ভিডিও

‘তেল নয়, এ যেন শরীরের নিংড়ানো রক্ত’

বুকে-ঘাড়ে ঠেলে জীবনের ঘানি টানেন বৃদ্ধ দুদু প্রাং ও হালিমা

প্রকাশিত: মার্চ ১২, ২০২৪, ০৪:৩১ দুপুর
আপডেট: মার্চ ১২, ২০২৪, ০৪:৩১ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

হাফিজা বিনা : একজনের ঘাড়ে, অন্যজনের বুকে ঠেকানো বাঁশের লাঠি। দুজনেই প্রচন্ড শক্তি প্রয়োগ করে গোল গোল ঘুরে ঘুরে ঘানি টানছেন। আর সেই পেশির টানে বের হচ্ছে ফোঁটা ফোঁটা তেল। এ যেন তেল নয় বের হচ্ছে তাদের শরীরের নিংড়ানো রক্ত।

বৃদ্ধ শরীর হাঁপিয়ে উঠলে একটু দম নিলেও সমস্যা। তেলের গাদ শক্ত হয়ে আরও জোর দিতে হয়। আপাদ দৃষ্টিতে ষাটোর্ধ দুদু প্রামানিক ও তার স্ত্রী হালিমা বেগমের তেলের ঘানি টানা দেখে মনে হয়েছে বেঁচে  থাকাটাই খুব কষ্টের।

বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলার ভেলাবাড়ি ইউনিয়নের  ছাইহাটা গ্রাম। আগে এ গ্রামের অনেক পরিবার ঘানি থেকে তেল বের করে বিক্রি করতেন। কালের বিবর্তনে দেশে মেশিন আসার পর অনেকেই এব্যবসা ছেড়ে দিলেও এই এলাকার ষাটোর্ধ দুদু প্রামানিক এখনও এ ব্যবসা ধরে রেখেছেন অন্যকোন উপায় নাই বলে। এক সময় তার ব্যবসা ভালই চলত।

স্ত্রী হালিমা, তিন  মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে ছিল তার সংসার। মেয়েরা বড় হলে তাদের পাত্রস্থ করতে এবং একমাত্র নাতির থ্যালাসেমিয়া রোগ তাদের সব এলোমেলো করে দেয়। একে একে ঘানি টানার গরু, এরপর পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত ৯ শতক জায়গা বিক্রি করে হয়ে পরেন নিঃস্ব।

ভিটে ছাড়া হয়ে বর্তমানে স্থানীয় খজর প্রামনিক এক টুকরো জায়গা দিয়েছেন তাদের থাকার জন্য। ঘানিটানার তেল বিক্রি ছাড়া ঘরে চাল আসে না দুদু মিয়ার। ছেলে অটোচালক মানিক অসুস্থ ছেলে এবং স্ত্রীকে নিয়ে অন্য একজনের বাড়িতে থাকেন। এদিকে দুদু মিয়ার এক মেয়ে তালাকপ্রাপ্ত হয়ে এক সন্তানকে নিয়ে ফেরত আসে বাবার বাড়িতে।

কিছুদিন হলো সেও সন্তানকে বৃদ্ধ বাবা-মার কাছে রেখে ঢাকায় কাজের সন্ধানে  গেছে। এখন এই তিনজনের চাহিদা মেটাচ্ছেন কলুর বলদের বদলে নিজেরা ঘানি টেনে। দুদু প্রামানিক বলেন, গত প্রায় ৯ বছর হলো এভাবেই কাঁধে ঠেলে এই দুইজন মানুষ সরিষা থেকে তেল বের করে বিক্রি করছেন। বাপ-দাদার পেশা ছাড়তে পারেন না।

অন্য পেশাতেও যেতে পারেন না। জোটেনি কোন সরকারি ভাতা। তিনি চান তার এই বয়সে সরকার তাকে মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই। আর কর্ম করে খাওয়ার একটা ব্যবস্থা করে দিলে বেঁচে থাকাটা সহজ হয়। দুদু প্রামানিকের স্ত্রী হালিমা বেগম বলেন, বিয়ের পর থেকেই শ্বশুর বাড়িতে এই কাজ করছেন। তখন গরু দিয়ে ঘানি টানা হতো।

কিন্তু বৃদ্ধ বয়সে এসে অভাবের সাথে পাল্লা দিয়ে না পেরে এখন স্বামীর সাথে নিজেরা বলদের অভাব পুরণ করছেন। পেট ও বুক দিয়ে ঠেলে ঘানি থেকে তেল বের করে বিক্রি করেন। তিনি আরও বলেন, শরীর খারাপ লাগে। হাঁটু ব্যাথা করে, ফুলে যায় । সারারাত ব্যাথায় ঘুমাতে পারেন না। কিন্তু কি করবেন, পেট তো অসুখ বোঝে না।

একই এলাকার চাকরিজীবী মহব্বত আলী জানান, এই লোকগুলো খুব নিরীহ। তাদের এই কষ্ট দেখা যায় না। জায়গা-জমি নেই। অন্যের জমিতে বাড়ি করে আছেন। তাদের জন্য সবার সহযোগিতার হাত বাড়ানো উচিত।

ভেলাবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম শিপন জানান, তারা আসলেই  অসহায়। কষ্ট করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাদের এই অবস্থার কথা একটি মিটিংয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানানো হয়েছে। তিনি তাদের জন্য ভাল কিছু করবেন বলে আশ্বাসও দিয়েছেন।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS