ভিডিও

সবজি বিক্রি করেই তিন মেয়ের  বিয়ে দিয়েছেন জোহরা বেগম

প্রকাশিত: মে ৩১, ২০২৪, ০৩:২৮ দুপুর
আপডেট: মে ৩১, ২০২৪, ০৬:৪৩ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

কুড়িগ্রাম জেলা ও রাজারহাট প্রতিনিধি : জোহরা বেগম। বয়স ৪৫বছর। শেষ ভরসা ছিল ৪০শতক জমি। ছিল সাতজনের টানাটানির সংসার। সেই জমিতে শুধু সবজি চাষ করেই একে একে তিন মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। এলাকায় প্রথমবার পরিবেশবান্ধব পলিথিন দিয়ে মালচিং পদ্ধতিতে করলা চাষ করে চমকে দিয়েছেন সবাইকে। পাশাপাশি সংসারের সকলের মুখের আহার জুটিয়েছেন জোহরা বেগম। তিনি কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের মীরেরবাড়ী এলাকার বাসিন্দা। একজন সফল চাষি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি। 

জোহরা বেগমের স্বামী মনসুর আলী কাঠ কিনে ছ’মিলে বিক্রি করেন। সংসারে ছিল তিন মেয়ে আর দুই ছেলে। নিজেদের দুই দাগে ৪০ শতক জমি আগেই বর্গা দেয়ো ছিল। অভাবের কারণে বিভিন্ন সমিতিতে যুক্ত হন জোহরা বেগম। সেখানে প্রশিক্ষণ ও সাহস পেয়ে নিজেই জমিতে চাষাবাদের কাজে লেগে পড়েন।

তার কাজে ছেলে-মেয়েরাও হাত লাগায়। জমিতে তিনি বিভিন্ন সিজনে আলু, মরিচ, পটল, লাউ, করলা, চিচিঙ্গাসহ নানাবিধ ফসল চাষ করেন। আগ্রহ বাড়ে নতুন চাষাবাদে। তাই এবার তিনি পরিবেশবান্ধব পলিথিন দিয়ে এই এলাকায় এই প্রথম মালচিং পদ্ধতিতে করলা চাষ করেছেন। এই পদ্ধতি সম্পর্কে এলাকার মানুষ কিছুই জানেন না। ফলে তারাও অপেক্ষা করছিল এভাবে চাষ করলে সুবিধা কী।

জোহরা বেগম জানান, খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছি। জীবনে অনেক কষ্ট করেছি। যখন চাষাবাদের কাজে যুক্ত হলাম, সংসারের অভাব কিছুটা দূর হওয়া শুরু হলো। অল্প অল্প করে টাকা জমিয়ে এই সবজি বিক্রি করেই এক এক করে তিন মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। এই জমিই আমাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেছে।

সম্মানের জায়গা করে দিয়েছে। এখন দুই ছেলেকে নিয়ে মোটামুটি ভালোভাবে দিন পার করছি। তবে জোহরা বেগমের সংসারে এবার নতুন সম্ভাবনা নিয়ে দেখা দিয়েছে মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষ। পরিবেশবান্ধব পলিথিন দিয়ে এবার প্রথম করলা চাষ করেছেন তিনি। প্রথমে আশঙ্কা ছিল ফলাফল কেমন হয়। কিন্তু দিন যতই যাচ্ছিল ততই আশার মুখ দেখছিলেন তিনি। অপরদিকে জোহরা বেগম একশ’ টাকা দরে ৪০টি বাঁশ কিনে স্বামী-ছেলেসহ মাচা তৈরি করেছেন। জমির চারপাশে দুই হাজার টাকা ব্যয় করে নেট দিয়ে ঘিরে ফেলেছেন। যাতে গবাদিপশু থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এছাড়া নিজেরাই নিড়ানিসহ জমির পরিচর্চা করেছেন। 

জোহরা বেগম আরও জানান, মাত্র ৭ হাজার টাকায় জমি তৈরি করেছি। নিজেরা শ্রমিকের কাজ করেছি। ফলে বেশি খরচ হয়নি। সবচেয়ে ভালো দিক হলো অন্যান্য করলার চেয়ে মালচিং পদ্ধতিতে করলা এক মাস আগেই উত্তোলন করা যায়। ফলে ওই একমাস বেশি দামে করলা বিক্রি করা যায়। শুরুতে তিনি দুই হাজার ৪শ’ টাকা মন দরে করলা বিক্রি করেছেন। মাঝারি আকারের এই করলা তেমন তেতো নয়। বাজারে চাহিদাও প্রচুর। ফলে প্রতি সপ্তাহে দুই থেকে তিন মণ করে করলা বিক্রি করতে পারছেন। গত ৭ জানুয়ারি করলা চাষ করেছেন তিনি।

এখন পর্যন্ত ৫০ হাজার টাকার করলা বিক্রি করতে পেরেছেন। আরডিআরএস রংপুর বিভাগের টিম লিডার বিদ্যুৎ কুমার সাহা জানান, সাধারণভাবে করলা চাষে খরচ বেশি হয়। ঝড়বৃষ্টি ও প্রচন্ড খড়া হলে করলার ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। কিন্তু মালচিং পদ্ধতিতে উঁচু পলিথিনের ভিতরে করলা গাছ থাকায় বেশি নিরাপদে থাকে। আমরা স্মার্ট কৃষিতে সাধারণ কৃষকদের সম্পৃক্ত করতে এই কার্যক্রমটি পরিচালনা করছি।
রাজারহাট উপজেলা কৃষি অফিসার মোছা. সাইফুন্নাহার সাথী জানান, করলা একটি অন্যতম ফসল। কৃষকদের মালচিং পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা প্রদান করা হলে ব্যাপকভাবে এর সম্প্রসারণ ঘটাতে পারি। আগামভাবে করলা চাষে কৃষকরা বেশ লাভবান হবেন।

 



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS