ভিডিও

অসম্মানিত হচ্ছেন প্রকৃত সাংবাদিকরা বগুড়ায় বেড়েছে অপসাংবাদিকতা 

প্রকাশিত: মে ০২, ২০২৪, ১০:৫৯ রাত
আপডেট: মে ০৩, ২০২৪, ১২:২৭ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

স্টাফ রিপোর্টার: বগুড়ায় সাংবাদিক হওয়া এখন সহজ। একটি স্মার্ট ফোন ও একটি বুম হাতে থাকলেই যে কেউ বনে যাচ্ছে ‘সাংবাদিক’। এই কথিত সাংবাদিকরাই ফেসবুক পেইজ খুলেই সাংবাদিক সাজে, সাংবাদিকতার নামে করে অপসাংবাদিকতা।

কে আসল আর কে নকল সাংবাদিক, তা চেনা বড় দায়। এ নিয়ে বিভ্রান্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। তথাকথিত সাংবাদিকদের কারণে প্রকৃত সাংবাদিকদের সম্মান ক্ষুন্ন হচ্ছে। তথাকথিত ছদ্মবেশি সাংবাদিকদের মধ্যে কেউ আবার কার্ডধারী, কেউ নামধারী। এদের প্রধান লক্ষ্যই চাঁদাবাজি, ব্লাকমেইল, গুজব, অপপ্রচারের মাধ্যমে টাকা উপার্জন করা।ৎ

অনুসন্ধানে জানা যায়, বগুড়ায় তথাকথিত, ভুয়া আর নকল সাংবাদিকের দৌরাত্ম খুব বেশি। মোটর সাইকেলে (নিবন্ধিত বা অনিবন্ধিত) প্রেস লিখে শহর, উপজেলা, ইউনিয়ন এমন কি গ্রামে গ্রামে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে দুইশ’রও বেশি তথা কথিত সাংবাদিক। পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসি, পেশাদার ছিনতাইকারি, জেল খাটা মাদক ব্যবসায়ী, ভূমিদস্যু, ট্রাকচালক, সিকিউরিটি গার্ড, মুদি দোকানি, ডাব বিক্রেতা, পান বিক্রেতাও এখন ‘সাংবাদিক’। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন পেশার মানুষকে হুমকি দিয়ে চাঁদা আদায় করছে তারা। সেইসাথে পত্রিকায় খবর ছাপানোর বা তাদের অনলাইন পেইজে ছবিসহ সংবাদ প্রকাশের ভয় দেখিয়ে মানুষকে ব্লাকমেইল করে হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা। ভুয়া সাংবাদিকদের কাছে রীতিমত জিম্মি হয়ে পড়েছেন ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ।

তথাকথিত সাংবাদিকদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে নাম সর্বস্ব পত্রিকা, অনুমোদনহীন  ইন্টারনেট প্রটোকল (আইপি) টিভি, অনলাইন টিভি বা কথিত অনলাইন পোর্টাল এর মালিক ও সম্পাদক। এসব ভূঁইফোড় প্রতিষ্ঠানের মালিক ও সম্পাদকের কাছ মোটা টাকার বিনিময়ে পরিচয়পত্র নিয়ে ‘হঠাৎ সাংবাদিক’ বনে যাওয়া একশ্রেণির চাঁদাবাজরা রীতিমতো কলঙ্কিত করছে মহান এ পেশাকে। ‘আন্ডার গ্রাউন্ড’ পত্রিকার এক শ্রেণির মালিক-সম্পাদক ভূঁইফোড় প্রতিষ্ঠান খুলে টাকার বিনিময়ে দুর্বৃত্তদের হাতে সাংবাদিকতার পরিচয়পত্র তুলে দিচ্ছে। সেই পরিচয়পত্র গলায় ঝুলিয়ে সাংবাদিক সেজে এরা মানুষের সাথে প্রতারণা ও চাঁদাবাজি করে বেড়াচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায় বগুড়া জেলার সদর, শাজাহানপুর, শেরপুর, ধুনট, নন্দীগ্রাম, দুপচাঁচিয়া, কাহালু, আদমদিঘী, শিবগঞ্জ, গাবতলী, সারিয়াকান্দি ও সোনাতলাসহ ১২ টি উপজেলা সদরে এমনকি প্রত্যন্ত গ্রামেও ভুয়া সাংবাদিক, ফেসবুক সাংবাদিক, সোর্স সাংবাদিক, দলবাজ সাংবাদিক, আইপি টিভি ও ফেসবুক লাইভ সাংবাদিকসহ আরও কতশত পদ-পদবির সাংবাদিকের দৌরাত্ম্যে জনজীবন অতিষ্ঠ।

কে আসল, কে নকল, কে ভূয়া তা নিয়ে যাচাই-বাছাই করার মতো শ্রম দেয়ার সময় নেই সাধারণ মানুষের। মাঝে মধ্যে বগুড়ায় পুলিশ ও র‌্যাবের হাতে ভুয়া সাংবাদিক ও প্রতারক সাংবাদিকও গ্রেপ্তারও হয়। তবুও থেমে নেই ভুয়া সাংবাদিকদের দাপট।

জানা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ফেসবুক খুলেই যেমন খুশি তেমনভাবে রঙ-বেরঙের কথিত নিউজ পোর্টালগুলো রীতিমতো ভয়ঙ্কর রূপে আবির্ভূত হয়েছে। ওয়ান ম্যান ওয়ান পোর্টাল, প্রত্যেকেই এডিটর এমন স্লোগান আদর্শ বানিয়েছে, ব্যক্তিগত স্বার্থ সিদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে বগুড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহমুদুল আলম নয়ন বলেন,‘তথা কথিত’ এ সব ভুয়া সাংবাদিক আসলে দুর্বৃত্ত। চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে তারা যুক্ত। তথাকথিত সাংবাদিকরা গুজব ছড়িয়ে পরিবার, সমাজ, দেশ ও জাতির ক্ষতি করছে। এদের কারণে পেশাদার সাংবাদিকদের সম্মান ক্ষুন্ন হচ্ছে। সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, তারা সাংবাদিকতার নাম ভাঙিয়ে নানা অপরাধ করছে। তিনি বলেন, ঐক্যবদ্ধভাবে এই তথাকথিত সাংবাদিকদের প্রতিরোধ করতে হবে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বগুড়া প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে বগুড়ার জেলা প্রশাসক মো: সাইফুল ইসলামও বলেন, ভুয়া বা তথাকথিত সাংবাদিকদের কারণে প্রকৃত পেশাজীবি সাংবাদিকরা অসম্মানিত হচ্ছেন। যারা অপসাংবাদিকতা করছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চাই। কিন্তু কারা ভুয়া বা তথাকথিত সাংবাদিক তা যাচাই-বাচাই করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এ জন্য বগুড়া প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ ও বগুড়া সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দের সাথে বসতে হবে। একসাথে বসে ব্যবস্থা নেয়া গেলে বগুড়ায় অপসাংবাদিকতা কমবে। জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ইতোমধ্যে বগুড়া প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ প্রকৃত সাংবাদিকদের একটি নামের তালিকা তাকে দিয়েছেন। তালিকাটি তথ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

বগুড়া সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি জেএম রউফ বলেন, ভূয়া সাংবাদিকরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদাবাজি করছে। ছবি তুলে ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়ে প্রতারণা করছে। এদের অপ-সাংবাদিকতার কারণে প্রকৃত সাংবাদিকদের সম্মান ক্ষুন্ন হচ্ছে। তিনি এসব ভূয়া সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন পত্রিকা বা অন্যান্য গণমাধ্যমে সাংবাদিকতার নামে যারা অপসাংবাদিকতা করছে, এদের অধিকাংশের বেতন নেই। তারা নিজেরাও বলে বেতন না পাওয়ার কারণেই এদের চাঁদাবাজি করতে হয়। সরকারি দাায়িত্বশীলদের উচিত, কোন পত্রিকা কী অবস্থায় আছে, এর ডিক্লারেশন পূণর্মূলায়ন করা।

সাংবাদিক ইউনিয়ন বগুড়ার সভাপতি গণেশ দাস বলেন ইদানিং সাংবাদিকতার নামে অপসাংবাদিক বেড়ে গেছে। এদের কারণে মূলধারার সাংবাদিকদেরকেও ঐ চোখে দেখে সাধারণ অনেকে। পত্রিকা মালিক ও ডিক্লারেশনদাতাদের খোঁজ নেওয়া উচিত, সাংবাদিকতার পরিচয়ে কে-কী করছে।

এ ব্যাপারে র‌্যাব-১২ বগুড়া ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার (পুলিশ সুপার) মীর মনির হোসেন বলেন, ভুয়া বা তথাকথিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চায় র‌্যাবও। কিন্তু তথাকথিত ও ভুয়া সাংবাদিকদের চিহিৃত করা কঠিন। এ বিষয়ে বগুড়া প্রেসক্লাব ও বগুড়া সাংবাদিক ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর ও মিডিয়া) মোঃ শরাফত ইসলাম বলেন, অপরাধ যে-ই করুক, সবার জন্যই সমান আইন। পত্রিকা বা অনলাইন  যেভাবেই হোক, কেউ অপসাংবাদিকতা করলে তার বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS