ভিডিও

তীব্র গরমে বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে রোগী বাড়ছে

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৩, ২০২৪, ০৯:০১ রাত
আপডেট: এপ্রিল ২৪, ২০২৪, ১২:৪৮ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

নাসিমা সুলতানা ছুটু : সারাদেশ জুড়ে চলছে তীব্র তাপদাহ। সূর্যের প্রখরতা প্রতিদিনই যেন একটু একটু করে বাড়ছে। এই তাপদাহে একদিকে যেমন মানুষের স্বাভাবিক কাজকর্মে স্থবিরতা এসেছে তেমনি গরমজনিত নানা রোগে তারা আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশেষ করে শিশু-গর্ভবতী নারী ও বয়স্করাই বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে তাপদাহের কারণে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে প্রতিদিনই বাড়ছে রোগী। ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, সর্দি-জ্বর, কাশিসহ গরমজনিত নানা রোগ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে নানা বয়সের মানুষ।

তবে যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এমন মানুষই তারাই গরমজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। হাসপাতাল কর্র্তপক্ষ হিটস্ট্রোকসহ তাপদাহজনিত রোগগুলো থেকে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে হাসপাতালের বিভিন্ন কর্ণারে (যেখানে জনসমাগম বেশি) শিশু, গর্ভবতী মা এবং শ্রমজীবী মানুষ ও সেবা প্রদান কর্মীদের জন্য ব্যানার-ফেস্টুন ঝুলিয়ে রেখেছেন।

এছাড়া আজ মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের কনফারেন্স রুমে চিকিৎসকদের নিয়ে শজিমেক কর্তৃপক্ষ হিটস্ট্রোকে করণীয়, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা বিষয় একটি সেমিনার করে। ওই সেমিনারে চিকিৎসকদের হিটস্ট্রোক রোগীদের কীভাবে চিকিৎসা করানো হবে বা হিটস্ট্রোক প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে জানানো হয়।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে ওই হাসপাতালের শুধুমাত্র শিশু বিভাগে ১ হাজার ২১২জন রোগী চিৎিসা নিয়েছে এরমধ্যে ভর্তি আছে ৩৫৭জন। ভর্তিকৃত শিশুদের মধ্যে নবজাতক (শূন্য থেকে ২৮ দিন) শিশুই ভর্তি রয়েছে ১১৩জন।

অপরদিকে মেডিসিন বিভাগে এক সপ্তাহে ২ হাজার ১৩৮জন রোগী চিকিৎসা নিয়ে ভর্তি হয়েছেন ৮৩৫জন রোগী। এছাড়া গত এক সপ্তাহে হাসপাতালের বর্হিঃবিভাগের গাইনী, শিশু ও মেডিসিন বিভাগেই ৫ হাজার ৮৬৯জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এরমধ্যে গাইনী বিভাগে ৯৮৬জন, শিশু বিভাগে ১ হাজার ১৭২জন এবং মেডিসিন বিভাগে ৩ হাজার ৭১১জন নারী-পুরুষ চিকিৎসা নিয়েছেন। এমধ্যে বেশির ভাগই জ্বর, সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া এবং ডায়রিয়ার রোগীই বেশি।

এদিকে বগুড়ায় গত এক সপ্তাহে তাপমাত্রা প্রতিদিন বাড়ছেই। গত আটদিনে জেলার গড় তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩৮ দশমিক ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং সর্বোনিম্ন প্রায় ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে।

গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালেও এই সময় গড় তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩৬ দশমিক ৪৬ এবং সর্বনিম্ন ২৬ ছিলো বলে জানিয়েছেন বগুড়া আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া। তাপমাত্রা আগামিকাল বৃহস্পতিবার থেকে আরও বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।

বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে গত পাঁচদিনের ব্যবধানে প্রায় ৩শ’ রোগী বেশি ভর্তি রয়েছেন। আজ মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) বেলা ১১টা পর্যন্ত ওই হাসপাতালে ভর্তি ছিল ১ হাজার ৬৩৫জন, এর আগের দিন ২২ এপ্রিল সোমবার ভর্তি রোগী ১ হাজার ৬৩১জন, রোববার ২১ এপ্রিল ভর্তিকৃত রোগী ছিল ১ হাজার ৫৭৪, ২০ এপ্রিল ছিলো ১ হাজার ৫২৪জন এবং ১৯ এপ্রিল ভর্তিকৃত রোগী ছিলো ১ হাজার ৩৪০জন।

এই ক’দিনে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য দাবি করছেন, গরমজনিত রোগী তেমন আসছেন না। তবে তাপদাহে হিটস্ট্রোকসহ বিভিন্ন রোগে যেন মানুষ আক্রান্ত না হোন সেজন্য হাসপাতালের বিভিন্ন স্থানে তিন ধরণের মানুষকে সচেতন করতে সচেতনতামূলক ব্যানার ও ফেস্টুন ঝুলিয়ে রেখেছেন।

হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডাঃ আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, সাধারণত যাদের শরীরের ইম্যুউনিটি (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম) কম তারাই অতিরিক্ত গরমের কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এরমধ্যে শিশু, গর্ভবতী নারী ও বয়স্করা রয়েছেন। এছাড়া শ্রমজীবী মানুষ বিশেষ করে যারা মাঠে-ময়দানে কাজ করেন এবং বিভিন্ন সেবাদান পেশার সাথে জড়িত রয়েছেন তারাও গরমজনিত রোগে আক্রান্ত হন।

এদের কথা চিন্তা করেই আমরা হাসপাতালের বিভিন্ন স্থানে সচেতনতামূলক ব্যানার ও ফেস্টুন ঝুলিয়েছি। ডাঃ আব্দুল ওয়াদুদ হিটস্ট্রোকের লক্ষণের কথা জানিয়ে বলেন, শরীরের তাপমাত্রা যদি ১০৩ ডিগ্রি বা তার বেশি হয় এবং শরীর থেকে ঘামঝরা বন্ধ হয় তবে ধরে নিতে হবে ওই রোগী হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন। তখন দ্রুত তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে তাদের পরামর্শমত চিকিৎসা দিতে হবে।

গরমে সুস্থ থাকতে বগুড়া শজিমেকের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ মনিরুজ্জামান আশরাফ বলেছেন, দেশে বর্তমানে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। এ তাপমাত্রা শিশু থেকে বয়স্ক সবার জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। তবে হিটস্ট্রোকের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন রিকশাচালক, নির্মাণ শ্রমিক, কৃষক, প্রতিবন্ধী, অসুস্থ গর্ভবতী, বৃদ্ধ ও শিশু।

হিটস্ট্রোকের লক্ষণের মধ্যে রয়েছে শরীরের তাপমাত্রা অতিমাত্রায়  বেড়ে যাওয়া, ঘামতে ঘামতে এক সময় ঘাম কমে যাওয়া, প্রস্রাব কমে যাওয়া, বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া, মাথা ব্যাথা, পেশি ব্যাথা, অতিরিক্ত ক্লান্ত লাগা এবং মাথা ঘোরা অন্যতম। তবে সুস্থ থাকতে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। অপ্রোয়জনে একদমই বাইরে ঘোরাঘুরি করা যাবে না।

যারা কাজের জন্য বাইরে থাকেন, তাদের ছাতা ব্যবহার বা মাথায় কাপড় দিতে হবে। তবে রোদে যারা কাজ করেন, কারও একটানা দীর্ঘক্ষণ কাজ করা যাবে না। এতে করে মাথাব্যথা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে, যা থেকে হিট স্ট্রোক হয়।

আর হিট স্ট্রোক হলে যে কেউ মারাও যেতে পারে।’ গরমে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো পানিশূন্যতা। তাই সারাদিনে আড়াই থেকে তিন লিটার পানি খাওয়ার এবং ঢিলে-ঢালা ও সুতি পোশাক পরার পরামর্শ দেন ডা. মনিরুজ্জামান।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS