ভিডিও

নতুন আতঙ্কের নাম রাসেলস ভাইপার

প্রকাশিত: জুন ২২, ২০২৪, ১০:৪৪ রাত
আপডেট: জুন ২৩, ২০২৪, ১২:০১ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

শাওন রহমান : নতুন আতঙ্কের নাম রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপ। গত কয়েক মাস ধরেই বিষধর সাপটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ নানা মাধ্যমে নেতিবাচক খবর প্রচার হচ্ছে। বিলুপ্ত প্রায় সাপটি দেশে তার বিস্তার ঘটিয়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। এর বিচরণ আগে বরেন্দ্র এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন দেখা যাচ্ছে প্রায় সারা দেশ জুড়েই।

২০২৩ সালে প্রকাশিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার (এনসিডিসি) করা গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে প্রতিবছর প্রায় ৪ লাখ ৩ হাজার মানুষ সাপের দংশনের শিকার হন। এরমধ্যে সাড়ে ৭ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। আর শুধুমাত্র চলতি বছরে এখন পর্যন্ত রাসেলস ভাইপারের কামড়ে ১৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, যাদের বেশিরভাগই কৃষক ও জেলে।

জানা গেছে, ২০২০ সালের বর্ষাকালে করোনা মহামারির মধ্যেই পাবনায় হঠাৎ করেই রাসেলস ভাইপারের উপদ্রব দেখা দেয়। পদ্মার চরের ফসলের মাঠ, ঝোপঝাড় এমনকি বসতবাড়িতেও ব্যাপকহারে দেখা যায় সাপটিকে। এরপর গত বছরের শেষের দিকেও করেই চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলের কয়েকটি গ্রামে সাপটির উপদ্রব বেড়ে যায়।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, দেশে প্রায় ১০৪ প্রজাতির সাপের মধ্যে ৩০ প্রজাতিই বিষধর। সবচেয়ে বেশি বিষধর রাসেলস ভাইপার। এটি সাধারণত ঘাস, ঝোপ, বন, ম্যানগ্রোভ ও ফসলের খেতে বাস করে। প্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাসেলস ভাইপারের প্রজননকাল মে থেকে জুলাই পর্যন্ত।

যে কারণে সাপটির দেখা যাচ্ছে বেশি। সাপটির অভিযোজন ক্ষমতা বেড়ে যাওয়ায় সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। আগামীতে এর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। বিষধর হিসেবে রাসেলস ভাইপার বিশ্বে পঞ্চম স্থানে থাকলেও হিংস্রতা আর আক্রমণের দিক থেকে প্রথমে অবস্থান। আক্রমণের ক্ষেত্রে সাপটি এতটাই ক্ষিপ্র যে ১ সেকেন্ডের ১৬ ভাগের ১ ভাগ সময়ে কামড়ের প্রক্রিয়া শেষ করে।

বাংলাদেশে রাসেলস ভাইপারের পুনরাবির্ভাব ও মানুষের ঝুঁকির বিষয়ে ২০১৮ সালে ‘জার্নাল অব দি এশিয়াটিক সোসাইাটিতে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায়, দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ১৭টি জেলাতেই রয়েছে রাসেলস ভাইপারের উপস্থিতি। উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের এসব জেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিচরণ ছিল রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়।

আজ শনিবার (২২ জুন) স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, রাসেলস ভাইপার নিয়ে আপনারা আতঙ্কিত হবেন না। রাসেলস ভাইপারের যে অ্যান্টিভেনম, সেটা আমাদের হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত মজুদ আছে। কোনো অবস্থাতেই অ্যান্টিভেনমের ঘাটতি রাখা যাবে না।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, সর্প দংশনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, রোগীকে দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া। অনতিবিলম্বে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে এ ক্ষেত্রে যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তোলা সম্ভব।

অপরদিকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সাপের কামড় এড়াতে করণীয় সম্পর্কে এক বিবৃতিতে যেসব এলাকায় রাসেল ভাইপার দেখা গেছে, সেসব এলাকায় চলাচলে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করাসহ লম্বা ঘাস, ঝোঁপঝাড়, কৃষি এলাকায় হাঁটার সময় সতর্ক থাকা এবং গর্তে হাত-পা না ঢুকানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। প্রয়োজনে জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩ নম্বরে কল করতেও বলা হয়।

বিবৃতিতে সাপ কামড়ালে করণীয় সম্পর্কে বলা হয়, দংশিত অঙ্গ নড়াচড়া করা যাবে না; পায়ে দংশনে বসে পড়তে হবে, হাঁটা যাবে না; হাতে দংশন করলে হাত নড়াচাড়া করা যাবে না, হাত-পায়ের গিড়া নাড়াচাড়ায় মাংসপেশীর সংকোচনের ফলে বিষ দ্রুত রক্তের মাধ্যমে শরীরে ছড়িয়ে গিয়ে বিষক্রিয়া ঘটতে পারে; আক্রান্ত স্থান সাবান দিয়ে আলতোভাবে ধুতে অথবা ভেজা কাপড় দিয়ে আলতোভাবে মুছতে হবে; ঘড়ি, অলঙ্কার বা তাবিজ থাকলে খুলে ফেলতে হবে; দংশিত স্থানে কাঁটা, সুই ফোটানো কিংবা কোনোরকম প্রলেপ লাগানো যাবে না; সাপে কাটলে ওঝার কাছে গিয়ে অযথা সময় নষ্ট করা যাবে না; যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে যেতে হবে; আতঙ্কিত না হয়ে নিকটস্থ সরকারি হাসপাতালে গিয়ে অ্যান্টিভেনম নিতে হবে।

সাপ বিষয়ে গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাসেলস ভাইপার নিয়ে অনেকে না জেনে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। সাপ দেখে সবাই ভয় পায় এবং এর কামড়ে মারা যায় এটাই মনে গেঁথে গেছে। চিকিৎসা নিলে যে ভালো হয়, সেটা সবাই জানে না বলেই আতঙ্কিত হয়। তবে এই সাপে কামড়ালে ১০০ মিনিটের মধ্যে চিকিৎসা নেওয়া না হলে মৃত্যু হতে পারে। তাই খুব দ্রুত নিকটস্থ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলেই সমাধান অনেকটা এগিয়ে নেওয়া যায়।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS