ভিডিও

ভাষা আন্দোলনে রক্ত ঝরার ৭২ বছর পরও

বগুড়ার সাড়ে ৮শ’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার নেই

এখনও কলাগাছ বা বাঁশ-কাঠের অস্থায়ী মিনারে ফুল দেওয়া হয়

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৪, ০৮:৫০ রাত
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৪, ০৮:৫০ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

নাসিমা সুলতানা ছুটু : একুশে ফেব্রুয়ারি এলেই তিনটি কলাগাছ দিয়ে অস্থায়ী শহিদ মিনার নির্মাণ করা হয়। তারপর সেই শহীদ মিনারে স্কুলের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা ভাষা শহিদের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার কর্ণিবাড়ী ইউনিয়নের শোনপচা উচ্চ বিদ্যালয়ে গত ৩০ বছর থেকে এভাবেই শহিদদের স্মরণ করা হয়।

ওই বিদ্যালয়ের মত আরও বেশি সময় থেকে জেলার আদমদীঘি উপজেলার পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা ভাষা শহিদদের স্মরণে পায়ে হেঁটে  প্রায় দেড় মাইল দূরে উপজেলা সদরের শহিদ বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। একইভাবে বগুড়ার কাহালু উপজেলার পাঁচপীর মাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রায় এক কিলোমিটার দূরের অপর একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শহিদ বেদীতে ফুল দিয়ে ভাষা শহিদদের স্মরণ করেন।

শুধু এই তিনটি বিদ্যালয়ই নয়, ভাষা আন্দোলনের ৭২ বছর পরও বগুড়ার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই এখনও নির্মাণ করা হয়নি শহিদ মিনার। যেসব প্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার নেই ভাষা দিবস এলেই ওই  প্রতিষ্ঠানগুলোর কলাগাছ কিংবা বাঁশ-কাঠ দিয়ে অস্থায়ীভাবে শহিদ মিনার তৈরি করে শহিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হয়।

আবার কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে শুধু পতাকা উত্তোলন করে বিশেষ দিবস পালন করা হয়। ফলে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শিক্ষা অর্জনে। জাতীয় দিবসের গুরুত্ব ও শহিদদের সম্পর্কেও জানতে িপারছে না তারা। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ৫২'র রাজপথ রক্তে ভিজিয়ে ছিলেন আমাদের পূর্ব-পুরুষেরা।

তাদের আত্মত্যাগের ফসল আজকের এই বাংলা ভাষা। পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র বাঙালিরাই ভাষার জন্যে জীবন দিয়েছে, রক্ত দিয়েছে। বাঙালীদের সাথে সাথে সারা বিশ্ব ২১ ফেব্রুয়ারিকে পালন করেন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে।

১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের বীর শহিদদের আত্মত্যাগকে শ্রদ্ধা জানাতে তৈরী করা হয়েছিলো শহিদ মিনার। সরকারী নির্দেশনায় প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকার কথা থাকলেও জেলার শিক্ষা দপ্তরগুলোর তথ্য অনুযায়ী জেলায় প্রাথমিক, নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরী সরকারি-বেসরকারি সব মিলে ২ হাজার ৭৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

এরমধ্যে প্রায় সাড়ে ৮শ’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখনও শহিদ মিনার নির্মাণ করা হয়নি। প্রাথমিকে ১ হাজার ৬৫৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১ হাজার ৫৫২টি বিদ্যালয়ে শহিদ মিনার রয়েছে বলে জেলার প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তর দাবি করছে।

মাত্র ৭২টিতে নেই বলে তারা জানিয়েছে। অপরদিকে সরকারি-বেসরকারি সব মিলে জেলায় নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক, স্কুল এন্ড কলেজ, কলেজ, স্নাতক পর্যায়ের কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ১ হাজার ৭৭টি রয়েছে। এরমধ্যে মাত্র ৩১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার রয়েছে, ৭৬৭টি প্রতিষ্ঠানে নেই বলে জানিয়েছে জেলা শিক্ষা দপ্তর।

আদমদীঘি উপজেলার পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুস সালাম তালুকদার জানান, ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠানটি স্থাপন হয়। অর্ধ শতাধিক বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত বিদ্যালয়ে শহিদ মিনার নির্মাণ করা হয়নি। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানে প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। ভাষা দিবসসহ বিশেষ দিবসগুলোতে প্রায় দেড় কিলো দূরে উপজেলা সদরের শহিদ মিনারে গিয়ে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

তিনি জানান, প্রতিষ্ঠানটিতে শহিদ মিনার নির্মাণের জন্য একাধিকবার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সরকারি কর্মকর্তাদের অবগত করা হয়েছে। তারাও বারবার নির্মাণের আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত কার্যকর হয়নি। সারিয়াকান্দি উপজেলার কর্ণিবাড়ী ইউনিয়নের শোনপচা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ রবিউল ইসলাম জানান, ১৯৯৪ সালে ওই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়।

প্রতিষ্ঠার ৩০ বছরেও ওই বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়নি। অথচ বর্তমানে ওই বিদ্যালয়ে ৪৫৩জন শিক্ষার্থী রয়েছে। ভাষা দিবসসহ বিভিন্ন বিশেষ দিবসে কলাগাছ দিয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করে শহিদদের শ্রদ্ধা জানানো হয়। প্রায় ৯০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হওয়া বগুড়া শহরের অভিজাত এলাকায় গড়ে ওঠা ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে আজ অব্দি নির্মাণ করা হয়নি শহিদ মিনার।

ভাষা দিবসসহ বিশেষ দিবসগুলোতে ওই বিদ্যালয় জেলা প্রশাসনের সাথে মিলিত হয়ে দিবসগুলো পালন করে বলে স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ শাহাদৎ হোসেন জানান। তিনি বলেন, স্কুলে শহিদ মিনার নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে নক্শার কাজ শুরু করা হয়েছে, আশা করা যাচ্ছে আগামি বছর ভাষা শহিদ দিবসের আগেই শহিদ মিনার নির্মাণ হবে।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহিদ মিনার বিষয়ে শিক্ষা দপ্তরগুলোর পাঠানো তথ্যের সাথে বাস্তবের তেমন মিল নেই। সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে শহিদ দিবস পালনের প্রস্তুতি সভায় জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শহিদ মিনার বিষয়ক তথ্য শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চাওয়া হলে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তাৎক্ষণিকভাবে জেলা সার্বিক তথ্য দিলেও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সে সময় কোন তথ্যই দিতে পারেননি। পরে তড়িঘড়ি করে এই যে তথ্য জেলা প্রশাসকের দফতরে পাঠিয়েছেন, তার সাথে বাস্তবতার গড়মিল খুঁজে পাওয়া গেছে।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ হজরত আলী জানান, যেসব প্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার নেই সেইসব প্রতিষ্ঠানকে শহিদ মিনার নির্মাণের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। শহিদ মিনার নির্মাণে খুব বেশি অর্থের প্রয়োজন হয় না, আন্তরিকতাটাই বড়।

প্রতিষ্ঠান প্রধান, ম্যানেজিং কমিটি এবং স্থানীয় গণ্যমান্য বা ধনাঢ্য ব্যক্তিরা যদি একটু আন্তরিক হ’ন তবে অবশ্যই প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই শহিদ মিনার নির্মিত হবে। তবে তারা তা না করে জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের বরাদ্দের অপেক্ষায় থাকেন , যা সত্যি দুঃখজনক।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS