ভিডিও

শহরের তুলনায় পল্লী এলাকায় প্রবাসী আয় বেশি

দেশে সবচে’ বেশি রেমিটেন্স আসে চট্টগ্রাম বিভাগে

প্রকাশিত: মার্চ ২২, ২০২৪, ১০:৩৯ রাত
আপডেট: মার্চ ২৩, ২০২৪, ১০:৪৭ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

নাসিমা সুলতানা ছুটু : ত্রিশ বছর বয়সী সুজন ইসলাম প্রায় ছয় বছর হলো মালয়েশিয়া রয়েছেন। সেখানে তিনি একটি হোটেলে কাজ করেন। দুই বছর আগে সুজন তার বড় ভাই সোহেলকেও মালয়েশিয়ায় নিয়ে যান। এখন দুই ভাই ওই দেশে কাজ করছেন।

সোহেল ও সুজনের প্রতিবেশী দুই সহোদর রবিউল এবং রাসেলও প্রবাসে শ্রমিকের কাজ করছেন। রবিউল মালয়েশিয়ায় এবং রাসেল সৌদি আরবে ছিলেন। মাস খানেক আগে রাসেল বাড়িতে এসেছেন। এদেরই প্রতিবেশী ২৩ বছর বয়সী সজিব মলিয়েশিয়ায় একটি শপিং মলে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করছেন। পাঁচ বছর আগে সজিব মালয়েশিয়ায় গিয়ে প্রথম এক বছর একটি হোটেলে কাজ করেন। এরপর করোনার কারণে কিছুদিন কাজ বন্ধ ছিল।

করোনার পর যখন সব স্বাভাবিক হয় তখন ওই হোটেলের কাজ বাদ দিয়ে সজিব যখন যে কাজ পান সেটিই করেন। সুজন-সোহেল, রবিউল-রাসেল এবং সজিবের বাড়ি নাগরকান্দিতে। বগুড়া সদর উপজেলার শাখারিয়া ইউনিয়নের চালিতাবাড়ির নাগরকান্দি পাড়া। শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে ওই পাড়ায় ষাট পরিবারের বসবাস।

সুজন-সোহেলদের মত নাগরকান্দি পাড়ার কুড়ি পরিবারের প্রায় চল্লিশ জনের মত বিভিন্ন বয়সী তরুণ ও যুবক মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, কুয়েত-কাতারসহ এশিয়া ও মধ্যপ্রচ্যের বিভিন্ন দেশে শ্রমিকের কাজ করছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহরের তুলনায় গ্রামের মানুষের মধ্যে বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা বেশি। গ্রাম থেকে যারা প্রবাসে যান, এদের অধিকাংশ মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, কুয়েত-কাতার, সিঙ্গাপুর, ওমানসহ এশিয়া ও মধ্যপ্রচ্যের বিভিন্ন দেশে এজেন্সির মাধ্যমে শ্রমিকের কাজ নিয়ে যান।

পুরুষ শ্রমিকের পাশাপাশি গ্রামগুলো থেকে অনেক নারী শ্রমিকও যান। তবে গ্রামের একটু অবস্থাসম্পন্ন পরিবারগুলো থেকেও ইদানিং প্রবাসে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। দুপচাঁচিয়া উপজেলার মোস্তফাপুর গ্রামের ওষুধ ব্যবসায়ী জুয়েল রহমানের পরিবারের তিন সদস্য প্রবাসে থাকেন। জুয়েলের ছেলে এবং তার দুই বোনের দুই ছেলেকে পড়ালেখার পাশাপাশি চাকরি করার জন্য তিন ভাই-বোনের ছেলেকেই লন্ডনে পাঠিয়েছেন।

বিলেতে পাঠাতে গিয়ে একেক জনের জমি বিক্রির পাশাপাশি প্রচুর টাকা ঋণ করতে হয়েছিল। ছেলেদের পাঠানো অর্থে ঋণের টাকা শোধ হয়েছে। তবে এখনও জমি কিনতে পারেন নি। সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ করা জরিপে দেখা গেছে, শহরের তুলনায় গ্রামে প্রবাসী আয় বেশি এবং রেমিট্যান্স গ্রহণের হারও শহরের তুলনায় অনেক বেশি।

এছাড়া বিবিএস’র ওই জরিপে উঠে এসেছে দেশের ৮টি বিভাগের মধ্যে রেমিট্যান্স প্রাপ্তির দিক থেকে সবচে এগিয়ে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ এবং সবচে কম রংপুর ও রাজশাহী বিভাগ। গ্রামের মানুষের আয়ের ৬টি উৎসের মধ্যে প্রথমে রয়েছে কৃষি ও চাকরি।

তিন নম্বর অবস্থানে রয়েছে বৈদেশিক মুদ্রা (রেমিট্যান্স)। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রামের মানুষের আয়ের ৩৯ দশমিক ২১ শতাংশ আসে কৃষি থেকে, চাকরি থেকে ৪০ দশমিক ০৬ শতাংশ এবং রেমিট্যান্স থেকে আয় ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ। শহরগুলোতে আয়ের প্রধান উৎস চাকরি, শিল্প প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা। জেলা শহরগুলোতে রেমিট্যান্স থেকে আয়ের হার ৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ, সিটি শহরগুলোতে রেমিট্যান্স থেকে আয়ের হার ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ, জাতীয় পর্যায়ে গিয়ে এই হার দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ।

গ্রামে রেমিট্যান্স গ্রহণের হার ১৫ দশমিক ০১ শতাংশ। জেলা শহরে ১২ দশমিক ৬৪ শতাংশ, সিটি শহরগুলোতে ৬ দশমিক ১৫ শতাংশ এবং জাতীয়ভাবে রেমিট্যান্স গ্রহনের গড় হার ১৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ। 
বিবিএস’র করা ওই জরিপে বলা হয়েছে, বিদেশ থেকে পাঠানো অর্থ সবচে বেশি আসে চট্টগ্রাম বিভাগে। ওই বিভাগ থেকেই সবচে বেশি সংখ্যক মানুষ প্রবাসে বসবাস করেন। চট্টগ্রামে প্রবাসী আয় ২৯ দশমিক ২৩ শতাংশ। এরপরেই রয়েছে সিলেট বিভাগ।

সিলেটে প্রবাসী আয় ২৪ দশমিক ০৬ শতাংশ, ঢাকায় ১৪ দশমিক ০৫ শতাংশ, বরিশাল বিভাগে ৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ, খুলনা বিভাগে ৮ দশমিক ৭ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ, রাজশাহীতে ৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ এবং সবচে কম প্রবাসী আয় আসে রংপুর বিভাগে। ওই বিভাগে প্রবাসী আয়ের হার মাত্র ২ দশমিক ০৮ শতাংশ।

বগুড়া জেলা জনশক্তি কর্মসংস্থান ব্যুরো অফিস সূত্রে জানা গেছে, শুধুমাত্র ২০২৩ সালে বগুড়া থেকে ৮ হাজার ৫২জন বিদেশগামী নারী-পুরুষ রেজিস্ট্রেশন ও ফিঙ্গার প্রিন্ট করেছেন। এরমধ্যে পুরুষ ৭ হাজার ৪৫৯ জন এবং নারী ৫৯৩জন। এরমধ্যে সবচে বেশি রেজিস্ট্রেশন করেছেন শিবগঞ্জ উপজেলার অধিবাসী। ওই উপজেলা থেকে ২০২৩ সালে ৯১১ জন প্রবাসে গেছেন।

এরপরেই রয়েছে আদমদীঘি উপজেলা। ওই উপজেলা থেকে ৮৬৪জন প্রবাসে গেছেন। এরপরে রয়েছে গাবতলী উপজেলা। ওই উপজেলা থেকে ৭২৩জন কর্মী বিদেশে গেছেন। প্রবাসে যাওয়ার সংখ্যা সবচে কম সারিয়াকান্দি উপজেলায়। ওই উপজেলা থেকে মাত্র ৫২৭জন ২০২৩ সালে প্রবাসে যাওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছেন।

এছাড়া বগুড়া সদর উপজেলা থেকে ৬৯৭জন, শাজাহানপুর থেকে ৫৪৪জন, শেরপুর ৫৪৫জন, ধুনট থেকে ৫৬৪জন, নন্দীগ্রাম থেকে ৬৯২জন, কাহালু থেকে ৬৯৪জন, দুপচাঁচিয়া থেকে ৬৬৭জন এবং সোনাতলা থেকে ৬২৪জন প্রবাসে গেছেন।

জেলা জনশক্তি কর্মসংস্থান ব্যুরো অফিসের সহকারী পরিচালক মোঃ আতিকুর রহমান জানান, উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলার মধ্যে বৈদেশিক অভিবাসনে বগুড়াই সবার উপরে। ২০২৩ সালে রেকর্ড সংখ্যক কর্মী বিদেশে গিয়েছে। তবে শহর বা পৌর এলাকার তুলনায় পল্লী এলাকা থেকে প্রবাসে যাওয়ার প্রবণতা বেশি বলে তিনি জানান।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS