ভিডিও

বগুড়ায় প্রাইভেট, কোচিং সেন্টার ও কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো চালু রয়েছে

বন্ধ রাখতে জেলা প্রশাসকের নির্দেশ

প্রকাশিত: এপ্রিল ২১, ২০২৪, ১০:৩৩ রাত
আপডেট: এপ্রিল ২২, ২০২৪, ১২:২৪ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

নাসিমা সুলতানা ছুটু : চলমান তীব্র দাবদাহের কারণে সারাদেশে স্কুল কলেজগুলো বন্ধ থাকলেও বগুড়ায় কোচিং সেন্টার, প্রাইভেট কোচিং সেন্টার এবং কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো চালু রয়েছে। ফলে তাপদাহ ও ভ্যাপসা গরমে যেমন নাকাল হচ্ছেন অভিভাবক তেমনি কষ্ট ভোগ করছে ছোট ছোট শিশুরাও।

এদিকে আজ রোববার (২১ এপ্রিল) বগুড়া জেলা প্রশাসক জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় এসব কিন্ডারগার্টেন এবং কোচিং সেন্টারগুলোও বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন। অপরদিকে অস্বাভাবিক তাপদাহের কারণে আজ রোববার (২১ এপ্রিল) সচিবালয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে সাংবাদিকদের বলেছেন, তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি বুঝে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ানো হবে।

কারণ আমরা বাচ্চাদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলবো না। এছাড়া তাপপ্রবাহের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অনেক পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে ক্লাস নেওয়া শুরু করেছে। ১৩ জেলায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে। বেশ কয়েকটি জেলায় তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি ছুঁই ছুঁই। হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

অতি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে বাইরে না বের হওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। তীব্র এ গরমে শিক্ষার্থীদের স্কুলে পাঠাতে আগ্রহী নন অভিভাবকরা। রমজান, ঈদুল ফিতরের সঙ্গে গ্রীষ্মকালীন অবকাশ মিলিয়ে ২৬ দিন বন্ধ ছিল স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা। ছুটি শেষে আজ রোববার (২১ এপ্রিল) থেকে খুলে দেওয়ার কথা ছিল সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

তবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে ছুটি আরও বাড়ানোর দাবি জানায় অভিভাবক ঐক্য ফোরাম। সার্বিক দিক বিবেচনা করে আজ রোববার (২১ এপ্রিল) শনিবার (২০ এপ্রিল) সরকার আরও সাত দিনের ছুটি বাড়ানোর ঘোষণা দেন।

মাউশির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সারা দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহ ও আবহাওয়া দফতরের সতর্কতা জারির পরিপ্রেক্ষিতে মাউশি অধিদফতরের আওতাধীন সব সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পূর্বনির্ধারিত ছুটি শেষে ২১ এপ্রিল খোলার পরিবর্তে আগামি ২৮ এপ্রিল যথারীতি খুলবে।

অপরদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ও আলাদা বিজ্ঞপ্তিতে একই ঘোষণা দিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান তুহিনের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চলমান তাপপ্রবাহে শিশু শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিবেচনায় ২১ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিশুকল্যাণ ট্রাস্টের বিদ্যালয়সমূহ ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর লার্নিং সেন্টারগুলো বন্ধ থাকবে।

এ ছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে ক্লাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতরের পরিচালক আতাউর রহমান এ তথ্য জানান। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বগুড়া পৌর শহরের জলেশ্বরীতলা, সেউজগাড়ি, কলোনি, উপশহরসহ বিভিন্ন এলাকায় চালু রয়েছে কোচিং সেন্টার, কিন্ডার গার্টেন এবং প্রাইভেটের মোড়কে কোচিং। শাওন রহমান নামে এক অভিভাবক জানান, তার ছেলে একটি ক্যাডেট মাদ্রাসায় চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ছে।

মাদ্রাসা বন্ধ থাকলেও কোচিং সেন্টার খোলা রয়েছে। বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত কোচিংয়ে তার ক্লাস হয়। কোচিংয়ের কারণে প্রতিদিন সাবগ্রাম থেকে তীব্র তাপদাহের মধ্যে ছেলেকে নিয়ে আসতে হয়। এতে প্রচন্ড গরমে তার ছেলে খুব কষ্ট পাচ্ছে। শহরের টিনপট্টি এলাকায় বসবাসকারী তাবাসসুম বর্ণিল নামে আরেক অভিভাবক জানান, তার এক ছেলে ও এক মেয়ে।

ছেলে জিলা স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে আর মেয়ে জলেশ্বরীতলার একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের নার্সারীতে পড়ছে। ছেলের স্কুল বন্ধ থাকলেও কোচিং খোলা রয়েছে। তাই প্রতিদিন তীব্র তাপপ্রবাহ উপেক্ষা করে তাকে কোচিংএ পাঠাতে হয়। কিন্তু মেয়ের স্কুল ১৫ তারিখ থেকে খুললেও ছোট বাচ্চা বলে এই গরমে তাকে স্কুলে পাঠাতে সাহস পাচ্ছেন না।

শহরের লতিফপুর কলোনীর ‘পাঠশালা’ নামে একটি কোচিং সেন্টারের পরিচালক শারমিন আক্তার মুন জানান, নার্সারী থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের তার কোচিং সেন্টারে পড়ানো হয়। সকাল সাড়ে ৬টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কয়েকটি ব্যাচে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া হয়।

এই তীব্র গরমে কোচিং সেন্টার খোলা রাখা সম্পর্কে শারমিন জানান, আমরা খোলা রাখতে না চাইলেও অভিভাবকদের চাপে খোলা রাখতে হয়। অভিভাবকরা বলেন, স্কুল বন্ধ রয়েছে, কোচিং যদি বন্ধ থাকে তবে ছেলে-মেয়েরা বাসায় পড়তে চায় না।

তাই অভিভাবকদের জন্যই কোচিং সেন্টার খোলা রাখতে হয়। কোচিং সেন্টার অ্যাসোসিয়েশন বগুড়ার সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম হিমেলের কাছে কোচিং সেন্টারগুলো খোলা রাখা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জলেশ্বরীতলায় প্রায় ৩শ’ শিক্ষক প্রাইভেট পড়ানোর নামে কোচিং চালান।

তারা কোন সংগঠনের সঙ্গে নেই। সরকার থেকে যখন কোচিং সেন্টার বন্ধের নির্দেশনা আসে তখন কোচিংগুলো বন্ধ থাকলেও প্রাইভেটের মোড়কে কোচিংগুলো কিন্ত বন্ধ থাকে না। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে যদি নির্দেশনা আসে তবে কোচিং বন্ধ রাখা হবে।

বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশন বগুড়ার সভাপতি সাজেদুর রহমান সাজু তার অধীনে বগুড়ার ৩০টি কিন্ডারগার্টেন স্কুল বন্ধ রয়েছে দাবি করে বলেন, আজ (রবিবার) থেকে স্কুলগুলো খোলার কথা ছিল। কিন্তু আজই আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো বন্ধ রাখার নির্দেশনা পেয়েছি। তাই আমাদের অধীনে যে ৩০টি স্কুল রয়েছে সেগুলো আমরা আবারও বন্ধ ঘোষনা করেছি। তবে বগুড়ায় কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোর আরও কিছু সংগঠন রয়েছে।

ওই সংগঠনগুলোর অধীনে কিছু কিছু কিন্ডারগার্টেন স্কুল চালু রয়েছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে তিন মাসিক সাময়িকী পরীক্ষাও শুরু হয়েছে বলে জানান। বগুড়া জেলা শিক্ষা অফিসার হজরত আলী জানান, তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তো বন্ধ রয়েছে।

২১ ও ২২ এপ্রিল উপজেলা শিক্ষা অফিসে শিক্ষা সপ্তাহের অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল, তাপপ্রবাহের কারণে সেটিও পিছিয়ে ২৯ এপ্রিল করা হয়েছে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS