ভিডিও

গতবছর বগুড়া থেকে সাড়ে ২৬ কোটি টাকার সেচপাম্প ভারতে রপ্তানি হয়েছে

সেবা প্রতিষ্ঠানের হয়রানি বন্ধ চান ব্যবসায়ীরা

প্রকাশিত: মার্চ ৩০, ২০২৪, ১১:২২ রাত
আপডেট: মার্চ ৩০, ২০২৪, ১১:২২ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

রাহাত রিটু : গত বছর বগুড়া থেকে সোয়া ২ লাখ ডলারের বেশি মূল্য মানের সেচপাম্প ও কৃষিযন্ত্রাংশ ভারতে রপ্তানী করা হয়েছে। বগুড়ার কারখানায় স্থানীয় কারিগরদের তৈরি সেচপাম্প রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্র অর্জন হলেও, নানা প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে উদ্যোক্তাদের। হয়রানি, জটিলতা এবং ব্যাংকের সহায়তা পেলে বগুড়া থেকে আরও বেশি কৃষি যন্ত্রাংশ রপ্তানি করা সম্ভব।

কৃষি যন্ত্রাংশ তৈরিতে বগুড়া অনেক আগেই অন্য জেলা থেকে অনেক এগিয়ে গেলেও সুযোগ সুবিধা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। অল্প পুঁজি ও নানা জটিলতার কারনে রপ্তানিতে সুবিধা করতে পারছেন না। ব্যবসায়ীরা, একারণে স্বল্পসুদে ঋণ চান ব্যবসায়ীরা। বগুড়ার তৈরি সেচপাম্প এই অঞ্চল সহ দেশের চাহিদা মিটিয়ে এখন বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে।

প্রতি বছরে গড়ে ৫০ হাজারেরও বেশি সেচ পাম্প ভারতে রপ্তানি হচ্ছে। গত বছর ভারতে প্রতিটি সেচপাম্পের গড় রপ্তানি মূল্য ১৯ মার্কিন ডলার। সেচপাম্প রপ্তানি থেকে গত বছর আয়ের পরিমাণ ছিলো প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার৩৭৫ ডলার বা প্রায় সাড়ে ২৬ কোটি টাকা। রপ্তানির শীর্ষে রয়েছে মিলটন ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়াকর্স, রণী ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস এবং আজাদ ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস।

উদ্যোক্তারা জানান, বগুড়ায় ছোট-বড় প্রায় এক হাজার শিল্পকারখানা রয়েছে। বগুড়ায় স্থাপিত কারখানাগুলোর মধ্যে প্রায় ৪০টি ফাউন্ড্রিশিল্প এবং বাকিগুলো কৃষি যন্ত্রাংশ, হালকা প্রকৌশল শিল্প। প্রায় এক হাজার শিল্পকারখানায় প্রায় দেড় লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ভরশীল। এই শ্রমিকরাই কৃষি যন্ত্রাংশ তৈরি করছে। যা দেশের অভ্যন্তরে কৃষি যন্ত্রপাতির চাহিদার সিংহভাগ পূরণ করছে।

বগুড়া শহরের স্টেশন সড়কে গড়ে উঠেছে কৃষি যন্ত্রাংশ ব্যবসার এক বড় বাজার। এছাড়াও গোহাইল রোডেও রয়েছে অনেক কারখানা। বগুড়ার ব্যবসায়ীরা জানান, ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের জন্য সেচপাম্প তৈরির অন্যতম কাঁচামাল পুরোনো ভাঙারি লোহা, জাহাজভাঙার লোহা, পিগ আয়রন, সিলিকন, হার্ড কোক ও ফার্নেস অয়েল। কারখানাগুলোতে কাস্ট আয়রণ গলিয়ে ফাউন্ড্রির সমন্বয়ে তৈরি হয় পানির পাম্প।

উদ্যেক্তা আজাদ ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস‘র প্রোপাইটার মোঃ শহিদুল ইসলাম রুবু জানান তিনি গত বছর ১২শ’র মত সেচ পাম্প ভারতে রপ্তানি করেছেন। এজন্য দেশের বৈদেশিক মূদ্রা অর্জণ হয়েছে ২২ হাজার ৮০০ মার্কিণ ডলার। প্রতিটির রপ্তানি মূল্য ধরা হয়েছে ১৯ ডলার। এই ব্যবসায়ী বলেন এই শিল্প এখন ধংসের পথে।

১২শ’ পাম্প রপ্তানি করতে না হলে তার কারখানা বন্ধ হয়ে যেত। তিনি  সেচপাম্প রপ্তানির ক্ষেত্রে পৃষ্ঠপোকতা চান। একই সাথে রপ্তানিকারকদের সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর উপরও গুরুত্বারোপ করেন। রণী ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস‘র প্রোপাইটার মোঃ আব্দুল মতিন সরকার জানান, তারা যে পরিমান পাম্প রপ্তানি করেন, সুযোগ পেলে আরও বেশি রপ্তানি করতে পারবেন।

এর জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। কিন্তু ব্যংকের চড়াসুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করা কঠিন। সরকার যদি ব্যাংক থেকে স্বল্পসুদে ঋণের ব্যবস্থা করে দেয় তবে তারা আরও ভালো করতে পারবে। তিনি আরও জানান, তাদেরকে কাঁচামাল আমদানী করতে হয়। কাঁচামাল আমদানি করতে গিয়ে তারা অর্থনৈতিক সংকটে পড়েন। এই ব্যবসায়ী মনে করেন দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করতে হলে ব্যবসায়ীদের আরও সুযোগ সুবিধা দেওয়া প্রয়োজন।

বিসিক শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি ও মিলটন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজিজার রহমান মিল্টন বলেন, সেন্ট্রিফিউগাল পাম্প রপ্তানির মধ্য দিয়ে বিদেশের বাজারে প্রবেশ করে বগুড়ার কৃষিশিল্প রপ্তানি শুরু হয়েছে। ভারতের পর অন্যান্য বেশ কয়েকটি দেশেও রপ্তানি করা হয়েছে কয়েক বছর ধরে। আজিজার রহমান আরও বলেন, নানা সংকটে এই শিল্প টিকিয়ে রাখা এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। ব্যাংকে গেলে তারা এলসি মিলছে না।

এই শিল্পে ঋণ মিলছে না। ফাউন্ড্রিশিল্পের অন্যতম কাঁচামাল পিগ আয়রন, সিলিকন, হার্ড কোক, কার্বন ব্লক, ফায়ার ব্রিকস, ম্যাঙ্গানিজ, ট্যালকম পাউডার, গ্রাফাইট পাউডার আমদানির ক্ষেত্রে মূল্য সংযোজন কর বৃদ্ধি করা হয়েছে। সেই সাথে কাস্টমস এর হয়রানি তো আছেই। ফাউন্ড্রি শিল্পের কাঁচামাল আমদানি খরচ বাড়াতে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা যাচ্ছেনা।

তিনি বলেন ভ্যাট-ট্যাক্স, অফিসের হয়রানির কারণে টিকে থাকা দায় হয়ে পড়েছে। এই ব্যবসায়ী আরও বলেন, চায়না পণ্য ট্যাক্স ফি আসছে, অন্যদিকে আমাদেরকে অতিরিক্ত ট্যাক্স দিতে হচ্ছে। কাচামাল আমদানি করা যাচ্ছেনা। আবার করতে গেলেও হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।

ফলে বিদেশে রপ্তানি করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এই সমস্যা গুলো দূর করা গেলে বগুড়া থেকে আরও বেশি কৃষি যন্ত্রাংশ ভারতে রপ্তানি করা সম্ভব বলে এই উৎপাদক মনে করেন।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS