ভিডিও

নরেন্দ্র মোদির ‘জনপ্রিয়তার ভীত’ নাড়িয়ে দেওয়া কে এই ধ্রুব রাঠি 

প্রকাশিত: জুন ০৫, ২০২৪, ১১:০১ রাত
আপডেট: জুন ০৬, ২০২৪, ০২:৩৪ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সদ্য অনুষ্ঠিত লোকসভা নির্বাচনে ‘আবকি বার ৪০০ পার (এবার চারশ পার)’ স্লোগানে নির্বাচনে তুমুল প্রচারণায় নেমেছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপি। লক্ষ্য ছিল ৪০০ আসন জিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে সংসদে অবস্থান নেওয়া। একাধিক বুথফেরত জরিপও বলেছিল, বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ ৩৭০ থেকে ৪০০ আসনের বেশি পেয়ে তৃতীয়বার সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। তবে চূড়ান্ত ফলে ৪০০ দূরের কথা, ৩০০ আসনও পায়নি বিজেপি নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স–এনডিএ। ভারতের নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ফল অনুযায়ী, ৫৪৩টি আসনের মধ্যে এনডিএ পেয়েছে ২৯২টি।

হিন্দুস্তান টাইমস বলছে, মোদি এবার হ্যাটট্রিক করেছেন ঠিকই। কিন্তু পরিসংখ্যান অনুযায়ী তার ভোট কমেছে প্রায় ৯ শতাংশ। ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণা শুরুর পরপরই সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ডিংয়ে উঠে আসে একটি নাম জার্মান প্রবাসী-‘ধ্রুব রাঠী’। ফেসবুক, এক্সে ছড়িয়ে পড়েছে তার বিবৃতি ‘নেভার আন্ডারএস্টিমেট দ্য পাওয়ার অব অ্য কমন ম্যান।’ বলা হচ্ছে, ‘বিজেপি সাম্রাজ্যের ভীত নাড়িয়ে দিয়েছেন’ এই ওয়ান-ম্যান আর্মি।  ধ্রুব রাঠী কোনো রাজনীতিবিদ কিংবা সাংবাদিক নন; একজন ইউটিউবার। গত কয়েক মাসে নরেন্দ্র মোদি ও তার দল বিজেপির কঠোর সমালোচনা করে একের পর এক ভিডিও তৈরি করেছেন তিনি।

তার ভিডিও এতটাই জনপ্রিয় হয়েছে যে আলজাজিরা, ফ্রান্স ২৪, দ্য ইকনোমিস্ট, টাইম ম্যাগাজিন, দ্য টেলিগ্রাফ, দ্য প্রিন্ট, দ্য ইকনোমিক টাইমসের মতো আন্তর্জাতিক পত্রিকায় শিরোনাম হয়েছেন তিনি। একটি গবেষণার বরাতে আলজাজিরা জানিয়েছে, ভারতীয়রা মূলধারার নিউজ চ্যানেলের চাইতেও ইউটিউব ও হোয়াটসঅ্যাপে পাওয়া খবরে বিশ্বাস করে বেশি। এই পটভূমিতে ইউটিউবে শক্তিশালী উপস্থিতি নিয়ে আসেন ধ্রুব রাঠী। ইউটিউবে তার ২১.৫ মিলিয়ন সাবস্ক্রাইবার রয়েছে, যা বিজেপির ইউটিউব চ্যানেলের প্রায় ৪ গুণ। নরেন্দ্র মোদির ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইবার রয়েছে ২৩ মিলিয়ন ও কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর সাবস্ক্রাইবার রয়েছে ৬ মিলিয়ন। ২৯ বছর বয়সী ধ্রুব রাঠী আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘২০১৫ সালে আম আদমি পার্টি (এএপি) জাতীয়ভাবে বিরোধী দলে থাকলেও দিল্লিতে ক্ষমতায় ছিল। তারা একটি দুর্নীতিবিরোধী হেল্পলাইন চালু করেছিল। কিন্তু কেন্দ্রের মোদি সরকার ওই হেল্পলাইনের নিয়ন্ত্রণের জন্য এএপি রাজ্য সরকারের সঙ্গে তুমুল লড়াই শুরু করে।’ ধ্রুব বলেন, এ টি আমার জন্য খুব মর্মান্তিক মুহূর্ত ছিল। আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে তিনি ভারত থেকে দুর্নীতি অপসারণ করতে আগ্রহী নন। মূলধারার টিভি চ্যানেল মোদি ও বিজেপির পক্ষে এক নাগাড়ে সমর্থন প্রদর্শনের পর তার হতাশা আরও বেড়ে যায়। সেই পটভূমিতে ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সালে ইউটিউবে তার প্রথম রাজনৈতিক মন্তব্য আপলোড করেছিলেন ধ্রুব। ভিডিওটি সম্পূর্ণরূপে তার ফোনে শ্যুট করা হয়েছিল। গত আট বছরে তিনি তার প্রধান ইউটিউব চ্যানেলে প্রায় ৬৫০টি ভিডিও প্রকাশ করেছেন। তার অধিকাংশ ভিডিওর কেন্দ্রে থাকে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও সরকারের সমালোচনা। স্ক্রিনে উপস্থিত হওয়া মাত্রই ব্যাকগ্রাউন্ডে অশুভ সাউন্ডট্র্যাক বাজতে শুরু করে। ভিডিও শুরুর আগে হাসিমুখে তিনি প্রশ্ন করেন, ‘ভারত কি একনায়কত্বে পরিণত হচ্ছে?’ ভোটের চূড়ান্ত ফল ঘোষণার আগে সর্বশেষ ভিডিওতে ধ্রুব রাঠী বলেন, আমি জানি যাদের বিরুদ্ধে আমি কথা বলছি এটি পাহাড়ের বিরুদ্ধে এক লোকের কথা বলার মতো।

কিন্তু আমি মনে করেছি এটা আমার দায়িত্ব। যেখানে গণমাধ্যম ‘গদি মিডিয়া’ (ক্ষমতার কাছাকাছি থাকে যে মিডিয়া) হয়ে গেছে। তাই কিছু হোক বা না হোক যেটা আমার করা উচিত, যেটা সঠিক কাজ সেটাই আমি করব। ধ্রুব রাঠীর ভিডিও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ হলো- তিনি কথা বলেন একেবারে সাধারণ হিন্দি ভাষায়। তার ভিডিওতে ইংরেজি শব্দ প্রায় নেই বললেই চলে। তবে তিনি ইংরেজি সাবটাইটেল যুক্ত করেন। এতে করে বাংলাদেশ, নেপাল, পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকেও তার বিপুল সাবস্ক্রাইবার রয়েছে। আল জাজিরাকে ধ্রুব রাঠী বলেন,  আমাকে নিয়মিত প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

আমি ভীত নই। কিন্তু আমি আমার অবস্থান বা আমার ভারতে থাকা পরিবারের অবস্থান কখনোই যাতে প্রকাশ না পায় এ বিষয়ে সতর্ক থাকি। তিনি বলেন, দিনশেষে আমি যা করি তা চালিয়ে যাওয়া ছাড়া তার আর কোনো পথ নেই। আমার চ্যানেল ভারতে নিষিদ্ধ হতে পারে। কিন্তু এখন কথা বলার সময়, তা না হলে অনেক দেরি হয়ে যাবে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS