ভিডিও

বগুড়ায় পানির স্তর ফি বছর ৩ ইঞ্চি করে নিচে নেমে যাচ্ছে

টিউবওয়েলে পানি উঠছে না, প্রকট হচ্ছে সংকট

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৩, ২০২৪, ১০:০৭ রাত
আপডেট: এপ্রিল ২৩, ২০২৪, ১০:০৭ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

মাসুদুর রহমান রানা : বগুড়ায় গ্রীষ্মের শুরুতেই ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দিন দিন নিচে নেমে যাচ্ছে। প্রতিবছর গড়ে তিন ইঞ্চি করে পানির স্তর নিচে নামছে। এতে সুপেয় পানির সংকট প্রকট হচ্ছে। অধিকাংশ টিউবওয়েল অকেজো হয়ে পড়েছে।

আর টিউবওয়েলে পানি না ওঠায় হাজার হাজার মানুষ সুপেয় পানির সংকটে পড়ছেন। এ অবস্থায় অনেকে বাড়ি বাড়ি বসাচ্ছেন সাবমারসিবল পাম্প। এদিকে, গভীর-অগভীর সেচযন্ত্র গুলোতেও পর্যাপ্ত পানি ওঠছে না। চলতি বোরো আবাদে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। আবাদে বেড়েছে খরচ।

বগুড়া সদর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের সহকারি প্রকৌশলী মো: সাকিউল ইসলাম (সাকিল) বলেন, বগুড়ায় সাধারণত মাটির নিচে ৮০ থেকে ১১০ ফুট গভীরে পানির স্তর স্বাভাবিক থাকে। এই স্তর থেকে সুপেয় পানি পাওয়া যায়। কিন্তু এখন পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সুপেয় পানির সংকট দেখা দিচ্ছে। যে কারনে হ্যান্ড টিউবওয়েলে পানি উঠছে না।

তিনি বলেন, বগুড়ায় তিন ইঞ্চি করে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে।  চলতি বছরের মার্চ-এপ্রিলে বগুড়া সদর এলাকায় ৩ ইঞ্চি করে পানির স্তর নেমে গেছে। শুধু তাই নয়, গত বছর ২০২৩ সালেও একইভাবে ৩ ইঞ্চি করে পানির স্তর নিচে নেমে যায়। কিন্তু দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় পানির স্তর পুনর্ভরণ হচ্ছে না।  তাই বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিচ্ছে।

যদিও তিনি বলেন, তবে এ অবস্থা সাময়িক। বৈশাখ-জ্যেষ্ঠ মাসে বৃষ্টি শুরু হলেই আপনা-আপনি পানির সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, দীর্ঘ অনাবৃষ্টি, ভূ-গর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহার, শ্যালো মেশিন দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে পানি তোলা, এবং পুকুর-খাল-বিল ভরাটের কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, গ্রীষ্মকালের শুরুতেই এবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। অধিকাংশ টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। অথচ গ্রামে সুপেয় পানির জন্য টিউবওয়েলই শেষ ভরসা। তারা বলেন, বাড়ির টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। পানি নিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে জানান সদরের শাখারিয়া গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা।  একই অবস্থা তাদের আশপাশে গ্রামেও।

ভুক্তভোগীদের মতে, আগে ২০-৩০ মিনিট মোটর চালালেই বাড়ির ছাদের ট্যাংক পূর্ণ হয়ে যেত। কিন্তু এখন বেশি সময় লাগছে। মোটর চালালেও প্রয়োজনীয় পানি মিলছে না। এভাবে চলতে গিয়ে নষ্ট হচ্ছে অনেকের বৈদ্যুতিক মোটর।

শিবগঞ্জের কিচক গ্রামের এক কৃষক জানান, সকালের দিকে টিউবওয়েল অনেকবার চাপার পর সামান্য পানি উঠছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটিও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এলাকার মানুষের মাঝে এখন পানির জন্য হাহাকার শুরু হয়ে যাচ্ছে।

শিবগঞ্জ উপজেলার কিচক ইউনিয়নের খামটা গ্রামের কৃষক শাহজাহান বলেন, শুধু হস্তচালিত টিউবওয়েলই নয়, শ্যালো মেশিনেও (গভীর নলকূপ) পানি কম উঠছে। মাঠে আগে যেখানে এক বিঘা জমি ভেজাতে ২ ঘণ্টা লাগতো, এখন সেই জমি ভেজাতে ৩-৪ ঘণ্টা লাগছে।  গ্রামে করতোয়া নদীতেও পানি শুকিয়ে গেছে।

দীর্ঘ অনাবৃষ্টি, বাড়তি তাপমাত্রা ও সেচ দেওয়ার জন্য ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন এ ভোগান্তির কারণ বলে মনে করছেন সদর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা। ভূ-পৃষ্ঠীয় পানি বা সারফেস ওয়াটারের ব্যবস্থা করা সম্ভব না হলে আগামিতে এ সংকট আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা এই কর্মকর্তার।

তিনি আরও বলেন, বগুড়া সদরে সাবমারসিবল পাম্পের ব্যবহার বাড়ছে। সবাই যেভাবে ভূগর্ভের পানি তুলছে, সেভাবে পুনর্ভরণ হচ্ছে না। এখনই লাগাম টেনে না ধরলে ভবিষ্যতে মারাত্মক পানি সংকটে পড়তে হবে।

অপরদিকে,গবেষকরা বলছেন, মাটির বিশেষ ধরনের কারণে গভীর জলাধারের উপরিভাগে পুরু কাদামাটির স্তর আছে। বৃষ্টির পানি গভীর জলাধারে প্রবেশ করে কম। ফলে ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে যে পরিমাণ পানি উঠছে, সেভাবে পুনর্ভরণ হচ্ছে না।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS