ভিডিও

সফলতার পথে জিরা চাষ

আমদানী নির্ভরতা কমিয়ে সাশ্রয়ী হবে বৈদেশিক মুদ্রা, কৃষক পর্যায়েও বেড়েছে সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০২৪, ০৫:১৯ বিকাল
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০২৪, ০৫:১৯ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

হাফিজা বিনা: জিরা নিয়ে দীর্ঘ গবেষণার পর অবশেষে সফলের পথে বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্রের গবেষকরা। শুধু গবেষণাগারেই নয়, কৃষক পর্যায়েও বেড়েছে সম্ভাবনা। গবেষকরা আশা করছেন দেশের মাটিতেই হবে সম্পূর্ণ আমদানি নির্ভর মসলা জিরা চাষ।

এরই মধ্যে ২০২১ সালে জাত হিসেবে অবমুক্তি মিলেছে জিরার। পরীক্ষামূলকভাবে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের কয়েকটি জেলায় কৃষক পর্যায়েও শুরু হয়েছে জিরা চাষ। সফলতাও আসছে।

গবেষকদের মতে জিরা চাষের জন্য উপযুক্ত হলো উঁচু ও চরাঞ্চল এলাকার জমি। চরাঞ্চলের মাটিতে বালুর পরিমাণ বেশি হওয়ায় পানি ধরে রাখতে পারে না। ফলে চরের মাটিতে জিরা চাষে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন কৃষক। একই সঙ্গে দেশে উৎপাদন বাড়লে জিরার আমদানি কমে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।

গবেষকরা জানিয়েছেন, প্রতিবছর দেশে ১২থেকে ১৫ হাজার  মেট্রিক টন জিরার চাহিদা থাকে । অনুমান করা হয় আমদানি করা এ পরিমাণ জিরার বর্তমান বাজার অনুযায়ী আর্থিক মূল্য দাঁড়ায় ৮০ থেকে ১০০ কোটি টাকা। আমদানি করতে গিয়ে বিপুল সংখ্যক বৈদেশিক মুদ্রা সাস্রয় ও দেশের জনগণের জিরার চাহিদা মেটাতে ২০০৮ বিভিন্ন দেশ থেকে জিরার জাম প্লাজম সংগ্রহ করে বগুড়ার শিবগঞ্জের মসলা গবেষণা কেন্দ্রে গবেষণা শুরু হয়।

দীর্ঘদিন দেশের মাটিতে এই বীজ নিয়ে গবেষণা করলেও ২০২১ সালে  গবেষণা কেন্দ্রর উদ্ভাবিত জিরার জাতটি  অবমুক্ত করা হয়। গবেষণা কেন্দ্রের ভেতর এক বিঘা জমিতে জিরার গাছ  থেকে ২৭ -২৮ কেজি জিরা পাওয়া গেলেও এবছর গাছের অবস্থা এবং ফলন দেখে সংশ্লিষ্ট গবেষক আশা করছেন এছর তারা তিন মণেরও বেশি জিরা পাবেন।

সূত্র জানায়, কয়েক বছর হলো বগুড়ার কৃষকরা পরীক্ষামূলক কৃষক জিরা চাষ করলেও গতবছর বগুড়াসহ দেশের ২ বিভাগের গাইবান্ধা, নাটোর, রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ, টাঙ্গাইল, সাতক্ষীরা, সিরাজগঞ্জ, পাবনা জেলার চাষীদের গবেষণাকেন্দ্র থেকে বীজ সরবরাহ করা হয়েছে।

এছাড়াও ব্যক্তি পর্যায়ে অনেকে বীজ সংগ্রহ করে পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করেছেন। বগুড়ার শিবগঞ্জ, সারিয়াকান্দি ও সোনাতলার বেশ কয়েকজন কৃষককে জিরার বীজ সরবরাহ করা হয়। তারা গবেষকদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করে পরামর্শ নিয়ে জিরা চাষে সফল হতে চেষ্টা করছেন।

এমনই একজন বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা কৃষ্ণপুর এলাকার জিরা চাষী  মোঃ সাইফুল ইসলাম । তিনি জানান, গতবছর প্রথম পরিক্ষামূলকভাবে তার ৮ শতক জমিতে জিরা চাষ করলেও ভাল করতে পারেননি কিন্তু দমে যাননি।

উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে এবছর বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্র থেকে ৫শ’ গ্রাম জিরা বীজ নিয়ে এবং তাদের পরামর্শ মোতাবেক চাষ করে এখন পর্যন্ত জিরার গাছ এবং এর ফলন দেখে আশাবাদি তিনি এখান থেকে ১৫-১৬ কেজি জিরা পাবেন।

তার উৎপাদিত জিরা বীজ হিসেবে বিক্রি করা জন্য অর্ডার নিয়েছেন। প্রতি কেজি বীজ জিরা বিক্রি করবেন ৮ হাজার টাকায়। তিনি আরও জানান, জিরার সফল চাষের পর আরও বড় পরিসরে চাষাবাদ করবেন এবং এই চাষে অন্যকে উৎসাহিত করবেন তিনি।

বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্রের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল হাসান সুজা বলেন, ২০০৮ সালে জিরা উৎপাদনকারী বিভিন্ন দেশ থেকে জিরার বীজ নিয়ে বগুড়া মসলা গবেষণাগারে জিরার চাষ ও বীজের ওপর গবেষণা শুরু হয়। দীর্ঘদিন ফসল চাষ এবং বীজ উদ্ভাবনের জন্য চেষ্টা করার পরও সফলতা আসেনি। প্রায় ১২-১৬ বছর পর আমরা এখন প্রায় সফলের পথে।

জিরা চাষের ব্যাপারে তিনি বলেন  জিরা শীতকালীন ফসল হলেও জিরা চাষের জন্য কুয়াশা ক্ষতিকর। জিরার জমিতে পানি জমে থাকা যাবে না। এমনকি মাটিও হতে হবে শুকনো। প্রতিবিঘা জমিতে এক কেজি বীজ লাগে।  এতে কৃষকের খরচ হবে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা।

ফলন আসবে আড়াই মণ। বর্তমান বাজার ৮ থেকে ১২শ’ টাকা কেজি দরে জিরা বিক্রি হয়। সেই অনুযায়ী এক বিঘা থেকে ১ লাখ টাকারও ওপরে জিরা বিক্রি করতে পারবেন কৃষকরা। জিরা চাষে অন্যান্য ফসলের চেয়ে অনেক লাভবান হবেন কৃষক।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS