রোগমুক্ত করতে পারি এবং প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে বৈশ্বিক উষ্ণতা দূর করতে পারি। কিন্তু তা না করে প্রযুক্তিকে আমরা সীমাহীন মুনাফা উপার্জনের কাজে পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং তাই করছি। সুপার টেকনোলজি তৈরি করে আমরা শুধু কিছু লোককে ক্রমাগতভাবে সীমাহীন সম্পদের অধিকারী হতে সাহায্য করছি যখন সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা এবং বৈশ্বিক উষ্ণতার মত সমস্যা ক্রমাগত উপেক্ষিত বা আরো খারাপ হতে থাকছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, আমাদেরকে অবশ্যই আমাদের উদ্দেশ্যগুলিকে সঠিকভাবে সংজ্ঞায়িত করতে হবে এবং প্রযুক্তিকে সেভাবেই শক্তিশালী করতে হবে।

প্যারিসে অবস্থানকালে ফ্রান্সের সংবাদপত্র লা’কোয়ার সাংবাদিক জ্যা ক্যাসার্ড ক্ষুদ্রঋণ, সামাজিক ব্যবসা, আসন্ন প্যারিস অলিম্পিক এবং এই অলিম্পিকের সামাজিক ব্যবসার বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রফেসর ইউনূসের একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন।

প্রফেসর ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণ ও সামাজিক ব্যবসার দীর্ঘদিনের অনুসারী, বিএনপি পারিবাসের “ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড রিলেশানস উইথ সিভিল সোসাইটি”র প্রধান ক্লডিয়া বেলির সাথে একটি উচ্চ পর্যায়ের আলোচনায় অংশ নেন। ক্লডিয়া ও তাঁর টীম প্রফেসর ইউনূসের কাছে সামাজিক উদ্যোক্তা, সামাজিক ক্রয়, নবীন ইক্যুইটির নানা বিষয়ে জানতে চান, এবং ইউনূস ফ্রান্স এবং বিএনপি পারিবাসের মধ্যকার নতুন অংশীদারিত্বের বিশদ বিবরণ নিয়ে আলোচনা করেন।

 

ল’রিয়াল-এর প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত একটি পৃথক বৈঠকে প্রফেসর ইউনূস মিসেস পলিন অ্যাভেনেল-লাম এবং মিসেস লরা বারোসোর নেতৃত্বে পরিচালিত “ল’রিয়াল ফান্ডস ফর উইমেন” টীমের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং ইউনূস ফ্রান্স পরিচালিত “ডেগ না লা প্রোগ্রাম” নিয়ে আলোচনা করেন। এই কর্মসূচির লক্ষ্য সেনেগালের ডাকারে ২,৫০০ জন নারীকে উদ্যোক্তা ও আর্থিক শিক্ষা দিয়ে সহায়তা করা এবং তাঁদের ব্যবসা প্রকল্পগুলিকে সমর্থন দেয়া যা বাংলাদেশে অধ্যাপক ইউনূসের সৃষ্ট নবীন উদ্যোক্তা মডেল দ্বারা অনুপ্রাণিত।

 

প্রফেসর ইউনূস এরপর “সোশ্যাল টাইডস” আয়োজিত এক আলোচনা সভায় একদল তরুণ উদ্যোক্তার সাথে আলোচনায় যোগ দেন। সোশ্যাল টাইডস-এর লক্ষ্য হল আগ্রহী সামাজিক উদ্যোক্তাদের ক্ষমতায়ন করা যারা সামাজিক, পরিবেশগত বা সাংস্কৃতিক অভিঘাত রয়েছে এমন সব প্রকল্প তৈরী করছে। গুগল ফাউন্ডেশন সোশ্যাল টাইডসকে অর্থায়ন করছে।

প্রফেসর ইউনূস “ইনকো” আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সামাজিক ব্যবসা নিয়ে আলোচনা করেন। “ইনকো” একটি বিশ্বব্যাপী সংস্থা যা ৫০টি দেশে পরিবেশগতভাবে টেকসই এবং সামাজিকভাবে দায়বদ্ধ একটি নতুন অর্থনীতি গড়ে তোলার কাজে নিবেদিত। সংস্থাটি ১১০টি প্রভাবশালী কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছে এবং বিশ্বব্যাপী ২০০,০০০ লোককে প্রশিক্ষণ দিয়েছে।

 

পরদিন প্রফেসর ইউনূস "মাইক্রোফিউচার" নামে ফ্রান্স এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন উভয়ের সরকারী এবং বেসরকারী অংশীজনদের একটি গোলটেবিল আলোচনার জন্য প্যারিসের দারিদ্র অধ্যুষিত এলাকা সেইন সেন্ট ডেনিসে যান। সেন্ট ডেনিসের প্রেসিডেন্ট স্টিফেন ট্রাউসেল, ভাইস প্রেসিডেন্ট মেলিসা ইউসুফ তাকে এলাকার প্রেসিডেন্টের সচিবালয়ে অভ্যর্থনা জানান। সেইন সেন্ট ডেনিসের কর্মসংস্থান, ইনসারসন ও সামাজিক অর্থনীতি বিষয়ক ডেপুটি ডিরেক্টর ম্যাথিউ আলেসি তাঁর জন্য এলাকার অথনৈতিক পরিস্থিতির উপর একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন আন্তঃআঞ্চলিক তহবিল দ্বারা অর্থায়নকৃত “মাইক্রোফিউচার” হলো ক্ষুদ্রঋণের ভবিষ্যৎ ও সর্বোত্তম অনুশীলনগুলি নিয়ে আলোচনার একটি বিশেষ উদ্যোগ।

 

 

 

প্রফেসর ইউনূস ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। তিনি বেকার তরুণদের জন্য ভেঞ্চার ক্যাপিটাল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি সেন্ট ডেনিসের কোন নাগরিক বেকার ভাতার উপর নির্ভরশীল থাকবে না তা নিশ্চিত করতে এবং এলাকাটিকে প্যারিসের "বেকার ভাতামুক্ত এলাকায়" পরিণত করতে শ্রোতাদের উৎসাহিত করেন।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS