ভিডিও

মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত চার আসামির পালানোর ঘটনা

বগুড়া কারাগারের নিরাপত্তায় গলদ জেলার ও সুপারের দায়িত্ব অবহেলা

প্রকাশিত: জুন ২৭, ২০২৪, ০৯:২৮ রাত
আপডেট: জুন ২৮, ২০২৪, ০৭:৫০ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

মাসুদুর রহমান রানা : বগুড়া কারাগারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থার  ফাঁক-ফোঁকর গলিয়ে এবং জেল সুপার ও জেলারের দায়িত্ব অবহেলার কারনে কারাগারের ‘কনডেম’ সেলের  ছাদ কেটে পালিয়ে যায় চার দুর্ধর্ষ ফাঁসির আসামি। বিশ্লেষকরা বলছেন, কোন ভাবেই এর দায় এড়াতে পারেন জেল সুপার ও জেলার। এই ঘটনা নজীরবিহীন। এদিকে দায়িত্ব অবহেলার কারনে ৮ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

দায়ভার জেলার ও জেল সুপারের : সাবেক আইজি (প্রিজন) লিয়াকত আলী খান বলেন, বগুড়া কারাগার থেকে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত চার দুর্ধর্ষ আসামির পালিয়ে যাওয়ার জন্য সম্পূর্ন দায়ভার জেলার ও জেল সুপারের। এটা তাদের চরম ব্যর্থতা। তিনি বলেন, কারাবিধি অনুসরণ করে বন্দি পরিচালনা করা হলে ওই আসামিরা পালিয়ে যেতে পারতো না।

মানা হয়নি কারাবিধি: সাবেক আইজি (প্রিজন) লিয়াকত আলী খান বলেন, কারাবিধিতে কার, কী দায়িত্ব, কিভাবে কনডেম সেলে আসামি দেখভাল করতে হবে সবকিছু বলা আছে। একজন কারারক্ষী সার্বক্ষণিক কনডেম সেল নজরদারি করবেন। তার আর কোন দায়িত্ব নাই। কনডেম সেলের আসামিকে নজরদারি করাই তার দায়িত্ব। কিন্তু কারারক্ষী তার দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করেননি। সেইসাথে কারাবিধি অনুযায়ী কনডেম সেলগুলোতে সন্ধ্যার আগে আসামি লক আপে উঠবে। এ সময় জেলার নিজে প্রতিদিন সেলগুলোতে এসে আসামির খোঁজ নিবেন আসামির হিসাব ঠিক আছে কিনা। এটা জেলারের দায়িত্ব। কিন্তু জেলার তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেননি। এ ছাড়া জেল কোড অনুযায়ী জেল সুপারের বিষয়টি সুপারভাইস করার করার কথা। কিন্তু তিনিও সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেননি। এসব কারণে ওই দুর্ধর্ষ আসামিরা সেলের ছাদ কেটে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে। যদি জেল কোড অনুযায়ী কারারক্ষী, জেলার ও জেল সুপার দায়িত্ব পালন করতেন, তাহলে ওই আসামিরা পালিয়ে যেতে পারতো না। তাদের ব্যর্থতার কারনেই আসামি পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে।

কনডেম সেলে থাকার কথা বেজোড় আসামি: সাবেক আইজি (প্রিজন) লিয়াকত আলী খান আরও বলেন, প্রতিটি কনডেম সেলে কারাবিধি অনুযায়ী বেজোড় সংখ্যার যেমন ১ বা ৩ জন আসামি থাকার কথা। কিন্তু সেখানে চারজন আসামি একত্রে থাকলো কিভাবে। এই ৪ জনের মধ্যে আবার একই হত্যা মামলার ২ জন আসামি ছিল । এই সুযোগে তারা ওই কনডেম সেলে একত্রিত হয়ে পালানোর পরিকল্পনা করে। এই পরিকল্পনায় তারা সফল হয়েছে।

১৯১ বছরে পুরোনো বগুড়া কারাগার : বগুড়া কারাগার স্থাপিত হয়েছে ১৮৩৩ সালে ব্রিটিশ শাসন আমলে। কারাভবন ও কনডেম সেলগুলো সেই আমলের। তখন ভবন নির্মাণে লোহার রড ব্যবহার করা হতো না। ছাদ নির্মাণে চুন ও সুড়কি ব্যবহার করা হতো। বগুড়া কারাগারের  চারটি কনডেম সেলের ছাদ চুন ও সুড়কির তৈরি। ১৯১ বছর পুরোনো সেই কনডেম সেলগুলোর কার্যক্ষমতা কমে গেছে। তাই আসামিরা ছাদগুলো সুরঙ্গ করে কেটে ফেলতে পেরেছে। তবে প্রশ্ন হলো, এই ছাদ কাটতে যন্ত্রপাতি কীভাবে পেল ? কে দিল ছাদ কাটার যন্ত্রপাতি? এই রহস্য দানা বাঁধছে। যদিও পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তার ফাঁসির আসামিদের কাছ থেকে একটি ৪ দশমিক তিন ইঞ্চি লম্বা  স্টিলের পাত, একটি প্যাঁচানো প্লাস্টিকের রশি, একটি ৭ ইঞ্চি লম্বা স্ক্রু ডাইভার জব্দ করা হয়েছে। এই স্টিলের পাত ও স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে কৌশলে একমাস ধরে একটু একটু করে  ছাদ কেটে সুড়ঙ্গ তৈরি করে পালিয়ে যায়। তবে এসব দিয়ে সেলের ছাদ কেটে পালানো সম্ভব কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। 
কারাগারের ৪টি সেলের একই অবস্থা: কারা সূত্র জানায় কারাগারের ৪টি সেলের ছাদের একই অবস্থা। অপর তিনটি সেলে রয়েছে ভয়াংকর জঙ্গিসহ ফাঁসির আরও আসামিরা। তাই তাদের নিরপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
তিনগুণ বন্দি : বগুড়া কারাগারে হাজতি ও কয়েদিসহ রয়েছে তিনগুণ বন্দি। কারাগারের ধারণ ক্ষমতা মাত্র ৭০০ জন। আর গতকাল পর্যন্ত বন্দি ছিল ২ হাজার ২০০ জন। হাজতি ও কয়েদিদের গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে। তাদের নিরাপত্তা নিয়ে শংকা রয়েছে। তবে কারাগার থেকে আর কোন আসামি যাতে পালাতে না পারে সেজন্য নিরাপত্তা বাড়ানোসহ সার্বিক বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা: বগুড়া কারাগার থেকে চার ফাঁসির আসামির পলায়ন ও গ্রেপ্তারের পর বগুড়া কারাগারের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। শুধু বগুড়াই নয়, সারদেশেই কারাগারগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। কারা সূত্র জানায়, বগুড়া কারাগারের ৪টি সেন্ট্রিপোস্ট বাড়ানো হয়েছে। জনবল বাড়নো হয়েছে ২৮ জন। সেইসাথে কারাগারের দেয়ালের বাইরে ২৪ ঘন্টা ১২ জন কারারক্ষী দায়ত্ব পালন করছেন।

গ্রেপ্তার ৪ আসামিকে কারাগারে প্রেরণ : বগুড়া জেলা কারগার হতে পালানো মৃত্যুদন্ডাদেশপ্রাপ্ত কয়েদিরা হলো কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারি উপজেলার দিয়াডাঙ্গা গ্রামের মৃত আজিজুল হকের ছেলে  নজরুল ইসলাম মঞ্জুর (৬০), বগুড়া সদরের সাবগ্রাম ইউনিয়নের কুটুরবাড়ি পশ্চিমপাড়া এলাকার ইসমাইল ওরফে চাঁন মিয়ার ছেলে ফরিদ শেখ (২৮), কাহালু পৌরসভার মেয়র উপজেলা বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ক সভাপতি মো: আব্দুল মান্নানের ছেলে মো: জাকারিয়া (৩১) ও নরসিংদীর মাধবদী থানার ফজরকান্দি এলাকার মৃত ইসরাফিল খাঁর ছেলে আমির হোসেন ওরফে আমির হামজা (৩৮)। তাদেরকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গতকাল পুলিশ তাদের আদালতে হাজির করলে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠিয়ে দেন। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। এর আগে শহরের চেলোপাড়া চাষী বাজার থেকে স্থানীয় জনতার সহযোগিতায় পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS