ভিডিও

সফল জননী গীতা আগরওয়ালা ও কিছু কথা

প্রকাশিত: মার্চ ২২, ২০২৪, ০৪:৩১ দুপুর
আপডেট: মার্চ ২২, ২০২৪, ০৪:৫০ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

আক্কেলপুরে (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি : গীতা আগরওয়ালা একজন সফল জননী হিসেবে এবার আক্কেলপুর উপজেলা থেকে জয়িতা সম্মাননা পেয়েছেন। অদম্য নারী গীতা আগরওয়ালা  বলেন, আমার  স্বামী ওমপ্রকাশ আগরওয়ালা একজন সাংবাদিক ও সমাজকর্মী। আমাদের পরিবার ছিল মধ্যবিত্ত। আমার শ^শুর বিভিন্ন হাট বাজারে কাপড় বিক্রি করে পরিবার-পরিজন নিয়ে খুব কষ্টে সংসার চালাতেন।

সংসারে সব সময় অভাব-অনটন লেগেই থাকতো। এর মধ্যে ছেলে-মেয়েদের সুশিক্ষিত করার লক্ষ্যে নিজেদের সব সুখ ত্যাগ করে তাদের মানুষ করার জন্য জীবন যুদ্ধ চালিয়ে যান। আমার শ^শুর-শাশুড়ির ৬ ছেলে-মেয়েকে দশম শ্রেণি থেকে বি.এ পর্যন্ত লেখাপড়া করিয়েছেন। আমার শাশুড়ির অদম্য ইচ্ছা ছিল তার প্রথম সন্তান আমার স্বামী ওমপ্রকাশ আগরওয়ালাকে ডাক্তার বানানো। তিনি রাজনীতি ও সামাজিক কাজে জড়িয়ে পড়ার কারণে শ^াশুড়ি মার আশা পূরণ করতে পারেনি। বাবা-মার চাপে ১৯৮৪ সালে জুলাই মাসে বিবাহ বন্ধনে আমরা আবদ্ধ হই।

আমি ফরিদপুর জেলার ফরিদপুর পৌরসভার চকবাজারের সত্যনারায়ন আগরওয়ালার মেয়ে। আমি দশম শ্রেণি পর্যন্ত লেখা পড়া করেছি। আমাদের সন্তান আসার পূর্বেই সুসন্তান করে গড়ে তোলার জন্য স্বপ্ন দেখতে থাকি। আমাদের বিয়ের এক বছর পর ঘর আলো করে প্রথম পুত্র সন্তান আসে। তার দুই বছর পরে কন্যা সন্তান জন্ম লাভ করে। আমরা দুজন মিলে অভাব-অনটনের মধ্যেও সন্তানদের মানুষ করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে থাকি। 

ছেলে চতুর্থ শ্রেণিতে উঠলে উচ্চ শিক্ষার জন্য বাংলাদেশ সরকারের (এনওসি) এর অনুমতি সাপেক্ষে আট বছর বয়েসে ভারতের পশ্চিম বাংলায় দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট দি আত্রাই ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে ও মেয়েকে আক্কেলপুর প্রাইমারি বালিকা বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভর্তি করাই। আমার শাশুড়িমার স্বপ্ন পূরণ করার লক্ষ্যে অভাব-অনটনকে উপেক্ষা করে আমি ও আমার স্বামী অদম্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাই।

আমি কোন দিন আমার সুখের জন্য সোনাদানা নতুন নতুন কাপড় অন্য কোন কিছু স্বামীর কাছে আবদার করিনি। আমি বুঝতে পারি একদিকে সংসারের খরচ অপরদিকে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে সে হিমসিম খাচ্ছে। ছেলে মেয়ে দু‘জনই ইন্টার মিডিয়েট পাশ করার পরে ছেলেকে ভারত থেকে নিয়ে আসি। বাংলাদেশ সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে মেডিক্যাল পরীক্ষায় ছেলে মেয়ে অংশগ্রহণ করে।

মেডিক্যাল সরকারিভাবে পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়। পরে ছেলে ময়মনসিংহ কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ বাংলাদেশ ও মেয়ে টাংগাইল মির্জাপুর কুমুদিনী মহিলা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পায়। ডোনেশানের টাকা যোগার করতে নিজের গয়না বিক্রি, ধারদেনা ও ঋণ নিয়ে ছেলে মেয়েদেরকে ভর্তি করায়। ছেলে মেয়েরা দীর্ঘদিন অভাব অনটনের মধ্যে লড়াই করে ডাক্তার হয়ে বের হয়ে আসে।

আমার শ^াশুড়ি মা  জীবিত  থাকা কালিন তার নাতি নাতনীদের ডাক্তারীতে অধ্যায়নর রত অবস্থায় দেখে যেতে পেরেছেন। সৃষ্টিকর্তার আর্শিবাদে আমরা তার আশা পূরণ করেছি। বর্তমানে আমাদের পুত্র ডাঃ অমিত কুমার আগরওয়ালা টি এম এস এস মেডিকেল কলেজ এন্ড রফাতুল্লাহ কমিউনিটি হসপিটাল বগুড়া আবাসিক সার্জন (নাক কান গলা) বিভাগে এবং মেয়ে ডাঃ সংগীতা আগরওয়ালা কোমবাইন্ড মিলিটারী হাসপাতাল (সিএমএইচ) এ (শিশু) বিভাগে রেজিস্ট্রার পদে কর্মরত রয়েছে।

 

 

 

 



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS