ভিডিও

‘ভাই আমি আন্দোলনে, মা ও স্ত্রী-সন্তানকে দেখে রেখো..’

ঢাকায় নিখোঁজ বগুড়ার মনিরুজ্জামানের খোঁজ মেলেনি আজও

প্রকাশিত: আগস্ট ০৯, ২০২৪, ১০:৩৭ রাত
আপডেট: আগস্ট ০৯, ২০২৪, ১০:৩৭ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

মাসুদুর রহমান রানা : ঢাকায় ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেয়া বগুড়ার পেশাজীবি মনিরুজ্জামান মিলন এখন কোথায়? তিনি কি বেঁচে আছেন,নাকি শহীদ হয়েছেন সেই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি গত ৫ দিনেও। ছেলের ফেরার আশায় ছবি হাতে নিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুণছেন মমতাময়ী মা মেরিনা বেগম। বাড়ির দরজায় অশ্রুসিক্ত নয়নে পথ চেয়ে ছেলের অপেক্ষায় আজও বসে আছেন এই মা।

স্ত্রী সবিতাও অপেক্ষায় তার প্রিয়তম স্বামীর জন্য। মাত্র ১১ মাস বয়সী শিশু কন্যা মানসুরাকে ঘরে রেখেই বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে গিয়ে আর বাড়ি ফেরেননি মনিরুজ্জামান। বড় ভাই স্কুল শিক্ষক সামিউল ইসলাম মিল্টন ঢাকায় বিভিন্ন হাসপাতালে, মর্গে মর্গে মনিরুজ্জামানের লাশ খুঁজতে খুঁজতে এখন ক্লান্ত। কিন্তু কোথাও খোঁজ মিলছে না মনিরুজ্জামানের। চরম উদ্বেগ-উৎকন্ঠার মধ্যে তার পরিবার।

নিখোঁজ মনিরুজ্জামানের বাড়ি বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার ভেলাবাড়ি ইউনিয়নের জোড়গাছা গ্রামে। তার বাবার নাম মৃত সুরুজ্জামান। তার বড় ভাই সামিউল ইসলাম মিল্টন ভান্ডারবাড়ি সালেহা জহুরা উচ্চ বিদ্যালয়ের  শিক্ষক।

সামিউল ইসলাম মিল্টন বলেন, তার ছোট ভাই মনিরুজ্জামান ঢাকায় সাভার আশুলিয়ায় কোরিয়ান ডাইং ইপিজেডে সিনিয়য় মেকানিক পদে  চাকরি করেন। গত ৫ আগস্ট ঢাকায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে মনিরুজ্জামান অংশ নেন। তার আগে ওই দিন সকাল ১০ টা এবং বিকেল ৩ টার দিকে মোবাইল ফোনে মনিরুজ্জামানের সাথে তার দু’বার কথা হয়। এ সময় মানিরুজ্জামান তাকে বলেন, ‘ভাই আমি স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে অংশ নিয়েছি।

আমার মা ও স্ত্রী-সন্তানকে দেখে রেখো’। এরপর থেকে তাকে আর ফোনে পাওয়া যায়নি। এতে আমরা খুব উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি। বহুবার ফোন দিয়েও তার অবস্থান জানা যায়নি। পরের দিন ৬ আগস্ট সকালে মনিরুজ্জামানের খোঁজে বগুড়া থেকে ঢাকায় যাই। সেখানে গিয়ে পৌঁছানোর পর আশুলিয়া থানার সামনে পুলিশের গাড়িতে ৬টি আগুনে পোড়া লাশ দেখতে পাই।

এরপর তার ভিতর তার ভাই মনিরুজ্জামানের লাশ শনাক্তের চেষ্টা করি। কিন্তু তার খোঁজ পাইনি। এরপর তিনি ঢাকা মেডিকেল, পিজি, সরওয়ার্দী, কুর্মিটোলা ও চীন মৈত্রী হাসপাতালে এবং মর্গে মর্গে ছোট ভাই মনিরুজ্জামানের লাশ খুঁজতে থাকি। মর্গে অসংখ্য পোড়া ও গুলিবিদ্ধ লাশের মধ্যে তার ভাইয়ের লাশ তিনি খুঁজে পাননি। তার ধারণা, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে গিয়ে তার ভাই শহীদ হয়েছেন।

অথবা অজ্ঞাত হিসাবে তার ভাইকে গণ কবর দেয়া হয়েছে। কিংবা তার ভাইকে গুম করা হয়েছে। তিনি বলেন, যাই করা হয়ে থাক, ভাইয়ের পরিণতি জানতে চাই। যেখানে কবর দেয়া হয়েছে সেই চিহৃটুকু দেখতে চাই। এ দিকে, ছেলে মনিরুজ্জামানকে হারিয়ে মা মেরিনা বেগম শোকে কাতর। অশ্রুসিক্ত নয়নে তিনি বলেন, আমার ছেলে মনিরুজ্জামানকে আমার বুকে ফিরে চাই।

তোমরা আমার সন্তানকে জীবিত বা মৃত ফিরে দাও। আমি আর এই ভার সহ্য করতে পারছি না। উল্লেখ্য, মনিরুজ্জামান দুই ভাই এক বোনের মধ্যে মেজো। মানসুরা নামে তার ১১ মাসের একটি মেয়েকে রেখে ঢাকায় আন্দোলনে গিয়ে নিখোঁজ হন।

তার স্ত্রী সবিতা স্বামীকে হারিয়ে এখন পাগল প্রায়। তার পরিবার চলতো তারই আয়ে। এখন তার পরিবারে আয়-রোজগার বন্ধ। উপর্জনক্ষম মনিরুজ্জামানকে হারিয়ে পরিবারটি এখন দিশেহারা।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS