ভিডিও

বগুড়ায় ৭৫৫টি সরকারি প্রাইমারি স্কুলে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য

প্রকাশিত: জুলাই ১৪, ২০২৪, ১০:৩৮ রাত
আপডেট: জুলাই ১৪, ২০২৪, ১০:৩৮ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

নাসিমা সুলতানা ছুটু : বগুড়ার  ১ হাজার ৬০১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৭৫৫টি স্কুলে দীর্ঘদিন থেকে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এরমধ্যে ২৪২টি স্কুলে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে সহকারী শিক্ষক চলতি দায়িত্ব হিসেবে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন এবং ৫১৩টি স্কুলে জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

বিভিন্ন কারণে এ পদগুলো শূন্য হলেও পরবর্তীতে আর পূরণ হয়নি। এদিকে প্রধান শিক্ষকের পদগুলো শূন্য থাকায় পাঠদানসহ দাপ্তরিক কাজে বিদ্যালয়গুলোতে নানা সমস্যার পাশাপাশি সার্বিক শিক্ষায় বিঘ্ন ঘটছে।  জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, আদমদীঘি উপজেলায় ৯৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৯টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। ওই স্কুলগুলো ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে চলছে।

প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব পালন করছেন ১৫টি স্কুলে। মাত্র ৪৪টি স্কুলে রয়েছে প্রধান শিক্ষক। কাহালুতে ১১৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৫৪টি স্কুলেই প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এরমধ্যে ১২টি স্কুলে চলতি দায়িত্ব পালনকারী শিক্ষক রয়েছেন এবং ৪২টি স্কুল চলছে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে। গাবতলী উপজেলার ১৬৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৭৭টি বিদ্যালয়েই দীর্ঘদিন থেকে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে।

এরমধ্যে চলতি দায়িত্বে রয়েছেন ৩৮জন এবং ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চলছে ৩৯টি বিদ্যালয়। দুপচাঁচিয়া উপজেলায় ৮৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৪টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এরমধ্যে চলতি দায়িত্ব পালন করছেন ১৫টি বিদ্যালয়ে এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে চলছে ১৯টি বিদ্যালয়। ধুনট উপজেলায় ২০২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১১৪টি বিদ্যালয়ের শূন্য পদের মধ্যে ৩১টি চলছে চলতি দায়িত্ব দিয়ে এবং ৮৩টি ভারপ্রাপ্ত প্রধান দিয়ে।

নন্দীগ্রাম উপজেলায় ১০৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫৬টি শূন্যপদের মধ্যে ২টিতে চলতি দায়িত্ব এবং ৫৪টি ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চলছে। বগুড়া সদর উপজেলার ১২২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে২৮টিতে প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদ রয়েছে। এরমধ্যে ৪টি চলছে চলতি দায়িত্বের প্রধান শিক্ষক দিয়ে এবং ২৪টি বিদ্যালয়ে রয়েছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। শেরপুর উপজেলার ১৩৭টির মধ্যে ৬৯টি বিদ্যালয়ে শূন্য পদ রয়েছে। এরমধ্যে ১৩টি চলছে চলতি দায়িত্ব দিয়ে এবং ৫৬টি ভারপ্রাপ্ত প্রধান দিয়ে।

শিবগঞ্জ উপজেলায় ১৬২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪৯টি শূন্যপদের মধ্যে ২৭টি চলছে চলতি দায়িত্ব দিয়ে এবং ২২টি ভারপ্রাপ্ত প্রধান দিয়ে। সারিয়াকান্দি উপজেলায় ১৬৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১১৬টিতেই প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এরমধ্যে ৪৭টি বিদ্যালয়ে চলতি দায়িত্ব এবং ৬৯টিতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান দিয়ে চলছে।

সোনাতলা উপজেলায় ১২৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৬১টি বিদ্যালয়েই প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এরমধ্যে ২৩টি চলছে চলতি দায়িত্বের প্রধান দিয়ে এবং ৩৮টি চলছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান দিয়ে। শাজাহানপুর উপজেলায় ১২১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৫টি চলতি দায়িত্ব দিয়ে এবং ২৮টি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে চলছে।

প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন থেকে বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবসর, মৃত্যু, পদোন্নতি ও সরাসরি প্রধান শিক্ষককের পদে নিয়োগ না থাকায় পদগুলো শূন্য হয়ে পড়েছে। কোথাও জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব পালন করছেন কোথাও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন।

তবে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকগণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বহুবিদ দাপ্তরিক কাজ করতে গিয়ে শ্রেণিকক্ষে নিয়মিত পাঠদান করাতে পারছেন না। জানা গেছে, আইনি জটিলতার কারণে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দিতে পারছে না প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

কারণ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির নেতারা প্রধান শিক্ষক পদে নিজেদের পদোন্নতি চেয়ে আদালতে মামলা করে রেখেছেন। এ ছাড়া সহকারী শিক্ষককে প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব দিলেও অনেক শিক্ষকের ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন হয়েছে-এমন অভিযোগে অনেক শিক্ষকও আদালতে মামলা করে রেখেছেন। ফলে উদ্যোগ নিয়েও সারা দেশে প্রায় ২১ হাজার প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদ পূরণ করতে পারছে না মন্ত্রণালয়।

প্রধান শিক্ষকের সংকট থাকায় সহকারী শিক্ষককে ওই পদের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে বলে শ্রেণিকক্ষে সমস্যা হচ্ছে। প্রধান শিক্ষক ছাড়া পরিচালিত বিদ্যালয়ে প্রশাসনিক কাজ সাধারণত সহকারী শিক্ষক চালিয়ে নেন। সহকারী শিক্ষক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নিলে কর্মঘণ্টার বেশির ভাগ সময় ব্যস্ত থাকতে হয় প্রশাসনিক কাজে। ফলে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ব্যাহত হয়। এর মাশুল দিচ্ছে অল্প বয়সী শিশুরা। এ ছাড়া অভিজ্ঞতা না থাকায় দাফতরিক কাজে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন তারা।

তথ্য মতে, সহকারী শিক্ষকদের করা রিটের জের ধরে বন্ধ ছিল প্রধান শিক্ষক নিয়োগ। গত বছর ওই রিটের নিষ্পত্তির পর বাধা কেটে যায়। তবে আরেক রিটের কারণে আটকে যায় পদোন্নতি। প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ নিয়ে সাবেক রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের করা একটি রিটের কারণে পদোন্নতির ওপর স্থগিতাদেশ দেন উচ্চ আদালত।

পদোন্নতিসংক্রান্ত বিধিমালা অনুযায়ী, সরাসরি প্রধান শিক্ষক পদে শূন্য আসনের ৩৫ শতাংশ নিয়োগের বিধান রয়েছে। বাকি ৬৫ শতাংশ শূন্য পদে সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করতে হবে। পদটি তৃতীয় শ্রেণি থাকার সময় সরাসরি নিয়োগ দিত প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত হওয়ায় নিয়োগ দিতে হবে পিএসসিকে।

বগুড়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ রেজোয়ান হোসেন জানান, বিভিন্ন সময়ে জেলায় ৭৫৫টি প্রাথমিকে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য হয়েছে। এরমধ্যে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে ২৪২টি স্কুলে সহকারি শিক্ষক প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন এবং ৫১৩টি বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে চলছে।

ওই বিদ্যালয়গুলোতে ২০১৬ সাল থেকে প্রধান শিক্ষক চেয়ে কয়েক দফা প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। যারা চলতি দায়িত্বে রয়েছেন তারাই পদোন্নতি পেয়ে প্রধান শিক্ষক হবেন। আশা করা যাচ্ছে খুব শীঘ্রই এই সংকট দূর হতে পারে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS