ভিডিও

করোনা মহামারী এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতি

শহরের পাশাপাশি গ্রামেও বেড়েছে সাবলেট দাতা ও গ্রহিতার হার

প্রকাশিত: এপ্রিল ০১, ২০২৪, ১০:৫৭ রাত
আপডেট: এপ্রিল ০২, ২০২৪, ১১:৪৪ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

নাসিমা সুলতানা ছুটু : বগুড়া শহরের সূত্রাপুর এলাকার একটি ফ্ল্যাটে স্ত্রী এবং তিন বছরের সন্তানসহ একটি রুমে সাবলেট থাকেন মুনির। ফ্রি-ল্যান্সিংয়ের আয় থেকে যা আসে সাবলেটের ভাড়া, বিদ্যুৎ-গ্যাসের বিল, সিকিউরিটি চার্জসহ প্রতিমাসে ১২-থেকে ১৫ হাজার টাকা তাকে দিতে হয়।

ওই ফ্ল্যাটের তিনটি বেড রুমের মধ্যে ২টি ফ্ল্যাট মালিক রুমানার। একটিতে রুমানা নিজে থাকেন। অপরটি তার ছেলে-মেয়ের। রুমানার এক ছেলে-এক মেয়ে দু’জনই পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকেন। ড্রয়িং, ডাইনিং এবং কিচেন সাবলেট দাতা ও গ্রহিতা উভয়েই ব্যবহার করেন।

বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার মাস্টার পাড়া এলাকায় একটি টিনসেড বাড়িতে একটি করে কক্ষ নিয়ে সাবলেট থাকেন রব্বানী, রেজাউল, বকুল ও রমেশ্বর। ৬ রুমের ওই বাড়িতে অবশিষ্ট ২টি রুম বাড়ির মালিকদের জন্য বরাদ্দ। দুপচাঁচিয়া পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে চাকরি করা রব্বানীদের একটি কক্ষের জন্য মাসে এক হাজার টাকা ভাড়া গুনতে হয়।

এছাড়া বিদ্যুৎ বিলের জন্য আলাদা টাকা দিতে হয়। স্বল্প বেতনে চাকরি করার জন্য এর থেকে বেশি দামের বাড়ি ভাড়া নিতেও তারা পারেন না। ওই বাড়ির মালিক এবং তার স্ত্রী কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। তিন মেয়ে এবং এক ছেলের মধ্যে তিন মেয়ের বিয়ে তাদের সংসারে থাকেন। একমাত্র ছেলে লেখাপড়া করেন। তিনি ওই বাড়ির একটি কক্ষে থাকেন। অপর কক্ষটি বোনদের জন্য বরাদ্দ। বোনরা এলে তারা থাকেন।

করোনা মহামারি ও পরবর্তীতে উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে দেশে ছোট-বড় শহরের পাশাপাশি  গ্রামেও এখন সাবলেট দেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। বিগত ৩ বছরে দেশে সাবলেট দেওয়া ও নেওয়ার প্রবণতা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস’র জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।

জরিপ অনুসারে, দেশে খানাগুলোর মধ্যে সাবলেট দেওয়া ও নেওয়ার প্রবণতা তিন বছরে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। প্রতিবেদনের তথ্যে দেখা গেছে, ২০২৩ সালে দেশে সাবলেট গ্রহণকারী খানার সংখ্যা ৪ দশমিক ১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে; ২০২১ সালে যা ছিল ২ দশমিক ৪ শতাংশ। অর্থাৎ এই তিন বছরে সাবলেট গ্রহণকারী খানার সংখ্যা ১ দশমিক ৭ শতাংশিয় পয়েন্ট বেড়েছে।

২০২২ সালে সাবলেট নেন ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। সাবলেট নেওয়ার সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে সাবলেট দেওয়া খানার সংখ্যাও বেড়েছে। বিবিএসের ওই প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২১ সালে সাবলেট দেওয়া খানার সংখ্যা ছিল শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ, ২০২৩ সালে তা শূন্য দশমিক ৯ শতাংশে উঠেছে। অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে তা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। একক বাড়িতে বসবাসকারী খানার সংখ্যা ২০২১ সালে ছিল ৯৭ দশমিক ১ শতাংশ, ২০২৩ সালে তা ৯৫ শতাংশে নেমে এসেছে।

বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস অনুযায়ী একটি বাসস্থানে বসবাসকারী একাধিক পরিবার আলাদাভাবে রান্নার আয়োজন করলে তাদের আলাদা খানা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। শুধু তাই নয়, শহরে যেমন বেড়েছে সাবলেট গ্রহিতা ও দাতার সংখ্যা, তেমনি গ্রামাঞ্চলেও দিনদিন বাড়ছে সাবলেট গ্রহণকারীর সংখ্যা।

বিবিএস’র ওই পরিসংখ্যান অনুযায়ী শহরাঞ্চলে ২০২১ সালে সাবলেট গ্রহণকারীর হার ছিলো ৪ দশমিক ১ শতাংশ। ২০২৩ সালে প্রায় ২ শতাংশ বেড়ে তা দাঁড়িয়েছে ৬ শতাংশে। অপরদিকে পল্লী এলাকায় ২০২১ সালে সাবলেট গ্রহণকারীর সংখ্যা ১ দশমিক ৮৫ শতাংশ ২০২৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৪৮ শতাংশ। অপরদিকে শহরাঞ্চলে ২০২১ সালে সাবলেট প্রদানকারীর হার ছিল ১ দশমিক ২ শতাংশ, ২০২৩ সালে ওই হার দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৪ শতাংশ।

পল্লী বা গ্রামাঞ্চলে ২০২১ সালে সাবলেট প্রদানকারীর হার ছিল শূন্য দশমিক ২৩ শতাংশ, ২০২৩ সালে তা দাঁড়িয়েছে শূন্য দশমিক ৬৮ শতাংশ। বিবিএস’র স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস’র জরিপ অনুযায়ী সাবলেট গ্রহণ ও প্রদানকারীর হার বাড়লেও কমছে কোন বাড়িতে এককভাবে বসবাসকৃত পরিবারের হার।

শহরাঞ্চলে ২০২১ সালে ৯৪ দশমিক ৭ শতাংশ একক পরিবার বসবাস করলেও ২০২৩ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৯২ দশমিক ৬ শতাংশ। গ্রামে ২০২১ সালে ৯৭ দশমিক ৯২ শতাংশ পরিবার একক বসবাস করলেও ২০২৩ সালে তা দাঁড়িয়েছে ৯৫ দশমিক ৮৪ শতাংশে।

দেশে করোনা মহামারির ধাক্কার পর যখন অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া শুরু হয়, তখনই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে মূল্যস্ফীতির হার বাড়তে শুরু করে। এরপর দেশে প্রায় দুই বছর ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। এক বছর ধরে মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশের ওপর রয়েছে। এজন্য মানুষের যেমন ক্রয় ক্ষমতা কমেছে তেমনি একক বাসা ভাড়া নিয়ে থাকার সক্ষমতাও হারিয়েছে অনেক পরিবার।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS