ভিডিও

শা’বান মাসে করণীয় ও বর্জনীয়

মাওঃ ডাঃ শফিকুল ইসলাম মীর

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৪, ১০:১৫ রাত
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৪, ১০:১৫ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

হিজরি সালের ৮ম মাস শা’বান মাস। শা’বান অর্থ শাখা-প্রশাখা, বের হওয়া। এ মাস প্রচুর কল্যাণ ও নেকীর মাস। তাই এর নাম করণ হয়েছে শা’বান। শা’বান মাসের গুরুত্ব শব-ই বারাআতের কারণে আমাদের নিকট অনেক বেশী। অনেকে এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন আর কিছু লোক এই আমলকে সামনে রেখে অনেক শরিয়ত বিরোধী কাজ করে।

কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে এর যথার্থ বিশ্লেষণ নিম্নে তুলে ধরা হলো-
এ মাস যখন উপস্থিত হতো তখন নবীজী (সা.) বলতেন ‘এ মাসে তোমরা তোমাদের অন্তর পাক-পবিত্র এবং নিয়ত সঠিক করে নাও।’ হযরত মু’আজ ইবনে জাবাল (রা.) বলেন- নবীজী (সা.) ইরশাদ করেন- আল্লাহ তা’আলা পনেরই শা’বানের রাতে সৃষ্টির দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত আর সবাইকে ক্ষমা করে দেন।

[সহীহ ইবনে হিব্বান]  হযরত আ’লা ইবনুল হারেস থেকে বর্ণিত হযরত আয়েশা (রা.) বলেন- রাতে নবীজী (সা.) নামাজে দাঁড়ান এবং দীর্ঘ সিজদা করেন যে, আমার ধারণা হলো তিনি হয়তো মৃত্যুবরণ করেছেন, আমি তখন উঠে তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম, তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল।

যখন তিনি সিজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করলেন, তখন আমাকে লক্ষ করে বললেন ‘হে আয়েশা/হুমাইরা- তোমার কি এ আশংকা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসুল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম না; ইয়া রাসুলুল্লাহ আপনার দীর্ঘ সিজদা থেকে আমার আশংকা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কি না?

নবীজী (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি জান এটা কোন রাত, আমি বললাম আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই ভাল জানেন। নবীজী (সা.) তখন ইরশাদ করলেন, এটা অর্ধ শা’বানের রাত। আল্লাহ তা’আলা এ রাতে বান্দার প্রতি মনোযোগ দেন এবং ক্ষমাপ্রার্থীদের ক্ষমা করেন ও অনুগ্রহ প্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন।

আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই। (শুআবুল ঈমান) একদা হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) নবীজী (সা.)কে না পেয়ে খুঁজতে বের হলেন, তাঁকে জান্নাতুল বাকীতে পেলেন, তখন নবীজী (সা.) বললেন ১৪ই শা’বান দিবাগত রাতে আল্লাহ তা’আলা প্রথম আকাশে অবতরণ করেন এবং বনু কালব গোত্রে পালিত ছাগল পালের শরীরের পশমের চেয়েও অধিক সংখ্যক বান্দাকে তিনি ক্ষমা করে দেন। [তিরমিযী] হযরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত নবীজী (সা.) বলেছেন- অর্ধ শা’বানের রাত যখন আসে তখন তোমরা এ রাত্রি ইবাদত বন্দেগীতে কাটাও এবং দিনের বেলায় রোজা রাখ।

কেননা এ রাতে সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তা’আলা প্রথম আসমানে আসেন এবং বলেন, কোন ক্ষমা প্রার্থী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করব। আছে কি কোন রিযিক প্রার্থী? আমি তাকে রিযিক দিবো। এভাবে সুবহে সাদিক পর্যন্ত আল্লাহ তা’আলা মানুষের প্রয়োজনের কথা বলে তাকে ডাকতে থাকেন। [সুনানে ইবনে মাজাহ]

ফুকাহায়েকেরামের দৃষ্টিতে লাইতুল বারাআত : আল্লামা শামী, ইবনে নুজাইম, হাকিমুল উম্মুত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (র.), মুফতী মুহাম্মাদ শফি সাহেব (র.) সহ প্রমুখ উলামায়েকেরামের মতে লাইলাতুল বারাতে শক্তি সামর্থ্য অনুযায়ী জাগ্রত থেকে একাকী ভাবে ইবাদত করা মুস্তাহাব। [আদদুরুল মুফতার], মা’সাবাতা বিসসুন্নাহ। লাইতুল বারাআত এ করণীয় : বেশী বেশী নফল ইবাদত, যেমন কোরআন তেলাওয়াত, যে কোনো সুরা দিয়ে নফল নামাজ, যিকির আযকার, দোয়া ইস্তেগফার।

উক্ত ইবাদত সমূহ সমবেত ভাবে নয় বরং একাকী করতে হবে। উল্লেখ্য উক্ত রাতে কোন ধরা বান্দা নিয়মে নফল নামাজ পড়া হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। উল্লেখ্য লাইলাতুল বারাআতের পর দিন রোজা রাখা নফল ইবাদত কেউ শা’বানের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখে রোজা রাখতে পারলে উত্তম।

লাইতুল বারাআত এ বর্জনীয় : আতশবাজী, হালুয়া রুটি, মাইকে কোরআন তেলাওয়াত ও শবিনা, আলোকসজ্জা করা, দলবদ্ধ হয়ে গোরস্থানে যাওয়া, মেলা বসানো ইত্যাদি কু-রছম থেকে বিরত থাকা। তাই আসুন- আমরা সবাই দ্বীনের সঠিক জ্ঞান অন্বেষণ করে সমস্ত প্রকার বিদ’আত ও কু-রছম থেকে বিরত হয়ে দ্বীনের উপর অটল থাকতে পারি আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে কবুল করুন। আমীন।


লেখক : ইমাম ও খতীব, কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ 
মুহতামিম, দারুল ইসলাম আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ)
নূরানী মাদ্রাসা দঃ বৃন্দাবনপাড়া, বগুড়া

01719-537402



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS