ভিডিও

সোনার দামে প্রতিদিনই ভাঙছে রেকর্ড ব্যবসায় ধস, ব্যাপক বেকারের আশঙ্কা

বিয়ের গহনা বানাতে হিমশিম অভিভাবকরা

প্রকাশিত: আগস্ট ২১, ২০২৪, ১১:৩৩ রাত
আপডেট: আগস্ট ২১, ২০২৪, ১১:৩৩ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

হাফিজা বিনা : লাগামছাড়া হয়ে পড়েছে সোনার দাম। গতকাল পর্যন্ত দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে এই মূল্যবান ধাতব। এতে করে দোকানগুলোতে সোনা কেনার ক্রেতার চেয়ে বিক্রি করার মানুষ বেশি আসছেন। দোকানগুলোতে ক্রেতা সংকটে পড়েছে  ব্যবসায়ীরা।

চাপ কমেছে স্বর্ণকারদের কারখাতেও। এভাবে চলতে থাকলে খুব শিগগিরই বন্ধ হতে চলেছে ছোট ছোট স্বর্ণের দোকান এবং তার সাথে সাথে এর সাথে সংশ্লিষ্ট বিপুল সংখ্যক মানুষ বেকার হয়ে পড়বেন বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ী নেতারা। এদিকে বিয়ের মৌসুমে সোনার দাম বাড়ার কারণে বেকায়দায় পড়েছেন ক্রেতা এবং বিক্রেতা দুই পক্ষই। এদিকে হলমার্ক ছাড়া সোনা না কিনতে ব্যবসায়ীরা পরামর্শ দিয়েছেন।

গত তিনদিনের ব্যবধানে দেশে দুই দফায় বাজারে সোনার দাম ভরিতে ৪ হাজার ৪২১ টাকা বেড়েছে । এতে ভালো মানের এক ভরি সোনার দাম দাঁড়াচ্ছে প্রায় এক লাখ পঁচিশ হাজার। দেশের ইতিহাসে এটিই এখন পর্যন্ত সোনার সর্বোচ্চ দাম। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) গতকাল মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়, যা আজ বুধবার (২১ আগস্ট) থেকে কার্যকর হয়েছে।

নতুন দর অনুযায়ী, হলমার্ক করা প্রতি ভরি ২২ ক্যারেট সোনার ভরি হবে ১ লাখ ২৪ হাজার ৫০০ টাকা। এ ছাড়া ২১ ক্যারেট সোনা ১ লাখ ১৮ হাজার ৮৩২ টাকা, ১৮ ক্যারেট সোনা ১ লাখ ১ হাজার ৮৬১ টাকা ও সনাতনপদ্ধতির সোনার ভরি ৮৪ হাজার ২১৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আজ বুধবার (২১ আগস্ট) বগুড়ার সোনার দোকানগুলোতে গিয়ে দেখা যায় মালিক এবং কর্মচারীরা অনেকটাই অলস সময় কাটাচ্ছেন। নিজেদের মধ্যে গল্প করছেন। আবার আগে অর্ডার দেয়া গহনা নিতে আসছেন দু’একজন। আর আসছেন পুরাতন গহনা বিক্রি  করতে দুই একজন। নতুন করে গহনা বানাতে যারা আসছেন তারাও আসছেন খুব কম সোনা  দিয়ে ছোট ছোট গহনা বানাতে। তারা বলছেন খুব খারাপ সময় চলছে এই ব্যবসায়।

গতকাল মঙ্গলবার বগুড়ার নিউ মার্কেটের একটি দোকানে বিয়ের জন্য গহনা বানাতে এসেছেন সুমনা, মা সাবিনা ও বোন রুমানা। আর এক মাস পর বিয়ে। বাবা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শাজহাজাহান আলী মেয়ের গহনার জন্য জমা করেছেন দেড় লাখ টাকা।  ভেবেছিলেন হাত ও গলার কিছু একটা বানিয়ে দেবেন।

কিন্তু  দোকানে এসে  মনটা খারাপ হয়ে গেল।  শেষে ব্রোঞ্জের ওপরে সোনা দিয়ে হাতের একটা বালা ও কানের একটা দুল বানাতে দিল। মা মেয়েকে বুঝাচ্ছেন, সোনা নেই তো কী হয়েছে, এ্যান্টিক দিয়ে রানীর মত করে সেজে  বিদায় করবেন মেয়েকে।  এতে করে সাধ্য না থাকলেও সাধ তো পূরণ হবে।

বগুড়া নিউ মার্কেটের  নিউ আল আমিন জুয়েলার্সের  স্বত্তাধিকারী এবং জেলা জুয়েলার্স এসোসিয়েশনের (বাজুস) সাধারণ সম্পাদক  ফিরোজ আহম্মেদ বাবু বলেন, দফায় দফায় দাম বাড়ার কারণে স্বর্ণ এখন সাধারণ মানুষের সাধ্যের বাইরে চলে গেছে। সাথে সাথে ব্যবসায় ধ্বস নেমেছে ব্যবসায়ীদের। সারাদিন দোকান খুলে বসে থেকে দুই একজন ক্রেতা আসছেন।

তাও খুব সামান্য সোনা দিয়ে গহনা বানাতে। তিনি বলেন দফায় দফায় দাম বাড়ার ফলে ব্যবসায়ীরাও বিপদে পড়ছেন। যে দামে অর্ডার নিচ্ছেন দুদিন পর আবার দাম বাড়ার ফলে তাদের ভ’র্তুকি দিত হচ্ছে। নিজেদের সংসার, সাথে কর্মচারীদের বেতন দিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। সব কিছু কেমন স্ববির হয়ে পড়ছে যেন।

এই অবস্থায় ক্রেতারা যেন প্রতারিত না হন সে জন্য গহনা কেনার আগে অবশ্যই হলমার্ক দেয়া গহনা কেনার জন্য সচেতনতা অবলম্বন  করতে বলেছেন তিনি। অন্যান্য দোকানের মত একই কথা স্বীকার করলেন বগুড়ার বাজুসের সভাপতি ও  স্বর্ণমহল জুয়েলার্সের স্বত্তাধিকারী মোঃ মোতলেবুর রহমান  রাতুল।

তিনি জানান বগুড়া জেলায় নিবন্ধনকৃত সোনার দোকানের সংখ্যা ২শ’। সোনার সর্বোচ্চ দামের কারণে প্রায় প্রতিটি দোকান ক্রেতা সংকটে ধুকছে। নিম্নবিত্তরা অনেক আগেই এই দামি পণ্যটি কেনা ছেড়ে দিয়েছেন। এখন মধ্যবিত্ত পরিবারেও সাধ্যের বাইরে চলে গেছে সোনা। অতি প্রয়োজনে কাটছাট করে এ্যান্টিক দিয়ে  সারছেন সাধ-আহলাদ।

এভাবে চলতে থাকলে আর টিকে থাকতে পারবে না ছোট ছোট দোকানিরা। এরই মধ্যে অনেক ব্যবসায়ী সোনা ছেড়ে এ্যান্টিকের ব্যবসা ধরেছেন। তিনি আরও জানান, ২০২৩ সালে কয়েক দফায় সোনার দাম বেড়ে প্রথমবারের মতো লাখ টাকা ছাড়িয়ে যায়। গত বছর দেশের বাজারে প্রায় ২৯ বার সোনার দাম সমন্বয় করে জুয়েলার্স সমিতি। এর মধ্যে দাম কমানো হয়েছে ১১ বার, বাড়ানো হয়েছে ১৮ বার।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS